ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতার চাপ বেশি
লেনদেন
- ডিএসইতে ৭শ কোটি টাকা সিএসইতে ১৬ কোটি
- সেরা ডিএসইতে বেক্সিমকো সিএসইতে স্কয়ার ফার্মা
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) গতকাল রবিবার সব ধরনের সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। লেনদেন পরিমাণ দুই স্টকে কমেছে। লেনদেন কমে ডিএসইতে ৭শ কোটি টাকার ঘরে নেমেছে। সিএসইতে ১৬ কোটি টাকার ঘরে নেমেছে। লেনদেন সেরা ডিএসইতে বেক্সিমকোর শেয়ার। সিএসইতে স্কয়ার ফার্মার শেয়ার। উভয় স্টকে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে। ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতার চাপ ছিল অনেক বেশি।
স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, গতকাল রবিবার ডিএসইতে ৭৮৮ কোটি ৪৬ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবস গত বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ৯৭৫ কোটি ৬২ লাখ টাকার শেয়ার। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২ দশমিক ১১ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩৯২ দশমিক ২৯ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক ৬ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস সূচক দশমিক ৫২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ২ হাজার ২৭৭ দশমিক ৬৫ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৪০৭ দশমিক শূন্য ২ পয়েন্টে।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৫৯টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ১৭টি এবং কমেছে ১১৯টির। শেয়ার পরিবর্তন হয়নি ২২৩টির। এদিন ডিএসইতে বেক্সিমকোর শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। এদিন বেক্সিমকো ৭০ কোটি ৮৭ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা এদিন অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ওরিয়ন ফার্মা ৫৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, এডিএন টেলিকম ৪২ কোটি ৮১ লাখ টাকা, ইন্ট্রাকো ৩১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং ৩১ কোটি ২৫ লাখ টাকা, স্কয়ার ফার্মা ২৯ কোটি ৬ লাখ টাকা, সী পার্ল বিচ ২৮ কোটি ২৯ লাখ টাকা, ইস্টার্ন হাউজিং ২৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা, সোনালী পেপার ১৬ কোটি ৪৯ লাক টাকা এবং কেডিএস এক্সসরিজ ১৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
সূচক পতন প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বর চেক ব্রোকারেজ হাউজের হিসাবে নগদায়ন বা জমা না হওয়া পর্যন্ত বিনিয়োগকারী লেনদেন করতে পারবে না বলে বিএসইসি এক সিদ্ধান্ত নেয়। এই কারণে ওইসময় পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। দুইদিনের মাথায় একই বছরের ৮ ডিসেম্বর সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত করতে বাধ্য হয় বিএসইসি।
কিন্তু চলতি বছরের গত ১১ অক্টোবর বিএসইসির সেই একই সিদ্ধান্ত কার্যকরের জন্য ডিএসইর মাধ্যমে ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে জানানো হয়। এমন সিদ্ধান্তের খবরে বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) পুঁজিবাজারে ফের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সেই পতন এখনও অব্যাহত। অবশ্য গত বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) প্রধান সূচকের নামমাত্র ছিল।
এদিকে সিকিউরিটিজ হাউজের গ্রাহকদের জমাকৃত চেক নগদায়ন না হওয়া পর্যন্ত শেয়ার কেনা যাবে না সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রত্যাহারে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) চিঠি দিয়েছে বিনিয়োগকারীরা। গত মঙ্গলবার বিনিয়োগকারীদের পক্ষে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের বরাবর এক চিঠি দিয়েছে।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাকের স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলেন, সম্প্রতি বিএসইসির নির্দেশক্রমে ডিএসইর শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের দেওয়া চেক নগদায়ন না হওয়া পর্যন্ত শেয়ার ক্রয় করা যাবে না বলে ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে। ওই নির্দেশনার পর থেকে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে।
বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতন হওয়ায় অস্থিরতা বিরাজ করছে। এরই প্রেক্ষাপটে চিঠিতে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির কথা বিবেচনা করে একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজার গড়ার লক্ষে উক্ত নির্দেশনা প্রত্যাহার করার অনুরোধ করা হয়।
এরও আগে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে গ্রাহকের জমাকৃত চেক নগদায়নের পর ক্রয় আদেশ বাস্তবায়নের নির্দেশনাটি প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছিল পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন সিইও ফোরাম এবং ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)। এবিষয়ে বিএসইসি ও ডিএসইর কাছে পৃথকভাবে সংগঠন দুইটির পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া দেওয়া হয়।
অপরদিকে, সিএসইতে গতকাল রবিবার লেনদেন হয়েছে ৬৭ কোটি ৭৫ লাখ টাকা শেয়ার। আগের কার্যদিবস বৃহস্পতিবার ২৬ কোটি ২৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২২৮টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ২২টি, কমেছে ৭৫টি এবং পরিবর্তন হয়নি ১৩১টির। এদিন সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৮০ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৭১৯ দশমিক ৬৭ পয়েন্টে।
এছাড়া সিএসই-৫০ সূচক ৪ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ১৪ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স সূচক ৪৮ দশমিক ৭৯ পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক ৪ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৩৫৪ দশমিক ২০ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ৩০২ দশমিক ৬০ পয়েন্ট, ১১ হাজার ২১৯ দশমিক ৩৯ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ২০৬ দশমিক ৯৮ পয়েন্টে।
এদিন সিএসইতে স্কয়ার ফার্মার শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। এদিন স্কয়ার ফার্মা ২ কোটি ৩৯ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা এদিন অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স ২ কোটি ১ লাখ টাকা, গোল্ডেন সন ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, ওরিয়ন ফার্মা ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা, বেক্সিমকো ১ কোটি ৪ লাখ টাকা, ন্যাশনাল ব্যাংক ৮৪ লাখ টাকা, শাইনপুকুর সিরামিক ৫৬ লাখ টাকা, জেএমআই হসপিটাল ৫২ লাখ টাকা, এইচআর টেক্সটাইল ৪১ লাখ টাকা এবং ইস্টার্ন হাউজিং ৩১ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।