ঢাকা | সোমবার
২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফের কমলো রিজার্ভ

ফের কমলো রিজার্ভ
  • নামলো ৩৪ বিলিয়নের নিচে
  • যে করেই হোক রপ্তানি- রেমিট্যান্স বাড়াতে হবে

আমদানি কমিয়ে দেয়ার পর বাজার স্বাভাবিক রাখতে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করা হচ্ছে। গত তিন দিনে প্রায় ৩৩ কোটি ডলার বিক্রি করা হয়েছে। আর তাতেই রিজার্ভের পরিমাণ ৩৩ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা ও অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাজার ঠিক রাখতেই রিজার্ভ থেকে অব্যাহতভাবে ডলার বিক্রির কারণেই এমনটা ঘটছে। তাই আমদানি কমার পরও সর্বশেষ হিসাবে বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ নেমে এসেছে ৩৪ বিলিয়ন (৩ হাজার ৪০০ কোটি) ডলারের নিচে।

তথ্যমতে, রিজার্ভ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকের কাছে গত সোমবার বিক্রি করা হয় ১৫ কোটি ২০ লাখ ডলার। পরদিন মঙ্গলবার বিক্রি হয়েছিল ১০ কোটি ৯০ লাখ ডলার। সেদিন অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর এই সূচকের পরিমাণ ছিল ৩৪ দশমিক শূন্য ৫ বিলিয়ন ডলার। এর পরের দিন বুধবার আবার রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ৭ কোটি ১০ লাখ ডলার বিক্রির ফলে দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৩ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন (৩ হাজার ৩৮৬ কোটি) ডলারে। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছরে পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রিজার্ভ থেকে ৬০৫ কোটি (৬.০৫ বিলিয়ন) ডলার বিক্রি করা হয়েছে।

এক মাস আগে ১ নভেম্বর রিজার্ভ ছিল ৩৫ দশমিক ৭২ বিলিয়ন ডলার; এক বছর আগে গত বছরের ২৩ নভেম্বর এই সূচকের পরিমাণ ছিল ৪৪ দশমিক ৯৫ বিলিয়ন ডলার। আর গত বছরের আগস্টেই এই রিজার্ভ অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৭ নভেম্বর রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৫ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার। ৮ নভেম্বর এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মেয়াদের ১৩৫ কোটি (১.৩৫ বিলিয়ন) ডলার আমদানি বিল পরিশোধ করার পর রিজার্ভ নেমে আসে ৩৪ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলারে।

অর্থনীতির গবেষকরা বলছেন, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় কমায় রিজার্ভ কমেছে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নানা পদক্ষেপের ফলে আমদানি ব্যয় বেশ কমেছে। তবে রিজার্ভের প্রধান দুই উৎস রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সও কমছে। যে কারণে আমদানি ব্যয়ের লাগাম টানার পরও রিজার্ভ কমছেই। এক বছরের ব্যবধানে ১২ বিলিয়ন ডলার কমেছে।

তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচককে আর কমাতে দেওয়া যাবে না। যেভাবেই হোক না কেন রপ্তানি আয় আর রেমিট্যান্স বাড়াতেই হবে। আইএমএফের ঋণের প্রথম কিস্তির দিকে তাকিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভুগলে ক্ষতি হবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেও রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়াতে নানামুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি সর্বনাশা হুন্ডি বন্ধ করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম ২৫ দিনে ১৩৪ কোটি ৭১ লাখ ৫০ হাজার (১.৩৫ বিলিয়ন) ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই হিসাবে প্রতিদিন গড়ে ৫ কোটি ৩৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। অথচ চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাস জুলাই ও আগস্টে প্রতিদিন গড়ে ৭ কোটি ডলার করে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

এদিকে, গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসেও (জুলাই-আগস্ট) রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২৫ দশমিক ৩১ শতাংশ। তবে সেপ্টেম্বরে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। অক্টোবর মাসে রপ্তানি আয় কমেছে প্রায় ৮ শতাংশ। গত অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে আমদানি খাতে প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি ডলার খরচ হয়েছিল। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সেই প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে ১১ দশমিক ৭ শতাংশে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এত ডলার বাজারে ছাড়া হয়নি। এরপরও বাজারের অস্থিরতা কাটছে না। বেড়েই চলেছে যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রাটির দর। দুর্বল হচ্ছে টাকা। অথচ তার আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে বাজার থেকে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলার কিনেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেই অঙ্কও ছিল অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন