- নামবে ৩৪.৩০ বিলিয়ন ডলারে
- রেমিট্যান্স-রপ্তানিতে ভাটা
- ৮ মাসে সবচেয়ে কম রেমিট্যান্স
- রপ্তানি আয় কমেছে ৭.৮৫ শতাংশ
অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক রেমিট্যান্স প্রবাহে ভাটা দেখা দিয়েছে। গত আট মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম রেমিট্যান্সে এসেছে দেশে। একই সঙ্গে সদ্য বিদায়ী মাস অক্টোবরে দেশে রপ্তানি আয়ও কমে গেছে। গেল এক বছরে কমেছে প্রায় ৪০ কোটি ডলার। শতাংশের হিসেবে যা ৭ দশমিক ৮৫। রেমিট্যান্স আর রপ্তানি কমে যাওয়ায় সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা লেগেছে রিজার্ভে।
অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেল বছরের আগস্টে রিজার্ভ অতিক্রম করেছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার। দুমাস পর গত বছরের ২৭ অক্টোবর রিজার্ভ নেমে এসে দাঁড়ায় ৪৬ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারে। তবে গত এক বছরে সেই রিজার্ভ নামতে নামতে এসে দাঁড়ায় ৩৬ বিলিয়ন ডলারের নিচে। গত ২৫ অক্টোবর দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৫ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার।
তবে আগামী সপ্তায় ডলার আরও কমতে পারে বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, আসছে সপ্তায় এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের মতো আমদানি বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ নেমে আসবে ৩৪ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলারে।
অবশ্য রির্জাভ কমে আসায় সম্ভাব্য সংকট মোকবিলায় সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ চেয়েছে। যা নিয়ে চূড়ান্ত আলোচনার জন্য ইতোমধ্যে আইএমএফের প্রতিনিধি দল ঢাকায় অবস্থান করছে। গভর্নরসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করছেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
তবে এসব বৈঠকে রিজার্ভের হিসাবায়নে মোট রিজার্ভ ও প্রকৃত রিজার্ভকে নির্দিষ্ট করে উল্লেখ করার কথা বলা হয়। রিজার্ভ থেকে কোন কোন বিনিয়োগকে বাদ দিয়ে প্রকৃত রিজার্ভ হিসাব করতে হবে, তা-ও আবার স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে। এতে সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
তবে অনেকেই বলছে দেশে প্রকৃত রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি হতে পারে। কারণ রিজার্ভের প্রচলিত হিসাব বদলাতে বলেছে আন্তর্জাতিক সেই ঋণদান সংস্থাটি। তাদের দাবি অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভের যে তথ্য প্রকাশ করছে, তা থেকে প্রকৃত রিজার্ভ ৮ বিলিয়ন ডলার কম হবে। কারণ তাদের মতে, বিনিয়োগকে বাদ দিয়ে রিজার্ভের প্রকৃত হিসাব করতে হবে। কারণ রিজার্ভের এসব অর্থ চাইলেই ফেরত পাওয়া যাবে না। জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহার করা যাবে না।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আইএমএফের শর্ত মানলে বর্তমানে রিজার্ভ কমে হয় ২৭ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। এর মধ্যে আবার আগামী সপ্তায় আকুর ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার আমদানি বিল পরিশোধের পর তা নেমে আসবে ২৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে। তাছাড়া গেল সেপ্টেম্বরে প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে। সেই হিসাবে এই রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের কিছু বেশি সময়ের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।
ডলারের এমন এক সংকটের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আশার আলো দেখাতে পারে রেমিট্যান্স আর রপ্তানি আয়। তবে দুই ক্ষেত্রেই দুঃসংবাদ দেখা গেছে। গত বছরের অক্টোবরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৬৪ কোটি ৬৯ লাখ (১.৬৪ বিলিয়ন) ডলার। আগের মাসে এসেছিল ১৫৪ কোটি ডলার। এ হিসাবে গত বছরের অক্টোবরের চেয়ে এই অক্টোবরে রেমিট্যান্স কম এসেছে। গেল সেপ্টেম্বরের মতো অক্টোবরেও রিজার্ভের অন্যতম প্রধান উৎস রেমিট্যান্স কমেছে। গেল মাসে ১৫২ কোটি ৫৪ লাখ (১.৫২ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা, যা গত আট মাসের মধ্যে সবচেয়ে কম।
সূত্রমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি করে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। জুলাইয়ে এসেছিল ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার; যা ছিল আগের ১৪ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর গত বছরের জুলাইয়ের চেয়ে বেশি ছিল ১২ শতাংশ। আগস্টে আসে ২ দশমিক শূন্য চার বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ। ওই দুই মাসে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ৪ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে যা ছিল ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি।
তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসের হিসাবে রেমিট্যান্স প্রবাহে এখনও প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। এই চার মাসে ৭২০ কোটি ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক শূন্য দুই শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে ৭০৫ কোটি ৫২ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
গেল অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে মন্দা দেখা দেয়। পুরো অর্থবছরে ২ হাজার ১০৩ কোটি (২১.০৩ বিলিয়ন) ডলার এসেছিল। আগের অর্থবছরের চেয়ে কমেছিল ১৫ দশমিক ১২ শতাংশ। তবে চলতি অর্থবছরে ঘুরে দাঁড়ায় অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই সূচক। শুরু থেকেই ঊর্ধ্বগতি লক্ষ করা যাচ্ছিল। তবে সেপ্টেম্বর থেকে ফের হোঁচট খেয়েছে।
আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী একটি দেশের কমপক্ষে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর সমপরিমাণ রিজার্ভ থাকতে হয়। সে বিবেচনায় অস্বস্তিতে আছে বাংলাদেশ। তবে আশার কথা, ডিসেম্বরের মধ্যে আইএমএফের ঋণের সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রথম কিস্তির দেড় বিলিয়ন ডলার পাওয়া গেলে সংকট কিছুটা হলেও কেটে যাবে।
আনন্দবাজার/শহক