ঢাকা | রবিবার
১০ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২৫শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উখিয়া-টেকনাফে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি

উখিয়া-টেকনাফে ভয়াবহ aস্বাস্থ্যঝুঁক

উখিয়া-টেকনাফে ১৩ লাখ রোহিঙ্গা ও লক্ষাধিক এনজিও কর্মীর ব্যবহৃত বর্জ্যে হাট বাজার, রাস্তাঘাট নালা নর্দমা ও জলাশয় ভরাট হয়ে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। রোহিঙ্গাদের পরিত্যক্ত বর্জ্যে বাতাসে দুর্গন্ধ, অপরিচ্ছন্ন উখিয়া টেকনাফের মানুষ রয়েছেন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। রোহিঙ্গাদের পেছনে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করা হলেও স্থানীয়দের জন্যে উখিয়াতে নেই স্কিট ষ্টেয়ার লোডার বা আবর্জনা বহনকারি আধুনিক ট্রাক।

এতে ময়লা আবর্জনার স্তুপ যত্রতত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। নেই বর্জ্য শোধনাগারও। দুর্গন্ধে পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে উঠছে। পরিবেশবাদী সংগঠনের দাবি উখিয়া টেকনাফ রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশেষ প্রকল্প গ্রহন করা প্রয়োজন। নির্ধারিত ডাম্পিং ব্যবস্থা সু-রক্ষিত করা না গেলে বিষাক্তদূষণে স্থানীয়দের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত হবে।

ময়লা ফেলার নির্ধারিত স্থান না থাকায় এবং সচেতনতার অভাবে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের পাশে যত্রতত্র ময়লা ফেলা হচ্ছে। উখিয়ার হোটেল রেস্তোরা ও বয়লার মুরগির আবর্জনা বাজার সংলগ্ন খালি জমিতে ফেলা হচ্ছে। উখিয়ার প্রবেশ মুখের এ সড়কটিতে দুর্গন্ধের জন্য হাটাচলা মুশকিল হয়ে পড়ে। উখিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকদের লেখনি ও দাবির প্রেক্ষিতে অবশেষে উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় রাজাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গির কবির চৌধুরীর প্রচেষ্টায় ময়লা-আবর্জনা অপসারণ করা হলে ও তাতে স্থায়ী সমাধান মেলেনি। সচেতন মহলের দাবি এ ব্যাপারে টেকসই সমাধান দরকার। তবে উখিয়া থেকে কোটবাজার যাওয়ার প্রবেশ মুখে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের পাশে ময়লা ফেলা কিছুতেই বন্ধ করা যাচ্ছে না।

স্থানীয়দের অভিযোগ ময়লা-আবর্জনা অপসারণ কার্যক্রম চলমান না থাকায় বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দিকে নজর না দেয়ায় কিছুতেই উন্নতি হচ্ছে না। গড়ে ওঠছে না সুষ্ঠু বর্জ ব্যবস্থাপনা। পরিবেশসম্মত উপায়ে আধুনিক পদ্ধতিতে বর্জ্য অপসারণ করা এখন উখিয়া টেকনাফ ও কোটবাজারবাসীর সময়ের দাবি। উখিয়াতে রোহিঙ্গা আসায় দ্রুত অট্টালিকা বাড়ি-ঘর নির্মাণের ফলে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার নির্দিষ্ট স্থানে জমাকৃত আবর্জনা, বাজার ও স্টেশনগুলোর হোটেলের ময়লার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এ অসহনীয় অবস্থার তৈরি হয়েছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরান হোছাইন সজীব। ময়লা আবর্জনা ডাম্পিং এর নির্ধারিত স্থান ঠিক করে দিয়ে তা অপসারণের দায়িত্ব নিতে হবে প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের। এমনটিই মনে করছেন সুশীল সমাজ। তারা মনে করেন, সে ক্ষেত্রে দোকান মালিক সমিতিকেও অন্তর্ভুক্ত করা যায়।

উখিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ শামসুল আলম  বলেন, আমরা নির্মল বাতাস ও পরিচ্ছন্ন উখিয়া দেখতে চাই। রোহিঙ্গাদের কারণে আমরা হারিয়েছি বনভূমি, পাহাড় ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। সেই সঙ্গে পরিবেশের ওপর মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। বিদেশ থেকে আসা রাজাপালং এলাকার মোহাম্মদ ইসলাম বলেন, বিদেশের রাস্তা পরিস্কার কোনো প্রকার ময়লা নেই। আর আমাদের উখিয়া কোটবাজারে মানুষ চলাচলে ফুটপাত পর্যন্ত নেই। সব দখল করে অপরিকল্পিতভাবে দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। উখিয়া টেকনাফের চেয়ে কোটবাজারের অবস্থা খুবই খারাপ। রাস্তার ধারে ময়লা দেখতে খারাপ দেখায়। জনপ্রতিধিরা এগুলো দেখে না। আমরা সাধারণ জনগণ ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে তাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করি। মানুষের প্রতি তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যে কি এগুলো পড়ে না। আসলে জবাবদিহিতা নেই এখানে। মানুষকেও সচেতন হতে হবে। তিনি আরও বলেন, অপসারিত বর্জ্য দিয়ে কম্পোষ্ট প্লান্ট তৈরির পরিকল্পনা করা যেতে পারে। প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি এবং এনজিওর সমন্বয়ে ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার করতে ঠিকাদারদের দিয়ে তা করা যেতে পারে। সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার বিকল্প নেই। কম্পোষ্ট প্লান্ট স্থাপনে বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি ও করা যেতে পারে। তবে, আমরা তার কিছুই করছি না। ফলে জনদুর্ভোগ দিন দিন বাড়ছে।

অপরদিকে রোহিঙ্গারা পরিবেশ কি তা তারা বুঝে না। তাদের বর্জ্য ময়লা আবর্জনা খাল, বিল, নদী নালা, হাটবাজার, জলাশয়, রাস্তাঘাট ও চাষাবাদের জমি কিছুই বাদ যাচ্ছে না।

স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহিনা আক্তার জানিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের কারণে উখিয়া টেকনাফের সাড়ে ৬ লাখ মানুষ বহুমাত্রিক সমস্যায় জর্জরিত। রোহিঙ্গাদের দখল, দূষণ ও পরিত্যক্ত বর্জ্যে সীমাহীন সমস্যায় পড়েছেন স্থানীয় লোকজন। সুতরাং এ অবস্থা থেকে একমাত্র পথ হচ্ছে যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন।

সংবাদটি শেয়ার করুন