রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের রাজস্ব আয়েও। চট্টগ্রাম কাস্টমস চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা পিছিয়ে রয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ১৭ শতাংশ।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কাস্টমসের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। এর মধ্যে আদায় হয়েছে ৩০ হাজার ১৮০ কোটি ১৫ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কাস্টমস ৬ হাজার ৩৭৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা কম আয় করেছে। সবচেয়ে কম আয় হয়েছে ডিসেম্বর মাসে। ডিসেম্বর মাসে লক্ষ্যমাত্রার এক তৃতীয়াংশের বেশি রাজস্ব কম আহরিত হয়েছে।
শুধুমাত্র জুলাই মাসে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পেরেছিল কাস্টমস। ওই মাসে ৪ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৪ হাজার ৭৮১ কোটি ২১ লাখ টাকা। ওই মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৯৯ কোটি ২১ লাখ টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছিল। এরপর টানা পাঁচ মাস লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি দেশের প্রধানতম রাজস্ব আহরণকারী প্রতিষ্ঠানটি।
পরের মাস আগস্টে ৫ হাজার ৬৬১ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৫ হাজার ৪৯৮ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৬২ কোটি ৫২ লাখ টাকা পিছিয়ে। একইভাবে সেপ্টেম্বর মাসে ৬ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৫ হাজার ১০৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা। ওই মাসে ১ হাজার ৫৪৬ কোটি ৮২ লাখ টাকা কম আদায় হয়। অক্টোবর মাসেও ১ হাজার ৬৩৮ কোটি ৩৫ লাখ টাকা কম আদায় হয়েছে। ওই মাসে ৬ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকার বিপরীতে ৪ হাজার ৯১৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা আদায় হয়।
নভেম্বর মাসে ৬ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৫ হাজার ৪৯৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ১২৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা কম। অন্যদিকে ডিসেম্বর মাসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা। বিপরীতে ৪ হাজার ৩৯৭ কোটি ৭ লাখ টাকা আদায় হয়। শুধু ডিসেম্বর মাসেই ২ হাজার ২০৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমসের এক যুগ্ম কমিশনার বলেন, এখন সারাবিশ্বের অর্থনীতিতে মন্দা চলছে। দেশেও বিলাসী সামগ্রী আমদানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এতে আমদানি কমে গেছে। যেহেতু চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব আদায় বেশিরভাগই আমদানি পণ্যের ওপর, সেহেতু আমদানি কমে যাওয়ার কারণেই মূলত রাজস্ব কম আদায় হয়েছে। যে অবস্থা বিরাজ করছে তা থেকে আগামী দিনগুলোতে উত্তোরণ ঘটানো কষ্টসাধ্য বলে মনে করেন তিনি।
তবে চলতি অর্থবছর শেষে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ ৬৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন সংশ্লিষ্টরা। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের এডিশনাল কমিশনার জাকির হোসেন জানান, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের শুল্ক আদায় কার্যক্রম এখন অনেক বেশি গোছানো। সে কারণে রাজস্ব আয় বেড়েছে। অর্থবছর শেষে কী পরিমাণ রাজস্ব আদায় হবে, তা নির্ভর করছে আমদানি পরিস্থিতির ওপর। তবে অবশ্যই গত অর্থবছরের রাজস্ব আয়কে ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা যায়।
আনন্দবাজার/শহক