দশ কোম্পানির দখলে ৪৩ ভাগ শেয়ার
পুঁজিবাজার
- কমেছে লেনদেন ও সূচক
- লেনদেন সেরা বেক্সিমকো
- পিই রেশিও ১৪.৭৩ পয়েন্ট
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে (রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার) লেনদেনের পরিমাণ আগের সপ্তাহ তুলনায় কমেছে। পতন হয়েছে সব ধরণের সূচকের। কমেছে মূলধন পরিমাণও। বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত হয়েছে। হাউজগুলোতে ক্রয়ের চেয়ে বিক্রয়ের চাপ বেশি। মোট লেনদেনের ৪৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ শেয়ার ১০ কোম্পানির দখলে। কোম্পানিগুলো লেনদেন করে ১ হাজার ৫৫ কোটি ৪২ লাখ ৩০ হাজার টাকা।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকটসহ এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং ঘোষণার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল পুঁজিবাজারে। এর কারণে বড় ধরনের দরপতন হয়েছিল পুঁজিবাজারে। আরও বলেন, লোডশেডিং ঘোষণার দিন গত ১৮ জুলাই ডিএসইতে বড় পতন শুরু হয়। সেই পতন আরো বড় আকারে দেখা দেয় পরের দিন ১৯ জুলাই। ওই দুইদিনের তুলনায় পরের দুইদিনের (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) পতন আকার ছোট হয়ে আসে। অবশ্য পরের সপ্তাহে পুঁজিবাজার উত্থানে ফিরে এসেছিল। এরপর উত্থান-পতনের মধ্যে কাঁটে পুঁজিবাজার। গেল সপ্তাহে লেনদেন পতনে কেটেছে।
স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, ১০ অক্টোবর পুঁজিবাজারে সরকারি বন্ডের লেনদেন শুরু হয়। এরপরের ৪ কার্যদিবস ডিএসইতে ২৫০ বন্ডের লেনদেন হয়। এতে ডিএসইর বাজার মূলধন ২ লাখ ৫২ হাজার ২৬৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা বেড়ে ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৯৩৯ কোটি ৫৮ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছিল। তবে গেল দুই সপ্তাহে বাজার মূলধন কমে দাঁড়ায় ৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬৫ কোটি ৭২ লাখ টাকায়। অপরদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ১০ অক্টোবর ২৫৩ বন্ডের লেনদেন হয়। এতে সিএসইতে বাজার মূলধন ৩ লাখ ১২ হাজার ৭৯০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৭ লাখ ৫৫ হাজার ৩১৫ কোটি ৯৪ টাকা। গেল দুই সপ্তাহে বাজার মূলধন কমে দাঁড়ায় ৭ লাখ ৫০ হাজার ২০১ কোটি ৯ লাখ টাকায়।
ডিএসইর সূত্র মতে, গেল সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ৫৮৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৫ হাজার ৮০১ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ৩৮ দশমিক ২৩ শতাংশ। ডিএসইতে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৭১৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে গড়ে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ১৬০ কোটি ২৪ লাখ টাকা। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৩৯৭টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৭১টির, দর কমেছে ৮৪টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ২২৯টি কোম্পানির। লেনদন হয়নি ১৩টি কোম্পানির শেয়ার।
সপ্তাহে ডিএসইর পুঁজিবাজারে সব ধরনের সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়। এক সপ্তাহে ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৪ দশমিক ৩০ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৩৭৮ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই৩০ সূচক ১১ দশমিক ৮৪ পয়েন্ট এবং শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ৪ দশমিক ৫৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়ায় যথাক্রমে ২ হাজার ২৬৫ দশমিক ৮১ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৪০২ দশমিক ৪৯ পয়েন্টে।
এদিকে গেল সপ্তাহের শেষে ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১৪ দশমিক ৭২ পয়েন্টে। যা আগের সপ্তাহের শেষে ছিল ১৪ দশমিক ৭৩ পয়েন্ট। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পিই রেশিও কমেছে দশমিক শূন্য ১ পয়েন্ট বা দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ১৫ পয়েন্ট ছাড়ালেই তা বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
অন্যদিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। এ হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। সেই হিসেবে গত বৃহস্পতিবার ডিএসইর পিই দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৭২ পয়েন্টে। পিই রেশিও হিসাবে বিনিয়োগ নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে।
গেল সপ্তাহে এ ক্যাটাগরির ৮০ ভাগ কোম্পানির শেয়ার টপটেন লেনদেনে অবস্থান করেছে। এছাড়া বি ক্যাটাগরির ১০ শতাংশ এবং এন ক্যাটাগরির ১০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর টপটেন লেনদেনে রয়েছে। সপ্তাহটিতে মোট লেনদেনের ৪৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ শেয়ার ১০ কোম্পানির দখলে রয়েছে। ওইসব কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর (এ ক্যাটাগরি) শেয়ারে। কোম্পানিটি একাই মোট শেয়ারের ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ লেনদেন করেছে।
এছাড়া ওরিয়ন ফার্মা (এ ক্যাটাগরি) ৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ, সোনালী পেপার (এ ক্যাটাগরি) ৪ দশমিক ৮০ শতাংশ, সী পার্ল বিচ (বি ক্যাটাগরি) ৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ, ইন্ট্রাকো (এ ক্যাটাগরি) ৩ দশমিক ৯০ শতাংশ, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং (এ ক্যাটাগরি) ৩ দশমিক ৮৯ শতাংশ, ইস্টার্ন হাউজিং (এ ক্যাটাগরি) ৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ, এডিএন টেলিকম (এ ক্যাটাগরি) ৩ দশমিক ২৯ শতাংশ, ওরিয়ন ইনফিউশন (এ ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং জেএমআই হসপিটাল (এন ক্যাটাগরি) ২ দশমিক ৩৮ শতাংশের শেয়ার লেনদেন হয়েছে।
উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারের এ ক্যাটাগরির শেয়ার বি ও জেড ক্যাটাগরির থেকে তুলনামূলক ভালো কোম্পানি। নিয়ম অনুসারে, যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে তার ঊর্ধ্বে লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই এ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নিচে থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারা বি ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার।
যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ নিচে থেকে শুরু জিরো লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই জেড ক্যাটাগরি কোম্পানির শেয়ার। এছাড়া এন ক্যাটাগরি নতুন কোম্পানির শেয়ার। যেগুলোর পুঁজিবাজারের লেনদেন শুরু হয়েছে কিন্তু বছর পার হয়নি, সেইগুলো এন ক্যাটাগরিতে রয়েছে।