- সব ধরনের সূচকে পতন
- ৩৪ ভাগ শেয়ার ১০ কোম্পানির দখলে
- লেনদেন সেরা মুন্নু সিরামিক
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে (রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার) লেনদেনের পরিমাণ আগের সপ্তাহের তুলনায় কমেছে। ওই সময় লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৬৮১ কোটি ২০ লাখ টাকা। মোট লেনদেনের ৩৪ শতাংশ শেয়ার ১০ কোম্পানির দখলে। কোম্পানিগুলোতে লেনদেন হয়েছে ৫৬৭ কোটি টাকা। গেল সপ্তায় কমেছে মূলধন পরিমাণ। সব ধরনের সূচকে পতন। বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে। হাউজগুলোতে বিক্রেতার চাপ বেশি ছিল।
স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রমতে, গত ১০ অক্টোবর পুঁজিবাজারে সরকারি বন্ডের লেনদেন শুরু হয়। এরপরের ৪ কার্যদিবস ডিএসইতে ২৫০ বন্ডের লেনদেন হয়। এতে ডিএসইর বাজার মূলধন ২ লাখ ৫২ হাজার ২৬৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা বেড়ে ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯৩৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছিল। এরপর গত ২৭ অক্টোবর বাজার মূলধন কমে দাঁড়িয়েছিল ৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ৬১ হাজার ৬০ কোটি ৫৯ লাখ টাকায়। এর আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছিল ৭ লাখ ৬৩ হাজার ৭২৭ কোটি ৯২ লাখ টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ২ হাজার ৬৬৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ১০ অক্টোবর ২৫৩ বন্ডের লেনদেন হয়। এতে সিএসইতে বাজার মূলধন ৩ লাখ ১২ হাজার ৭৯০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৭ লাখ ৫৫ হাজার ৩১৫ কোটি ৯৪ টাকায়। গত ২৭ অক্টোবর বাজার মূলধন কমে দাঁড়িয়েছিল ৭ লাখ ৫০ হাজার ২০১ কোটি ৯ লাখ টাকা। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস গত বৃহস্পতিবার মূলধন দাঁড়ায় ৭ লাখ ৪৪ হাজার ৭৬১ কোটি ৯ লাখ টাকায়। এর আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছিল ৭ লাখ ৪৬ হাজার ৭১৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকায়। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ১ হাজার ৯৫২ কোটি ৮০ লাখ টাকা।
ডিএসইর সূত্রমতে, গেল সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৬৮১ কোটি ২০ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৪৫৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ৩১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। ডিএসইতে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৩৩৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৪৯১ কোটি ১২ লাখ টাকা। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৪০০টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১৯টির, দর কমেছে ১৪৭টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২১৫টি কোম্পানির। লেনদন হয়নি ১৯টি কোম্পানির শেয়ার।
সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স পতনে লেনদেন শেষ হয়। এক সপ্তাহে ব্যবধানে ডিএসইএক্স ৫৪ দশমিক ৬১ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৬ হাজার ২০২ দশমিক ২১ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই৩০ সূচক ১৩ দশমিক ৯৭ পয়েন্ট এবং শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ১৫ দশমিক ৩২ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় যথাক্রমে ২ হাজার ১৯৪ দশমিক ৫১ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৩৫৭ দশমিক ৬৪ পয়েন্টে। এদিকে গেল সপ্তাহের শেষে ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১৪ দশমিক ৩৪ পয়েন্টে। যা আগের সপ্তাহের শেষে ছিল ১৪ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পিই রেশিও কমেছে দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্ট বা দশমিক ৬২ শতাংশ।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ১৫ পয়েন্ট ছাড়ালেই তা বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। এ হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। সেই হিসেবে গত বৃহস্পতিবার ডিএসইর পিই দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৩৪ পয়েন্টে। পিই রেশিও হিসাবে বিনিয়োগ নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে।
গেল সপ্তাহে এ ক্যাটাগরির ৮০ ভাগ কোম্পানির শেয়ার টপটেন লেনদেনে অবস্থান করেছে। এছাড়া বি ক্যাটাগরির ২০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর টপটেন লেনদেনে রয়েছে। সপ্তাহটিতে মোট লেনদেনের ৩৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ শেয়ার ১০ কোম্পানির দখলে রয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে মুন্নু সিরামিক (এ ক্যাটাগরি) শেয়ারে। একাই মোট শেয়ারের ৮ দশমিক ২৬ ভাগ লেনদেন করেছে।
এছাড়া ইন্ট্রাকো (এ ক্যাটাগরি) ৫ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, বসুন্ধরা (এ ক্যাটাগরি) ৩ দশমিক ৪৮ শতাংশ, মুন্নু এগ্রো এন্ড জেনারেল মেশিনারিং (এ ক্যাটাগরি) ৩ দশমিক ১৬ শতাংশ, জেনেক্স ইনফোসিস (এ ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ৯৭ শতাংশ, ওরিয়ন ইনফিউশন (এ ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ৯৭ শতাংশ, ওরিয়ন ফার্মা (এ ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ৪২ শতাংশ, এডভেন্ট ফার্মা (বি ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ২৪ শতাংশ, এপেক্স ফুড (এ ক্যাটাগরি) ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ এবং জেমিনি সী ফুড (বি ক্যাটাগরি) ১ দশমিক ৮৬ শতাংশের শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারের এ ক্যাটাগরির শেয়ার বি ও জেড ক্যাটাগরির থেকে তুলনামূলক ভালো কোম্পানি। নিয়ম অনুসারে, যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে তার ঊর্ধ্বে লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই এ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নিচে থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারা বি-ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ নিচে থেকে শুরু জিরো লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই জেড ক্যাটাগরি কোম্পানির শেয়ার। এছাড়া এন ক্যাটাগরি নতুন কোম্পানির শেয়ার। যেগুলোর পুঁজিবাজারের লেনদেন শুরু হয়েছে কিন্তু বছর পার হয়নি, সেইগুলো এন ক্যাটাগরিতে রয়েছে।
আনন্দবাজার/শহক