সরকার বিদ্যুতের দাম একবারেই না বাড়িয়ে ধাপে ধাপে বৃদ্ধির চিন্তা করছে। যদিও গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম একবারেই ১৫ ভাগ বাড়ানোর চিন্তা করছিল এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী আদেশে দাম বৃদ্ধির আগে মানুষের ওপর এর কতটা চাপ পড়বে সেই বিবেচনা করার কথা বলা হলে সে যায়গা থেকে সরে আসে কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যুতের দামের সাথে পণ্যবাজারের দামের সরাসরি প্রভাব রয়েছে। একবারে ১৫ থেকে ২০ ভাগ বাড়লে বাজারে পণ্যের দাম অনেকগুণ বেড়ে যায়। এজন্য সরকারের যদি কিছুটা লোকসানও হয় তাহলেও ধাপে ধাপে দাম বাড়ালে মানুষের ওপর পণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রভাব খুব একটা পড়ে না। এদিকে মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, সরকার সম্প্রতি বিদ্যুৎ, শিল্প ও বাণিজ্যে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে। এর ফলে গ্যাস বিক্রি থেকে অতিরিক্ত যে অর্থ পাওয়া যাবে তা দিয়ে বিশ্ববাজার থেকে এলএনজি কেনা হবে। এই এলএনজি দিয়ে যদি বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় তাহলে গড়ে এলএনজি চালিত বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ পড়বে সাড়ে আট টাকা। কিন্তু দেশের তেলচালিত (ফার্নেস) অয়েলে উৎপাদন খরচ ২৯ টাকার কাছাকাছি। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২০ টাকার মতো কম প্রয়োজন হবে। যাতে সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদনে ভর্তুকি কম প্রয়োজন হবে। যাতে বিদ্যুৎ জ্বালানিতে সামগ্রিক ভর্তুকির হার কমবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ পরিকল্পনা করছে যে, গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম আগামী দুই মাসে অন্তত পাঁচভাগ হারে বৃদ্ধি করবে। এ পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পরে বিষয়টি সমন্বয় করে দেখা হবে। যদি মনে করা হয় পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানো প্রয়োজন, তাহলেই তা বাড়ানো হবে। এদিকে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে সাড়ে সাত হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হবে উল্লেখ করেছে পিডিবি। এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এরমধ্যেই ইউনিটপ্রতি ৫০ পয়সা করে পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে তারা। তবে এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগ এখনই কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি। বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, পিডিবি হয়তো শুধু নিজেদের কথা চিন্তা করছে। কিন্তু সরকার সামগ্রিক ভর্তুকির কথা চিন্তা করছে।
পিডিবিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে সরকার গত বছর ২৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে। চলতি বছর এর পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি টাকা পিডিবির জন্য ভর্তুকি প্রয়োজন হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এত বেশি পরিমাণ ভর্তুকি দেওয়া সরকারের একার পক্ষে সম্ভব না হওয়ায় সরকার বিদ্যুৎ এবং জ্বালানির মূল্য সমন্বয় করছে।
“আমরা প্রতি মাসে অল্প অল্প করে বিদ্যুতের দাম বাড়াবো। এতে মানুষের ওপর চাপ কম পড়বে।” এমন কথাই জানান বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
প্রসঙ্গত, গত ১২ জানুয়ারি নির্বাহী আদেশে সরকার গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৫ ভাগ দাম বাড়ায়। এর আগে ১৯ ভাগ পাইকারি বিদ্যুতের দাম বৃ্দ্ধির ঘোষণা দেয় বিইআরসি।
আনন্দবাজার/কআ