- ফেব্রুয়ারির শুরুতেই ঋণের প্রথম কিস্তি স্টিকার: বাংলাদেশ ব্যাংক-আইএমএফ বৈঠক
- ৪৫০ কোটি ডলার ঋণচুক্তি সামনে রেখে আইএমএফের পরামর্শ বাস্তবায়নে দেশের মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে অস্থিরতা, ব্যাংক খাতে তারল্য সংকটসহ বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক
বাংলাদেশকে ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছে। চলতি মাসের শেষে আইএমএফ বোর্ড বাংলাদেশের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করবে। ফেব্রুয়ারির শুরুতেই ঋণের প্রথম কিস্তি পাওয়া যাবে। এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেসবাউল হক। বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে আইএমএফের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক অ্যান্তইনেত মনসিও সায়েহর বৈঠকের পর সাংবাদিকদের বিষয়টি জানান মেসবাউল। ঋণের ব্যাপারে চূড়ান্ত আলোচনার জন্য পাঁচ দিনের সফরে গত শনিবার ঢাকায় এসেছেন আইএমএফের প্রতিনিধি দল।
বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ও আইএমএফের বৈঠকে অর্থনীতিতে বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ যে সংকট চলছে, তা মোকাবিলায় বাংলাদেশের কৌশল কী, তা জানতে চেয়েছে আইএমএফ। এতে আইএমএফের পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল উপস্থিত ছিল। গর্ভনরের পাশাপাশি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা।
সূত্রমতে, ৪৫০ কোটি ডলার ঋণচুক্তি সামনে রেখে আইএমএফের পরামর্শ বাস্তবায়নে দেশের মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে অস্থিরতা, ব্যাংক খাতে তারল্য সংকটসহ বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলো আইএমএফ প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সোয়া এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মেসবাউল হক জানান, করোনাভাইরাস মহামারি পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশের নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের প্রশংসা করেছে প্রতিনিধি দল। বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আর্থিক খাতের সক্ষমতা বাড়াতে অর্থায়নের আশ্বাস দিয়েছে বৈশ্বিক সংস্থাটি।
মেজবাউল হক বলেন, বিভিন্ন সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার যেসব পরিকল্পনা নিয়েছিল, সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের উদ্যোগ তুলে ধরা হয়েছে। ঋণ ও আর্থিক খাতের সংস্কার নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়নি জানিয়ে মুখপাত্র বলেন, ‘আইএমএফের ঋণ পাওয়া নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না; নিয়ম অনুযায়ী ঋণ পাব।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্রের ভাষ্যমতে, ফেব্রুয়ারিতে প্রথম কিস্তিতে মিলতে পারে ৪৫০ কোটি ডলারের মধ্যে ৪৫ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। ২০২৬ সাল পর্যন্ত ৭ কিস্তিতে মিলবে পুরো ঝণের অর্থ। আইএমএফের কোনো কোয়ারি (প্রশ্ন) ছিল কি না জানতে চাইলে মেজবাউল হক বলেন, ‘তারা জানতে চেয়েছেন অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আমরা কী ধরনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছি। আমরা তাদের কাছে সেসব চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেছি। করোনাকালে কীভাবে আমরা পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বেতন দিয়েছি, কী কী পদক্ষেপ নিয়েছি, সেসব বিষয় তাদের বলেছি; তাদের সামনে তুলে ধরেছি।
বৈঠকে করোনাকালে কীভাবে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বেতন দেয়া হয়েছে, কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে, সেসব বিষয় আলোচনা হয়েছে। আইএমএফ প্রতিনিধি দলের কাছে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, আর্থসামাজিক খাত নিয়েও প্রতিনিধি দল কথা বলেছে। বৈশ্বিক অর্থনীতির যে চ্যালেঞ্জ সে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা যে উদ্যোগ নিয়েছি সেসব বিষয়ে তারা জেনেছেন। আমরা যে প্রো-অ্যাকটিভ ইকোনোমিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গিয়েছি সেটা নিয়ে কথা বলেছেন। সব বিষয় তারা শুনেছেন এবং প্রশংসা করেছেন। বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার এবং ডেপুটি গভর্নরসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
আনন্দবাজার/শহক