মঙ্গলবার, ১০ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মোড়লে অতিষ্ঠ মধ্যপ্রাচ্য

মোড়লে অতিষ্ঠ মধ্যপ্রাচ্য
  • পাল্টে যাচ্ছে ভূ-রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ
  • যুক্তরাষ্ট্রের জায়গা দখলে মরিয়া রাশিয়া

কূটনীতিতে মধ্যপ্রাচ্য যেন সোনার ডিম দেয়া হাঁস। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় থেকে এ অঞ্চলের ক্ষমতা নিয়ে টানাপোড়েন চলছে। এখন যুক্তরাষ্ট এ অঞ্চলের মোড়ল হলেও কয়েক বছর ধরে কিছুটা ভিন্ন বাতাস লক্ষ্য করা গেছে। এরই মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মোড়লগিরিতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ইসরাইলের প্রতি তাদের একতরফার নীতির কারণে। আর এই ফাঁকে সেখানে ঢুকে গেছে রাশিয়া।

মধ্যপ্রাচ্যের কূটনৈতিক বিষয় নিয়ে নতুন একটি বিশ্লেষণধমী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দ্য ইকোনমিস্ট। তাতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সম্ভবত ইহুদিবাদী ইসরায়েলের সঙ্গে আরব বিশ্বের একটি অংশের সম্পর্কোন্নয়ন চুক্তি। ২০২০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন, এরপর মরক্কো ও সুদানের সঙ্গে ইসরায়েলের এ চুক্তি (আব্রাহাম অ্যাকর্ড) হয়। ২০২৩ সালের জন্য একটি বড় প্রশ্ন হলো, এই নবগঠিত অর্থনৈতিক জোট আরও সমৃদ্ধ ও প্রসারিত হবে কি না।

তার আগে জর্ডান ও মিসরের সঙ্গে ইসরায়েলের শান্তিচুক্তি আছে। ধারণা করা হচ্ছে, নতুন বছরে ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদি আরবের যোগাযোগ বাড়বে। কেননা সৌদি ক্রাউন প্রিন্স ও ডি ফ্যাক্টো শাসক মোহাম্মদ বিন সালমান ইসরায়েলি স্টার্টআপগুলোতে বিনিয়োগের জন্য ২০০ কোটি ডলার বরাদ্দ করেছেন বলে জানা গেছে। তবে সৌদি আরবকে ‘আব্রাহামিক ক্লাবে’ যোগদানের ক্ষেত্রে পরবর্তী সারিতে বিবেচনা করা হলেও যতদিন বাদশাহ সালমান সিংহাসনে থাকবেন এবং ফিলিস্তিনের সঙ্গে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের অগ্রগতি না হচ্ছে, ততদিন আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই ইসরায়েলের।

আরও পড়ুনঃ  খালে বাঁধ-দুষণ-ভরাট, কৃষিতে হুমকি

২০২৩ সালেও মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী দেশ থাকতে পারে ইয়েমেন। এ অঞ্চলের সবচেয়ে বিপজ্জনক বিভেদ শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব। আরব বিশ্বে সুন্নি মুসলিমরা বেশি প্রভাবশালী। তবে ইরানে পুরোপুরি এবং সিরিয়া ও ইয়েমেনে শিয়াদের শক্তিশালী অবস্থান। উপসাগরীয় কিছু দেশ ইরানের সঙ্গে মিলেমিশে থাকার ব্যবস্থা করতে পারে; যেমন- আমিরাত ও কাতার। বিপরীতে, সৌদি আরব সম্ভবত বন্ধুত্বের হাত বাড়ানো থেকে বিরতই থাকবে।
পরমাণু পরিকল্পনা নিয়ে পশ্চিমা শক্তি এবং ইরানের মধ্যে চুক্তি পুনরুজ্জীবিত হওয়ার সম্ভাবনা কম; বিশেষ করে, তেহরানে যদি আয়াতুল্লাহরা ক্ষমতায় থাকেন। কিন্তু ক্রমাগত গণ-বিক্ষোভের মুখে ইরানের শাসকদের পতন হলে উপসাগরীয় অঞ্চলে উত্তেজনা কমবে। হয়তো ইসরায়েলও ইরানের সঙ্গে ফের কথা বলতে পারে।

অঞ্চলটি ইরানের প্রধান সমর্থক সিরিয়ার বাশার আল-আসাদের জন্য ভালো দিক হচ্ছে পশ্চিমারা ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যতদিন ব্যস্ত থাকবে, ততদিন তার ক্ষমতায় টিকে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আসাদের চিন্তা থাকবেপুরো সিরিয়া। তবে তুরস্ক ও ইরাকের সীমান্তবর্তী সিরীয় অঞ্চলগুলো নিয়ে আশঙ্কা আছে। আমিরাত-কাতার ও আরব দেশের শাসকরা আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চেয়েছিলেন, তারা আবার নাড়া দিয়ে উঠবে। বাদ যাবে না তুরস্কও। ২০২৩ সালেও মধ্যপ্রাচ্যের রক্তক্ষয়ী দেশ থাকতে পারে ইয়েমেন। রয়েছে লিবিয়াতেও দ্বন্দ্ব-সংঘাত চলমান থাকার আশঙ্কা। আলজেরিয়া ও মরক্কোর মধ্যে পশ্চিম সাহারা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলবে। ফসফেট-সমৃদ্ধ এলাকাটি নিয়ে দ্বন্দ্ব। মরক্কো বিশ্বব্যাপী কূটনৈতিক সমর্থন আদায় করতে চাইলে আলজেরিয়া পথ ছাড়বে না।

বছরখানেক আগেও মধ্যপ্রাচ্যে একটি উদীয়মান শক্তি বলে মনে করা হচ্ছিল ভ্লাদিমির পুতিনকে। রাশিয়া ও মিসর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ভূমধ্যসাগরে যৌথ নৌমহড়া করে এবং আরও সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেয়। আবুধাবির প্রধান সার্বভৌম-সম্পদ তহবিল মুবাদালা রাশিয়ায় নিজেদের বৃহত্তম বিনিয়োগ হিসেবে পেট্রোকেমিক্যাল জায়ান্ট সিবুরের ১ দশমিক ৯ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয়। রুশ ভাড়াটে যোদ্ধা গোষ্ঠী ওয়াগনারের প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিন প্রকাশ্যেই লিবিয়ায় আসন্ন নির্বাচনের ফলাফল সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেন।
গত ১২ মাস যেতে না যেতেই রুশ বাহিনী অন্যত্র আটকে গেছে। মুবাদালা বিনিয়োগ স্থগিত করেছে। প্রিগোজিন লিবিয়ার রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামানোর বদলে ইউক্রেন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কার্যত, মধ্যপ্রাচ্যে রাশিয়ার প্রভাব খর্ব করেছে ইউক্রেন যুদ্ধ। এই ধারা ২০২৩ সালেও চলতে থাকবে। রাশিয়া যেসব অস্ত্র তৈরি করতে পারবে, সেগুলো ইউক্রেনে প্রয়োজন হবে। ফলে আরবের বাহিনীগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র, চীন নাহয় তুরস্কের মতো বিকল্পের দিকে তাকাতে হবে।

আরও পড়ুনঃ  ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল দাবি বিএমবিএ’র

যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার হাতে বিক্রি করার জন্য কম অস্ত্র থাকবে। পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো রুশ অস্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশগুলো আটকে দেবে। এরপরও রাশিয়া যেসব অস্ত্র তৈরি করতে পারবে, সেগুলো ইউক্রেনে প্রয়োজন হবে। ফলে আরবের বাহিনীগুলোকে যুক্তরাষ্ট্র, চীন নাহয় তুরস্কের মতো বিকল্পের দিকে তাকাতে হবে।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন