ডানা মেলেনি স্বপ্ন, অপ্রাপ্তিতেই শেষ জলবায়ু সম্মেলন
- পৃথিবীর ভয়াবহতায় একাই চিৎকার জাতিসংঘের
পর্দা নেমেছে মিশরের শার্ম-আল-শেখ শহরে শুরু হয় জলবায়ু সম্মেলন কপ-টোয়েন্টি সেভেনের। বিশ্বের ১৯৬টি দেশের অন্তত ৪৫ হাজার প্রতিনিধি সেখানে জড়ো হয়েছিলেন ধীরে ধীরে বিপজ্জনক হয়ে ওঠা পৃথিবীর আগামী রূপরেখা প্রণয়নের জন্য। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল চলতি শতাব্দীর মধ্যে বিশ্বের তাপমাত্রা যেন আরও দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস না বাড়ে। ছিল জয়বায়ুতে অর্থায়ন, অভিযোজন তহবিল, অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতি তহবিল, বিশ্বব্যাংক সংস্কার ও আফ্রিকার গ্যাস উত্তোলন নিয়ে আলোচনা। তবে যে প্রত্যাশা নিয়ে সম্মেলন শুরু হয়েছিল, শেষ পর্যন্ত তার সবকিছু পূরণ হচ্ছে না।
শুধু একটি প্রাথমিক খসড়া চুক্তি প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের জলবায়ু সংস্থা। সম্মেলনের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে তৈরি প্রাথমিক সেই খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় কয়লাসহ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতিতে সম্মত হয়েছে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো। সেই সঙ্গে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেয়ার কথাও জানিয়েছে ধনী দেশগুলো।
সম্মেলনে ২০১৫ সালে ঐতিহাসিক প্যারিস চুক্তিতে দেশগুলো তাপমাত্রা কমানোর যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেই চুক্তির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ওপর শুধু গুরুত্বারোপ করা হয়। অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার তহবিল গঠনের বিষয়টি অমীমাংসিতই থেকে গেছে। বলা বাহুল্য, যেটা ছিল দ্বীপরাষ্ট্রগুলোসহ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে হুমকির মুখে থাকা বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর প্রধান দাবি।
আবার চূড়ান্ত চুক্তিতে অন্তর্ভুক্তির জন্য সম্মেলনে অংশ নেয়া প্রায় ২০০ দেশের প্রতিনিধিদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে করা প্রাথমিক খসড়া চুক্তিটির চূড়ান্ত সংস্করণ কবে হবে তাও অনির্ধারিত থেকে গেছে। এ অবস্থায় এবারও গতবারের কপ-টোয়েন্টি সিক্স জলবায়ু সম্মেলনের লক্ষ্যের পুনরাবৃত্তি হতে যাচ্ছে বলে মত পরিবেশবিদদের। এতে প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রাপ্তি আসেনি বলেও মনে করছেন তারা।
তবে অনেকেই বলছেন, সম্মেলনে অংশ নেয়া প্রায় ২০০ দেশের প্রতিনিধিদের চূড়ান্ত চুক্তিতে অন্তর্ভুক্তির জন্য জানানো অনুরোধের ভিত্তিতে করা নথিটি আসছে দিনগুলোতে জলবায়ু নিয়ে আলোচনার জন্য ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।
তথ্যমতে, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ও কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র। তবে চীনের জলবায়ুবিষয়ক দূত শিয়ে ঝেনহুয়ার সঙ্গে বিশেষ রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরি। তাদের বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে জানা যায়নি। তবে জন কেরি বলেছেন, বৈশ্বিক তাপমাত্রা হ্রাসে জাতিসংঘের লক্ষ্যের সঙ্গে চীনের কোনো দ্বিমত নেই।
কপ২৭ সম্মেলনে ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠনের ব্যাপারটিতে গুরুত্ব কম দেয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন পরিবেশবিষয়ক আন্তর্জাতিক অলাভজনক থিংক ট্যাংক সংস্থা ইথ্রিজির গবেষক ক্যাথেরিন অ্যাবরিউও। পরিবেশবাদীরা বলছেন, ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি ইউরোপে শিল্প বিপ্লব ঘটার পর থেকে এখন পর্যন্ত শিল্পোৎপাদন ও উন্নত জীবনযাত্রার স্বার্থে বিপুল পরিমাণ জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে চলছে বিশ্বের উন্নত বিভিন্ন দেশ। তাদের অতিমাত্রায় জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বাতাসে ছড়িয়ে পড়া কার্বন ও গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাবে ঝড়, অতিবর্ষণ, খরা, বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হচ্ছে মূলত স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল বিভিন্ন দেশ।
এমনকি, বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় মালদ্বীপসহ অনেক দ্বীপরাষ্ট্র সমুদ্রগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতেও রয়েছে। অথচ স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল বিশ্বভুক্ত দেশগুলোয় জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর হার উন্নত বিশ্বের তুলনায় এখনো অনেক কম। এই পরিস্থিতিতে গত কয়েক বছর ধরেই উন্নত বিভিন্ন দেশের কাছে আর্থিক ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে আসছে। তবে সেসব দাবি শুধু প্রতিশ্রুতির মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। পূরণ হচ্ছে না।