- আমূল সংস্কার, নীতিমালা সহজীকরণ, পিটিএ-এফটিএ সই
- ডিসিসিআই আয়োজিত সেমিনার
এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশের রাজস্ব কাঠামোর আমূল সংস্কার, নীতিমালা সহজীকরণ, দক্ষতা উন্নয়ন, বাণিজ্য সহযোগী দেশগুলোর সঙ্গে পিটিএ এবং এফটিএ সইয়ের পাশাপাশি আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংস্থাগুলোতে নিজেদের অন্তর্ভুক্তি একান্ত অপরিহার্য বলে জানিয়েছেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান।
গতকাল বুধবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘প্রতিযোগিতামূলক শুল্ক কাঠামো: প্রেক্ষিত স্বল্পোন্নত দেশের উত্তরণ’ শীর্ষক ওয়ার্কশপে তিনি এ কথা বলেন। ওয়ার্কশপে ঢাকা চেম্বারের সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ৫০ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
ওয়ার্কশপের উদ্বোধনী বক্তব্যে রিজওয়ান রাহমান বলেন, এলডিসি উত্তোরণের পর আর্ন্তজাতিক বাজারে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধা হারাবে এবং দেশে উৎপাদিত পণ্য বহির্বিশ্বে রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রায় ৮ শতাংশ থেকে ১৬ শতাংশ শুল্ক প্রদান করতে হবে, যা আমাদের রপ্তানির সক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করবে।
ওয়ার্কশপে মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের যুগ্ম প্রধান মশিউল ইসলাম বলেন, গত অর্থবছর বাংলাদেশ ৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। সর্বোচ্চ রপ্তানিকৃত ২০টি পণ্যের মধ্যে ১৮টিই শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা ভোগ করেছে। এলডিসি উত্তোরণের পর আমাদের উদ্যোক্তারা এ সুবিধা প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত হবেন। এমতাবস্থায় বৈশ্বিক বাজারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বেসরকারি খাতকে দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়াতে এখনই কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
এ লক্ষ্যে বাণিজ্য সহযোগী দেশসমূহের সাথে দ্রুততম সময়ে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর (এফটিএ) এবং আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ব্লকগুলোর সাথে বাংলাদেশের অর্ন্তভুক্তি নিশ্চিতকরণ একান্ত অপরিহার্য। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ আকর্ষণ ও স্থানীয় শিল্পায়নকে বেগবান করতে দেশের সার্বিক রাজস্ব এবং শুল্ক কাঠামোর আমূল সংষ্কার ও অটোমেশন ব্যবস্থা নিশ্চিতকরনের উপর জোরারোপ করেন তিনি।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, বাস্তবভিত্তিক শুল্ক কাঠামো প্রণয়নে দেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতকে একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, কোভিড মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা অবস্থা বাংলাদেশের এলডিসি উত্তোরণের পরিস্থিতিতে জটিল করেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (ডব্লিউটিও সেল, পরিচালক-৩) ফারহানা আইরিছ বলেন, শুল্ক কাঠামো সহজীকরণের পাশাপাশি আমাদেরকে রপ্তানির পরিমাণ বাড়ানো ও পণ্য বহুমুখীকরণের উপর নজর দিতে হবে, কারণ বর্তমানে আমাদের রপ্তানি ও আমদানির মধ্যে বিশাল ঘাটতি রয়েছে। ভুটান, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কার সাথে এফটিএ স্বাক্ষরের লক্ষ্যে সরকার গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।
এনবিআরের প্রথম সচিব (শুল্ক রেয়াত ও প্রকল্প সুবিধা) ড. নিয়োমুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে দেশের মোট রাজস্বের ৩৪ শতাংশ আসে আমদানি শুল্ক হতে এবং এলডিসি’র চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশকে আমদানি শুল্ক হারে উল্লেখজনক হ্রাস করতে হবে, সে ক্ষেত্রে ভ্যাট ও আয়করের উপর বেশি হারে প্রাধান্য দিতে হবে।
চলতি অর্থ-বছরের বাজেটে ৬টি পণ্যের আমদানি শুল্ক হার কমানো হয়েছে এবং আরও ৬০টি পণ্যের আমদানি শুল্ক হ্রাসের লক্ষ্যে এনবিআর কাজ করছে, তবে এ ক্ষেত্রে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা যেন ব্যাহত না হয় সে বিষয়েও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। এলডিসি’র চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্থানীয় শিল্পের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই বলে।