শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা

শঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা

বিএসইসির সিদ্ধান্তের পঞ্চম দিনেও পতন

  • ডিএসইতে ১১শ কোটি টাকা
  • সিএসইতে ১৭ কোটি
  • লেনদেন সেরা বেক্সিমকো

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গতকাল বুধবার প্রধান সূচক ডিএসইএক্স পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সব ধরনের সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়েছে। লেনদেন পরিমাণ ডিএসইতে বাড়লেও সিএসইতে কমেছে। লেনদেন বেড়ে ডিএসইতে ১১শ কোটি টাকার ঘরে এসেছে। আর সিএসইতে ১৭ কোটি টাকায় নেমেছে। উভয় স্টকে বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন সেরা দুই স্টকে বেক্সিমকোর শেয়ার।

সূচক পতন প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, ২০১০ সালের ৬ ডিসেম্বর চেক ব্রোকারেজ হাউজের হিসাবে নগদায়ন বা জমা না হওয়া পর্যন্ত বিনিয়োগকারী লেনদেন করতে পারবে না বলে বিএসইসি এক সিদ্ধান্ত নেয়। এই কারণে ওইসময় পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। দুইদিনের মাথায় একই বছরের ৮ ডিসেম্বর সেই সিদ্ধান্ত স্থগিত করতে বাধ্য হয় বিএসইসি। কিন্তু চলতি বছরের গত ১১ অক্টোবর বিএসইসির সেই একই সিদ্ধান্ত কার্যকরের জন্য ডিএসইর মাধ্যমে ব্রোকারেজ হাউজগুলোকে জানানো হয়। এমন সিদ্ধান্তের খবরে গত বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারে ফের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সেই পতন এখনও অব্যাহত।

এদিকে সিকিউরিটিজ হাউজের গ্রাহকদের জমাকৃত চেক নগদায়ন না হওয়া পর্যন্ত শেয়ার কেনা যাবে না সংক্রান্ত নির্দেশনা প্রত্যাহারে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) চিঠি দিয়েছে বিনিয়োগকারীরা। গত মঙ্গলবার বিনিয়োগকারীদের পক্ষে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের বরাবর এক চিঠি দিয়েছে। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাকের স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলেন, সম্প্রতি বিএসইসির নির্দেশক্রমে ডিএসইর শেয়ার ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের দেওয়া চেক নগদায়ন না হওয়া পর্যন্ত শেয়ার ক্রয় করা যাবে না বলে ব্রোকারেজ হাউসগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  ২২ এপ্রিল থেকে মার্কেট খুলে দেওয়ার দাবি

ওই নির্দেশনার পর থেকে পুঁজিবাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক পতন হওয়ায় অস্থিরতা বিরাজ করছে। এরই প্রেক্ষাপটে চিঠিতে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির কথা বিবেচনা করে একটি স্থিতিশীল পুঁজিবাজার গড়ার লক্ষে উক্ত নির্দেশনা প্রত্যাহার করার অনুরোধ করা হয়।

এর আগে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে গ্রাহকের জমাকৃত চেক নগদায়নের পর ক্রয় আদেশ বাস্তবায়নের নির্দেশনাটি প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন সিইও ফোরাম এবং ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ)। এবিষয়ে বিএসইসি ও ডিএসইর কাছে পৃথকভাবে সংগঠন দুইটির পক্ষ থেকে চিঠি দেওয়া দেওয়া হয়েছে। সংগঠন দুটি জানায়, এর আগে নির্দেশনাটি ২০১০ সালে জারি করা হয়। পরবর্তীতে তা স্থগিত রাখা হয়। কিন্তু গত সপ্তাহে নির্দেশনাটি পুনরায় ব্রোকারদের কাছে পাঠানো হয়। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।

স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, গতকাল বুধবার ডিএসইতে ১ হাজার ১৭৮ কোটি ৭১ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবস মঙ্গলবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকার শেয়ার। এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১০ দশমিক ৫২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩৯০ দশমিক ১৮ পয়েন্টে। ডিএসই-৩০ সূচক ৬ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৭১ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসইএস সূচক দশমিক ৭১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪০৭ দশমিক ৫৫ পয়েন্টে।

গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৬৫টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ৫৯টি এবং কমেছে ৮১টির। শেয়ার পরিবর্তন হয়নি ২২৬টির। এদিন ডিএসইতে বেক্সিমকোর শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। এদিন বেক্সিমকো ৭৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।

আরও পড়ুনঃ  সব উপজেলায় ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করা হবে : প্রধানমন্ত্রী

লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা এদিন অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে ইস্টার্ন হাউজিং ৬৭ কোটি ৪ লাখ টাকা, ওরিয়ন ফার্মা ৫৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা, জেএমআই সিরিঞ্জ ৩৩ কোটি ৩ লাখ টাকা, এনডিএন টেলিকম ৩১ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, পেপার প্রসেসিং ২৮ কোটি ১৮ লাখ টাকা, মনোস্পল পেপার ২৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা, সী পার্ল বিচ ২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা, বিডি ল্যাম্পস ২৪ কোটি ৯৩ লাখ টাকা এবং আনোয়ার গ্যালভানাইজিং ২৩ কোটি ২৩ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।

অপরদিকে, সিএসইতে গতকাল বুধবার লেনদেন হয়েছে ১৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা শেয়ার। আগের কার্যদিবস মঙ্গলবার ৪১ কোটি ৬৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২১২টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ৫৮টি, কমেছে ৫৭টি এবং পরিবর্তন হয়নি ৯৭টির। এদিন সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৩৩ দশমিক ৪৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৮২০ দশমিক ৭৪ পয়েন্টে।

এছাড়া সিএসই-৫০ সূচক ২ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ২ দশমিক ৪৬ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স সূচক ২০ দশমিক ৬৩ পয়েন্ট এবং সিএসআই সূচক ৪ দশমিক ৪৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৩৫৭ দশমিক ৬০ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ৩৫৫ দশমিক ৭১ পয়েন্ট, ১১ হাজার ২৮০ দশমিক ২৩ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ২১৪ দশমিক ৮৩ পয়েন্টে।

এদিন সিএসইতে বেক্সিমকোর শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। এদিন বেক্সিমকো ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা এদিন অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা, সী পার্ল বিচ ১ কোটি ২১ লাখ টাকা, মনোস্পল পেপার ১ কোটি ৮ লাখ টাকা, ওরিয়ন ফার্মা ৯৯ লাখ টাকা, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং ৯৪ লাখ টাকা, প্রান ৬৭ লাখ টাকা, লার্ফাজ-হোল্ডসিম ৫০ লাখ টাকা, জেএমআই হসপিটাল ৪৫ লাখ টাকা এবং বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেমস ৪৫ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন