শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সবুজ অর্থায়নে গতি

সবুজ অর্থায়নে গতি

পরিবেশবান্ধব টেকসই উন্নয়নে ব্যাংকিংখাতে চালু করা হয়েছে সবুজ ব্যাংকিং। এটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন এবং পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে। ধীরগতিতে হলেও অর্থায়ন বাড়ছে সবুজ ব্যাংকিংয়ে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বায়ুমণ্ডলের কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে বিশ্বে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে পরিবেশবান্ধব কারখানা বা সবুজ শিল্প স্থাপনেও প্রশংসনীয় কাজ করে যাচ্ছে।

এরই অংশ হিসেবে পরিবেশবান্ধব ব্যাংকিং সেবার যাত্রা। অর্থায়নের ক্ষেত্রে যেখানে পরিবেশবান্ধব কারাখানাকেই বেছে নেয়া হয়। তবে ব্যাংকের অর্থায়নের অন্যতম খাত হিসেবে ইস্পাত, কাগজ, সিমেন্ট, রাসায়নিক, সার, বিদ্যুৎ এবং টেক্সটাইলের মতো যে কারাখানা বা প্রকল্প রয়েছে সেগুলোই সর্বাধিক কার্বন নিঃসরণ ঘটায়। যা পরিবেশের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনে।

এমন পরিস্থিতিতে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক ইতোমধ্যে সবুজ ব্যাংকিংয়ের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমের পাশাপাশি গ্রিন প্রকল্পে অর্থায়ন জোরদার করেছে। আর পরিবেশবান্ধব টেকসই উন্নয়নে অর্থায়নের জন্য ব্যাংকিংখাতে চালু করা হয়েছে সবুজ ব্যাংকিং কার্যক্রম। এটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন এবং পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে।

প্রতি তিনমাস পর পর টেকসই অর্থের ওপর পর্যালোচনা প্রতিবেদনে সবুজ ব্যাংকিং কার্যক্রমের ফলাফল গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করা হয়। এ প্রতিবেদনে টেকসই আর্থিক শ্রেণিকরণের অধীনে টেকসই অর্থের সমস্ত উপাদানকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ব্যাংকগুলো সাসটেইনেবল ফিন্যান্সের ১১টি ক্যাটাগরিতে মোট ৬৮টি পণ্যের বিপরীতে ঋণ দিতে পারে। এসব পণ্যের অধিকাংশই সবুজ অর্থায়নের অন্তর্ভুক্ত। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এ পর্যন্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো টেকসই প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে ৩০ হাজার ৫৭৮ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থায়ন করেছে ১ হাজার ৪৩ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৫ দশমিক ৬৪ শতাংশ।

গত মার্চ পর্যন্ত দেশের ব্যাংকগুলো টেকসই প্রকল্পে অর্থায়ন করে ২৫ হাজার ২৯০ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থায়ন করে ৮৫৯ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ১৪ দশমিক ৭৬ শতাংশ। টেকসই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে কৃষি, সিএমএসএমই, পরিবেশবান্ধব কারখানা, সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল প্রকল্পে অর্থায়ন। যদিও মোট ঋণের ২০ শতাংশ টেকসই প্রকল্পে হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণের ৭৩ শতাংশ নিয়েছে পুরুষ আর ২৭ শতাংশ নারী।

আরও পড়ুনঃ  বাইরে করোনা, ঘরে মশার কামড়

একই সময়ে পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে ব্যাংকগুলো ২ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা অর্থায়ন করেছে, যা ব্যাংকগুলোর মোট মেয়াদি ঋণের ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থায়ন করেছে ৩১০ কোটি টাকা, যা প্রতিষ্ঠানগুলোর মেয়াদি ঋণের ৬ দশমিক ৭২ শতাংশ। মার্চ পর্যন্ত পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে ব্যাংকগুলো ১ হাজার ৬৮৯ কোটি টাকান অর্থায়ন করে, যা ব্যাংকগুলোর মোট মেয়াদি ঋণের ৩ দশমিক ১০ শতাংশ। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অর্থায়ন করে ৪০৯ কোটি টাকা, যা প্রতিষ্ঠানগুলোর মেয়াদি ঋণের ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। পরিবেশবান্ধব প্রকল্পের মধ্যে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন, বর্জ্য পরিশোধনাগার বা ইটিপি নির্মাণ, পরিবেশবান্ধব ইট উৎপাদন অন্যতম। এই খাতে মোট মেয়াদি ঋণের ৫ শতাংশ ঋণ দেয়ার শর্ত রয়েছে।

চলতি জুন শেষে টেকসই অর্থায়নে বিদেশি ব্যাংক স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া তাদের লক্ষ্যমাত্রার ৮২ দশমিক ২৯ শতাংশ অর্জন করেছে। বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা পূরণের তালিকায় দ্বিতীয় ন্যাশনাল ব্যাংক ৬৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এরপর আছে যথাক্রমে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ৫৩ দশমিক ৭২, কৃষি ব্যাংক ৫০ দশমিক ৬৭, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ৩১ দশমিক ৪৭, ট্রাস্ট ব্যাংক ২৮ দশমিক ৫৫, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ২৫ দশমিক ৮১, যমুনা ২৩ দশমিক ০৯, এনআরবি কমার্শিয়াল ২২ দশমিক ৪১, ব্র্যাক ২০ দশমিক ৬৮ এবং জনতা ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার ২০ দশমিক ১১ শতাংশ বিতরণ করেছে।

ব্যাংকবহির্ভুত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনবিএফআই) মধ্যে বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ ঋণ বিতরণ করেছে। এ ছাড়া লংকান অ্যালায়েন্স ৮৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ, হজ ফাইন্যান্স ৫৭ শতাংশ, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স ৪৭ দশমিক ০৯ শতাংশ ও সিভিসি ফাইন্যান্স ৪৩ দশমিক ২১ শতাংশ ঋণ দিয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  উপকূলে ১৩০ কি.মি. গতিতে আছড়ে পড়বে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আফজাল করিম বলেন, দেশে গ্রিন ফিন্যান্স এখনও সীমিত পরিসরে হচ্ছে। ফান্ড নিয়ে বসে আছি। উদ্যোক্তা আসছে না। যদি উদ্যোক্তা আসে, কনসেপ্টটা যেহেতু কাজ করছে, এটার পরিধি বাড়বে। তিনি বলেন, সরকারের তথা বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু প্রণোদনাও আছে। উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসা উচিত। সোনালী ব্যাংক গ্রিন ফিন্যান্সে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।

এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২২ সালের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো টেকসই প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে ৪ হাজার ৭৬৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকগুলোই করেছে ৪ হাজার ৫০ কোটি টাকা। বাকি ৭১৯ কোটি টাকা অর্থায়ন করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, জানুয়ারি থেকে মার্চ এই তিনমাসে ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সবুজ অর্থায়ন করা হয়েছে ২ হাজার ৯৮ কোটি টাকা। এর বিপরীতে মেয়াদী ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এর মধ্যে ব্যাংকে ৩ দশমিক ১০ শতাংশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এ সময় ব্যাংক খাতে ঋণ দেয়া হয় এক হাজার ৩২৮ জনকে এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৩১৬ জনকে।

নবায়নযোগ্য শক্তিতে ৩৪ কোটি ৪৬ লাখ, শক্তি দক্ষতায় ১২৫ কোটি ৬ লাখ, বিকল্প শক্তিতে ৪৫ কোটি ৫২ লাখ, তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ৭৩০ কোটি ৬২ লাখ, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ৩ কোটি ৮০ লাখ, পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যের পুনর্ব্যবহারযোগ্য উৎপাদন ১১১ কোটি ১১ লাখ ৭৬ হাজার, পরিবেশ বান্ধব ইট উৎপাদন ৬১ কোটি ৩৩ লাখ ৮৭ হাজার, সবুজ পরিবেশবান্ধব প্রতিষ্ঠান ৫৫৬ কোটি ২৬ লাখ ২৯ হাজার, সবুজ কৃষিতে ১১ কোটি ৭৭ লাখ ৫৮ হাজার, সবুজ সম্পূরক রিজার্ভ সুবিধা (এসআরএফ) ১৪৬ কোটি ৩৫ লাখ এবং সবুজ কুটির, ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (সিএমএসএমই) এক হাজার ২৮০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। সর্বমোট গ্রিন ফাইন্যান্স এক হাজার ৮ কোটি টাকা।

আরও পড়ুনঃ  গণবিরোধী রাজনীতিকদের পাশে জনগণ থাকে না

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এপ্রিল থেকে জুন এই তিনমাসে ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সবুজ অর্থায়ন করা হয়েছে ২ হাজার ৬ ৭১ কোটি টাকা। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, নবায়নযোগ্য শক্তিতে ৬ কোটি ৬০ লাখ, শক্তি দক্ষতায় ৬৬৪ কোটি ৮৬ লাখ, বিকল্প শক্তিতে ৪৫ লাখ, তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ১৭২ কোটি ৬২ লাখ, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ১০ লাখ, পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যের পুনর্ব্যবহারযোগ্য উৎপাদন ২১৯ কোটি ৩৮ লাখ, পরিবেশ বান্ধব ইট উৎপাদন ৯৭ কোটি ৪২ লাখ, সবুজ পরিবেশবান্ধব প্রতিষ্ঠান ১ হাজার ২২২ কোটি ৫৮ লাখ, সবুজ কৃষিতে ৮ কোটি ৮৬ লাখ, সবুজ সম্পূরক রিজার্ভ সুবিধা (এসআরএফ) ১৬০ কোটি ৫৪ লাখ এবং সবুজ কুটির, ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (সিএমএসএমই) এক হাজার ৩৮ কোটি ১৭ লাখ টাকা।

চলতি জুন শেষে টেকসই অর্থায়নে বিদেশি ব্যাংক স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া তাদের লক্ষ্যমাত্রার ৮২ দশমিক ২৯ শতাংশ অর্জন করেছে। বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা পূরণের তালিকায় দ্বিতীয় ন্যাশনাল ব্যাংক ৬৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ। এরপর আছে যথাক্রমে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ৫৩ দশমিক ৭২, কৃষি ব্যাংক ৫০ দশমিক ৬৭, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ৩১ দশমিক ৪৭, ট্রাস্ট ব্যাংক ২৮ দশমিক ৫৫, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ২৫ দশমিক ৮১, যমুনা ২৩ দশমিক ০৯, এনআরবি কমার্শিয়াল ২২ দশমিক ৪১, ব্র্যাক ২০ দশমিক ৬৮ এবং জনতা ব্যাংক লক্ষ্যমাত্রার ২০ দশমিক ১১ শতাংশ বিতরণ করেছে।

ব্যাংকবহির্ভুত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনবিএফআই) মধ্যে বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ ঋণ বিতরণ করেছে। এ ছাড়া লংকান অ্যালায়েন্স ৮৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ, হজ ফাইন্যান্স ৫৭ শতাংশ, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স ৪৭ দশমিক ০৯ শতাংশ ও সিভিসি ফাইন্যান্স ৪৩ দশমিক ২১ শতাংশ ঋণ দিয়েছে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন