ঢাকা | বৃহস্পতিবার
২৮শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১৩ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চেকে লেনদেনের সিদ্ধান্ত থেকে বেরুবে বিএসইসি

চেকে লেনদেনের সিদ্ধান্ত থেকে বেরুবে বিএসইসি

সিকিউরিটিজ হাউজের গ্রাহকদের জমাকৃত চেক নগদায়ন না হওয়া পর্যন্ত শেয়ার কেনা যাবে না সংক্রান্ত নির্দেশনা থেকে সরে আসতে চাচ্ছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর ফলে বাজারের বর্তমান মন্দা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলেন, গত ১১ অক্টোবর গ্রাহকের চেক নগদায়ন বা জমা না হওয়া পর্যন্ত বিনিয়োগকারী লেনদেন করতে পারবে না বলে ব্রোকারেজ হাউজগুলোতে ডিএসই চিঠি পাঠায়। চিঠিতে বিএসইসির সংযুক্ত করা এক নির্দেশনার বিষয়ে বলা হয়, গত ২২ সেপ্টেম্বর কমিশনার আব্দুল হালিমের সভাপতিত্বে ডিএসইর সিআরও এবং বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে কমিশনের এসআরআই বিভাগের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় গৃহিত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে ব্যবস্থা গ্রহন পূর্বক উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষকে আগামি ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কমিশনকে অবহিত করতে বলা হয়। ওই গৃহিত সিদ্ধান্তের মধ্যে ১ নম্বরে ছিল, প্রতি ট্রেকহোল্ডার বিনিয়োগকারীর চেক নগদায়নের পরে ক্রয় আদেশ বাস্তবায়ন করবে। এক্ষেত্রে ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বরের নির্দেশনা পরিপালন করতে বলা হয়েছিল।

বিএসইসির এমন সিদ্ধান্তের খবর ১৩ অক্টোবর ছড়িয়ে পড়লে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ওইদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭ পয়েন্ট কমে যায়। এরপর পতন অব্যাহত রয়েছে। সিন্ধান্তের পর থেকে গত সোমবার পর্যন্ত ডিএসইএক্স কমেছে ১৯৩ পয়েন্ট। লেনদেন হাজার কোটি থেকে নেমে ৭শ কোটি চলে আসে। বাড়ে বিক্রির চাপ বহুগুন বলে জানান তারা।

বিএসইসির সূত্রে জানা যায়, বাজারের মন্দার এমন পরিস্থিতি রোধে পুঁজিবাজার মধ্যস্থতাকারীদের দাবির আলোকে চেকে লেনদেন করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে যাচ্ছে বিএসইসি। কিন্তু এখনই কোন নির্দেশনা দেওয়া যাবে না। কারন বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম মরোক্কো সফর আছেন। সফর শেষে দেশে এসে তিনি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। এ সিদ্ধান্ত আগামি সপ্তাহের শুরুর দিকে হতে পারে।

উল্লেখ্য “২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বর চেক ব্রোকারেজ হাউজের হিসাবে নগদায়ন বা জমা না হওয়া পর্যন্ত বিনিয়োগকারী লেনদেন করতে পারবে না বলে বিএসইসি এক সিদ্ধান্ত নেয়। এই কারণে ওইসময় পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। দুইদিনের মাথায় একই বছরের ৮ ডিসেম্বর সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত করতে বাধ্য হয় বিএসইসি। কিন্তু চলতি বছরের গত ১১ অক্টোবর বিএসইসির সেই একই সিদ্ধান্ত কার্যকরের জন্য ডিএসইর মাধ্যমে ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে জানানো হয়। এমন সিদ্ধান্তের খবরে গত ১৩ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) পুঁজিবাজারে ফের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সেই পতন এখনও অব্যাহত।”

এদিকে, সিকিউরিটিজ হাউজের গ্রাহকদের জমাকৃত চেক নগদায়ন না হওয়া পর্যন্ত শেয়ার কেনা যাবে না সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রত্যাহারে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) চিঠি দিয়েছিল বিনিয়োগকারীরা। গত মঙ্গলবার বিনিয়োগকারীদের পক্ষে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের বরাবর এক চিঠি দেয়। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাকের স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলেছিলেন, সম্প্রতি বিএসইসির নির্দেশক্রমে ডিএসইর শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের দেওয়া চেক নগদায়ন না হওয়া পর্যন্ত শেয়ার ক্রয় করা যাবে না বলে ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে।

ওই নির্দেশনার পর থেকে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতন হওয়ায় অস্থিরতা বিরাজ করছে। এরই প্রেক্ষাপটে চিঠিতে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির কথা বিবেচনা করে একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজার গড়ার লক্ষে উক্ত নির্দেশনা প্রত্যাহার করার অনুরোধ করা হয়েছিল। এরও আগে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে গ্রাহকের জমাকৃত চেক নগদায়নের পর ক্রয় আদেশ বাস্তবায়নের নির্দেশনাটি প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছিল পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন সিইও ফোরাম এবং ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)।

এবিষয়ে বিএসইসি ও ডিএসইর কাছে পৃথকভাবে সংগঠন দুইটির পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া দেওয়া হয়েছিল। সংগঠন দুটি জানায়, এর আগে নির্দেশনাটি ২০১০ সালে জারি করা হয়। পরবর্তীতে তা স্থগিত রাখা হয়। কিন্তু গত সপ্তাহে নির্দেশনাটি পুনরায় ব্রোকারদের কাছে পাঠানো হয়। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।

সংবাদটি শেয়ার করুন