আমাদের সাফল্যের কথাগুলো ব্রুনাই সুলতানের কাছে তুলে ধরতে হবে। গত ৫০ বছরের বাংলাদেশে যত প্রবৃদ্ধি হয়েছে তার মধ্যে ৭৩ শতাংশই অর্জিত হয়েছে গেল এক যুগে। এসব সাফল্যের গল্পই তুলে ধরবো ব্রুনাই দারুসসালামের সুলতান হাসানাল বালকিয়াহর কাছে। কী করে পাল্টে গেলো বাংলাদেশের চিত্র। ৯৩ মার্কিন ডলার থেকে মাথাপিছু আয় প্রায় ৩ হাজার মার্কিন ডলারের ঘরে গেলো তার সুন্দর গল্পগুলো তুলে ধরতে হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও উন্নয়ন সমন্বয় এর সভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ারের সাবেক চেয়ার অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান। গত ১৫ অক্টোবর দৈনিক আনন্দবাজারকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি। সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো-
- আপনি ব্রুনাই দারুসসালাম সফর করেছেন। একজন অর্থনীতির রাখাল রাজা হিসেবে ব্রুনাইয়ের ভূমিতে বাংলাদেশের জনশক্তিকে, অর্থনীতিকে আবাদ করার কী স্থান দেখেছেন?
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর থাকাকালীন ব্রুনাইয়ে সফর করেছিলাম। ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের আয়োজনে গভর্নরদের একটি সম্মেলনে ছিল সেখানে। সে সময়ে আমি ব্রুনাইয়ের গর্ভনর এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আলাপ করেছি এবং লক্ষ্য করেছি যে বাংলাদেশের ব্যাপারে এক বিরাট আগ্রহ আছে দেশটির। একইসঙ্গে আমি দেখলাম যে বাংলাদেশের অনেক উচ্চশিক্ষিত পণ্ডিত ব্যক্তিরা ব্রুনাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছেন। তারাই আমাকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সম্বন্ধে ব্রুনাই বা ওই দেশের নাগরিকদের ইতিবাচক মনোভঙ্গি রয়েছে। বেশকিছু বাঙালি উদ্যোক্তা ইতোমধ্যে খাদ্যখাতে কাজ শুরু করেছেন।
বিশেষ করে বাংলাদেশে যে হালাল খাবার তৈরি হয় সে বিষয়ে তারা অবগত। এ কারণে তারা বাংলাদেশ থেকে হালাল মাংস, সবজি নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও নানা ধরনের প্রসেসিং ফুড বাংলাদেশ থেকে যাচ্ছে। আমি মনে করি এটি একটি খুব সম্ভাবনার ক্ষেত্র এবং এবারের মহামান্য সুলতানের সফরের সময় আমার ধারণা এ বিষয়টিকে আরও কি করে সামনে নিয়ে যাওয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা হবে।
বিশেষ করে আমাদের প্রচুর তরুণ উদ্যোক্তা আছে। যারা নতুন কিছু করতে চায় তাদের একটু স্টার্টআপ ক্যাপিটাল দিয়ে সহযোগিতা করলে, প্রযুক্তিগতভাবে একটু সহযোগিতা করলে এবং স্ট্যান্ডার্ট সেটিংস করে দেওয়া যায় বা এক্ষেত্রে যদি তাদের সার্টিফিকেট প্রদান করা হয় তাহলে রপ্তানি প্রক্রিয়াটা সহজ হবে। ব্রুনাইয়ে বর্তমানে আমাদের ৩০ হাজার বাঙালি শ্রমশক্তি কাজ করছে। তারা কিন্তু স্বল্প দক্ষতা নিয়ে কাজ করছে। তাদের যদি একটু দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করা হতো তাহলে আমাদের বাজার বৃদ্ধি পেতো। কারণ ব্রুনাইতে কিন্তু দক্ষশ্রমিকের চাহিদা অনেক।
এছাড়াও যারা ওখানে বর্তমানে কাজ করছে তাদের যদি কিছু কিছু বিষয় যেমন প্ল্যামবার, ইলেকট্রিশিয়ান ইত্যাদি বিষয়ে দক্ষতা উন্নয়নের কাজ করা যেত তাহলে তারা ধীরে ধীরে ভালো জায়গায় কাজ করতে পারতো। আমরা আশা করবো, এবারের সফরের সময় এরকম একটি স্মার্ট ইকোনমিক ডিপ্লোমেসির কথা আলোচনা হবে। আমরা শুধুমাত্র আমাদের রপ্তানি বাড়াবো না; আমরা তাদের কাছ থেকে আশা করবো বিনিযোগের এবং আমরা জানি সুলতান অত্যন্ত বিনিয়োগবান্ধব একজন রাষ্ট্রনায়ক এবং তিনি নিজেও বিনিয়োগ করেন বিভিন্ন হোটেল, ট্যুরিজম সেক্টরে।
আমাদের চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে যে স্পেশাল ইকোনমিক জোন গড়ে উঠছে, এমনকি আমাদের আশেপাশে আড়াই হাজারের (নারায়ণগঞ্জ) স্পেশাল ইকোনমিক জোন গড়ে উঠছে এসব জায়গাতে যদি তাদের জন্য কিছুটা জায়গা দেওয়া যায়। আলাদা করে হয়তো ব্রুনাইয়ের জন্য স্পেশাল ইকোনমিক জোন আমরা করতে পারবো না কিন্তু যে জোনগুলো হচ্ছে সেখানে যেন তারা ঢুকতে পারে এটা যদি আমরা সহজ করতে পারি তাহলে কিন্তু প্রচুর বিনিয়োগ আসবে।
আগে তারা চীনের সাথে বিনিয়োগ করতো কিন্তু বর্তমানে রাজনৈতিক অবস্থায় সেটা কমেছে। ফলে বাংলাদেশ একটা ভালো ক্ষেত্র হতে পারে তাদের বিনিয়োগের জন্য। এছাড়াও আজকালের (রবিবার) মধ্যে যে চুক্তিগুলো স্বাক্ষরিত হবে তার ফলে আমাদের বিমান সরাসরি ব্রুনাইতে যেতে পারবে এবং সেখান থেকে আসতে পারবে। একই সঙ্গে আমাদের দুই দেশের ভিসা প্রক্রিয়াগুলো সহজ করার চেষ্টা করা হবে। আর সবচেয়ে বড় কথা আমাদের যে জিনিসটা দরকার এ সময়ে বিশ্বে সংকট চলছে, গ্যাসের সংকট আমাদের, বিদ্যুৎ তৈরির জন্য আমাদের এনএলজি খুব দরকার। যেটা ব্রুনাই দিতে পারে। তাদের তেলেরও অনেক মজুদ আছে যা থেকে আমরা সুবিধা পেতে পারি। তেলও দিতে পারে। যেহেতু ব্রুনাই আমাদের কাছাকাছি দেশ। তাহলে নিশ্চয় ইউরোপ, কাতার থেকে আমদানি করার চেয়ে ব্রুনাই থেকে আমদানি করা লাভজনক।
এ সময় আমরা যত ডাইভার্সিটি করে চলবো ততই সুবিধা করতে পারবো। ব্রুনাই থেকে কিছুটা হলেও যদি নিয়ে আসতে পারি তাহলে আগামীর জন্য ভালো হবে। কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এখনই থামবে না, আরও কিছুটা সময় লাগবে। ফলে বিশ্বব্যাপী আরও কয়েকমাস তেল ও জ্বালানি সংকটে ভুগবে। সেক্ষেত্রে আমরা ব্রুনাই থেকে জ্বালানি চাহিদা কিছুটা হলেও মেটাতে পারবো। আমি মনে করি এবারের আলোচনায় এ বিষয়গুলো উঠে আসবে।
- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ব্রুনাইয়ের সুলতানের একটি বন্ধুত্ব ও হৃদ্যতাপূর্ণ ও পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। এটি কীভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহেনার স্বামী অধ্যাপক ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক সাহেব সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। সেই সুবাধে সুলতানের সঙ্গে প্রচুর যোগাযোগ ছিল। তখন তিনি বিরোধী দলনেতা ছিলেন। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। তিনি খুব দ্রুত সবাইকে আপন করে নিতে পারেন। সম্পর্ক স্থাপন করতে পারেন। এই ডিপলোমেসিতে তিনি খুবই পারদর্শী।
- বাংলাদেশ-ব্রুনাই ১৯৮৪-৮৫ সালে ব্যবসায় সম্পর্ক স্থাপিত হয়। এটি তিন অঙ্কের ঘরে যেতে সময় লেগেছিল ২৬ বছর (২০০৬) যদিও দুই অঙ্কের রপ্তানি দিয়ে শুরু। ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্রুনাই সফরে বিষয়টির প্রতিবন্ধকতা পাল্টে আলোর গতি বৃদ্ধি পায়। ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি ১৭ লাখ মার্কিন ডলারে গিয়ে দাঁড়ায়। প্রধানমন্ত্রীর একটি সফরে পুরো পাল্টে গেলো এখন আমাদের রপ্তানি বৃদ্ধিতে হালাল খাদ্য ছাড়াও আর কী কী উদ্যোগ প্রয়োজন?
বাংলাদেশ যে একটি সফল উদ্যোক্তাবান্ধব দেশ এই কথাটি আমরা বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে পারি না। বলতে পারি না। গত ৫০ বছরের অর্জনগুলো বলতে পারি না। এই ৫০ বছরে বাংলাদেশ কতটা বদলে গেছে। ৯৩ মার্কিন ডলার মাথাপিছু আয়ের দেশ এখন প্রায় ৩ হাজার মার্কিন ডলার আয়ের কাছাকাছি। কি করে উদ্যোক্তারা বিশেষ করে কৃষক ও ছোট-খাটো উদ্যোক্তারা বিষয়টি পাল্টে দিলো।
এই রূপান্তরিত বাংলাদেশের গল্পটা অনেক সময় সুন্দরভাবে বিদেশিদের কাছে তুলে ধরতে পারছি না। প্রধানমন্ত্রী যখন কোনো দেশে সফর করেন তখন তিনি সুন্দর করে এগুলো তুলে ধরেন। এবার সুলতানের কাছেও তা তুলে ধরা হবে বলে আশা করি। আমার মনে হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এগুলো পরিষ্কারভাবে তুলে ধরতে পারে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচিত অর্থনৈতিক কূটনীতিতে বেশি জোর দেয়ার। আমাদের গল্প ও শক্তির উৎসগুলোকে তুলে ধরতে হবে।
এখন যে বৈশ্বিক সংকট হচ্ছে, আগামীতে মহামন্দা আসতে পারে সেই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী হুশিয়ারি দিচ্ছেন। দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন কি করে তা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। সেখানে বাংলাদেশ নিজেকে কীভাবে সংরক্ষিত রাখছে, কৃষি রক্ষাকবচকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে খাদ্যনিরাপত্তায়। প্রত্যেক ক্ষেত্রে নতুন জাত উদ্ভাবন করছে ধান থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রে। অর্থনীতি ও খাদ্যনিরাপত্তায় কৃষি কীভাবে কাজ করছে। এসব গল্পগুলো বিশে^র জন্য প্রয়োজন। এসব সাফল্য তুলে ধরতে হবে। আমাদের কৃষকদের মোবাইলে টাকা পাঠানো যায়। তাদের প্রত্যেকের ব্যাংক একাউন্ট আছে। যেকোন সময় এসব পরিবারের জন্য সামাজিক সুরক্ষাখাতের অনুদান নিয়ে যেতে পারি।
আমাদের যোগাযোগ অনেক ভালো। শুধু ফিজিকেল নয় বরং ডিজিটাল। আর মানুষে মানুষে সংযোগ তা বিশে^র যেকোন দেশের চেয়ে ভালো। এসব গল্পগুলো বলতে হবে। সুলতানের কাছে এসব গল্প বলতে হবে। তাতে করে আমরা বিনিয়োগ পাবো। পররাষ্ট্রীনীতি গঠনে এই সফর খুব কাজে আসবে।
- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার আধুনিকতা, দূরদর্শী নেতৃত্ব, কথা-কাজ এবং ভবিষ্যৎমুখি দিকনির্দেশনামূল বক্তব্যের মাধ্যমে বিশ্বে একটি উচ্চস্থান অর্জন করেছেন। ব্রুনাই সুলতানও আধুনিক শিক্ষিত, সুদক্ষ ও বিনিয়োগবান্ধব। দুই নেতার গুণাবলীর সমন্বয় নিয়ে কিছু শুনতে চাই।
দুজন রাষ্ট্রনায়কই আধুনিক এবং সম্মুখমুখী। দুটি দেশই মুসলিম প্রধান হওয়া সত্ত্বেও উদ্ভাবনীতে গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এখানকার ছোট ছোট উদ্যোক্তারা কতদ্রুত পাল্টে ফেলতে পারে একটি দেশ। তার সুযোগ নিশ্চয় নিতে পারেন ব্রুনাইসহ বন্ধু রাষ্ট্রগুলো। ব্রুনাই আমাদের শ্রমিকদের সাথে বন্ধুত্বসুলভ আচরণ করে। তারাও খুব সুনামের সঙ্গে কাজ করছে।
ব্রুনাই তাদের দক্ষতা, আনুগত্য ও শৃঙ্খলা সবকিছুকে সম্মান করেন। সারা বিশে^র প্রবাসীদের সুনাম আছে। এটিকে কাজে লাগিয়ে উন্নয়ন সম্ভাবনা বা বিনিয়োগ আনতে পারি। বিনিয়োগ নীতিমালা সহজ করে ব্রুনাই থেকে বিনিয়োগ আনতে পারি। সংকটকালেও আমাদের সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ-এফডিআই গত কয়েক মাসে ৩ বিলিয়নের বেশি বেড়েছে। ব্রুনাই থেকে যদি এফডিআই পেতে পারি তাহলে ডলার সংকটের কারণে যে অবস্থা হচ্ছে তা থেকে উৎরে উঠা যাবে। ডলারের দাম বেশি হওয়ায় টাকার দাম কমে গেছে। এতকিছুর পরেও এফডিআই পাচ্ছি। বিশেষ করে চীনে যেসব এফডিআই যেতো সেগুলো সরে বাংলাদেশে আসছে। মিয়ানমারে যে এফডিআই যেতো তা আমাদের দেশে আসছে। তুমি যে অর্থনৈতিক কূটনীতির বিষয়টি সামনে এনেছো তা আরো বহুগুণ বৃদ্ধিতে সরকারকে কাজ করতে হবে। অর্থনৈতিক কূটনীতির ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ। সেই ডিপলোমেসি কাজে লাগিয়ে আমরা আরো সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারি, আনতে পারি।
সেই জায়গা থেকে সফরটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ব্রুনাইয়ের সুলতান কয়েক মাস আগেও আসিয়ানের প্রেসিডেন্ট ছিল। তিনি আসিয়ানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। তিনি যদি গিয়ে বলেন তোমরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করো, আমি তাদের দেখে এসেছি তারা কতটা বিনিয়োগবান্ধব রাষ্ট্র। তাহলে বৈদেশিক বিনিয়োগ অনেক বেড়ে যাবে। বিশেষ করে এই সংকটকালীন সফরটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে।
- আমাদের প্রধানমন্ত্রী যখন কোনো দেশে সফর করেন বা অন্য দেশে প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপ্রধান আমাদের এখানে আসেন। তখন যৌথ কিছু সমঝোতা, ইশতেহার ঘোষণা দেয়া হয়। আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। এগুলোর বেশিরভাগই খাতাতেই থেকে যায় কার্যক্রমে আসে না। এসব বিষয়গুলো বাস্তবায়নে কি ধরনের গুরুত্ব দেয়া দরকার বা পুঙ্খানাপুঙ্খ পালন করা যায়। তাতে কী ধরনের কাজ প্রয়োজন? ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর ব্রুনাই সফরকালে জ্বালানি ছাড়াও ৬টি বিসয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তার বাস্তবায়ন খুব কম। খাতা থেকে, মাথা থেকে সরাসরি ফিল্ডে চলে যাবে।
শুধু জ্বালানি নয় আমাদের সমুদ্র তথা নীল অর্থনীতি নিয়েও কথা হয়েছিল। কেননা দেশটিতে আমাদের মতোই বিশাল সমুদ্র রয়েছে। সেখানে বিপুল সম্ভাবনার ক্ষেত্র উন্মোচন করা যেতে পারে। আর এসব ক্ষেত্রে সরকার একার পক্ষে সম্ভব নয় প্রাইভেটখাতকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকার নীতি সহায়তা দিবে। আমাদের সরকারি খাতগুলো অর্থনৈতিক বাস্তবায়নে খুব ভালো করছে তা বলবো না। সুতরাং অনেক ব্যক্তিখাত বা উদ্যোক্তা আছে তাদের কে উৎসাহ দিয়ে এবং বিদেশি রিনিয়োগকারী যারা আসবে তাদের কে উপর্যুক্ত পরিবেশ দিতে হবে। নতুন উদ্যোক্তা আনতে হবে।
আর বিদেশিরা আসলে তাদের বিনিয়োগ সহজ করতে হবে। আমাদের নীতির অভাব নেই কিন্তু বাস্তবায়নে ঘাটতি আছে। আমাদের আমলাতন্ত্র খুব দ্রুত কাজ করার মতো সংস্কৃতি তৈরি করেনি। এজন্য সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। শুধু তাদের দোষ দিলেও হবে না। এজন্য সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এসব নিয়ম-নীতিগুলো খুব জটিল এগুলো আরো সহজ করতে হবে। কাউকে দোষ না দিয়ে মিলেমিশে কাজ করার সংস্কৃতি তৈরি করতে হবে। তাহলে চুক্তিগুলোর বাস্তবায়ন সম্ভব।
- সফরটির মাধ্যমে বাংলাদেশ-ব্রুনাই সম্পর্ক কোন উচ্চতায় যাবে বলে প্রত্যাশা করেন?
যখন কোনো সর্বোচ্চ রাষ্ট্রনায়ক সফরে আসেন তার কাছে বদলে যাওয়া বাংলাদেশকে তুলে ধরার সুযোগ আসে। আমাদের সাংস্কৃতিক বিনিয়োগের মাধ্যমে, বিনিয়োগকারীদের কথাবার্তার মাধ্যমে। সরকারের নীতিমালাগুলো তুলে ধরার মাধ্যমে। আমার ধারণা এই সফরে সকল অংশীজন সফলতা ও সক্ষমতার গল্পগুলো, এগিয়ে যাওয়ার গল্প তুলে ধরবেন। গত জুন মাসে আমাদের ব্রুনাই হাই কমিশন অর্থনৈতিক কূটনীতি নিয়ে সেমিনার করেছিল সেখানে অনেক বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
এই সফরে অর্থনৈতিক সক্ষমতা, ব্যবসায়-বাণিজ্য, অর্থনৈতিক কূটনীতি তুলে ধরার সুযোগ আছে। বৈশ্বিক মহামন্দা ধেয়ে আসছে, অর্থনৈতিক সংকট বাড়ছে। তারা আমাদের পাশের দেশ, তাদের মাথাপিছু আয় অনেক। তাদের কাছে বিষয়টি তুলে ধরতে পারলে, সম্পর্ক জোরদার করতে পারলে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। বাণিজ্য ঘাটতি কমবে। বিশেষ করে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। সেদিক থেকে চিন্তা করলে এটি একটি চমৎকার সময়-সুযোগ। তাকে বাঙালির আতিথিতার ঐতিহ্যে বরণ করা হয়েছে। তাকে আমাদের সাফল্যের কথা অবগত করবো। গত ৫০ বছরের বাংলাদেশে যত প্রবৃদ্ধি হয়েছে তার মধ্যে ৭৩ শতাংশই অর্জিত হয়েছে বর্তমান ১২ বছরে। এসব সাফল্যের গল্পই তুলে ধরবো ব্রুনাই দারুসসালামের সুলতান হাসানাল বালকিয়াহর কাছে।
আনন্দবাজার/শহক