ব্রুনাই দারুসসালামের সুলতান হাজি হাসানাল বলকিয়াহ মুইজ্জাদ্দিন ওয়াদ্দৌলাহর বাংলাদেশ সফর আমাদের জন্য একটি আশির্বাদ স্বরূপ। এই সফরটিকে অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন ও আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ সূচনা বলে বিশ্বাস করি। তা ছাড়া উদীয়মান সাউথ এশিয়ান কোপারেশন (সিয়াকো) ভুক্ত (বাংলাদেশ ব্রুনাই ইন্দোনেশিয়া,মালদ্বীপ ও মালয়েশিয়া) দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা-স্বাস্থ্য, পর্যটন, যোগাযোগ ও জনকর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে বিশেষ অবদান রাখবে বলে বিশ্বাস করেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ। তিনি ১৫ অক্টোবর দৈনিক আনন্দবাজারকে দেয়া একান্ত স্বাক্ষাৎকারে এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তার সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো-
- ব্রুনেইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ মুইজ্জাদ্দিন ওয়াদ্দৌলাহ প্রথমবারের মতো তিনদিনের সরকারি সফরে বাংলাদেশে এসেছেন। একজন অর্থনীতিবিদের দৃষ্টিতে সফরটি কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
ব্রুনেইয়ের সুলতানের সফরটি তিনটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ ১. বর্তমানে জ্বালানি (এলএনজি) তথা তেল-গ্যাসের সংকটের কারণে আমরা যে পেরেশানি বা নানান সংকট-সীমাবদ্ধতায় আছি সে প্রেক্ষাপটে ব্রুনাই যেহেতু তেল-গ্যাস সমৃদ্ধ একটি দেশ এ মুহূর্তে এ সফর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ২. ব্রুনাই সুলতানের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সু-সম্পর্ক রয়েছে। তার ছোট বোন শেখ রেহেনার স্বামী অধ্যাপক ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক যখন দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন, তিনি সেখানে মাঝে মাঝে যেতেন। সে সময় থেকেই। তারা বাংলাদেশিদের খুব সম্মান করে থাকে। আমরাও ব্রুনাইকে মুসলিম দেশ হিসেবে সম্মান ও মর্যাদা দিয়ে থাকি। ৩. কিছুদিন আগ পর্যন্ত ব্রুনাই অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথইস্ট এশিয়ান নেশন-আসিয়ানের চেয়ার ছিল। আসিয়ানে ব্রুনাইয়ের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান রয়েছে। আঞ্চলিক সহযোগিতা ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে সাউথ ইস্ট এশিয়ান কো-অপারেশন (সিয়াকো) গঠনের যে প্রয়াস চলমান রয়েছে,বাংলাদেশ তার উদ্যোক্তা- সেখানে আসিয়ানের ৩টি সদস্য দেশ ব্রুনাই, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া অন্যতম সদস্য দেশ। ভূ-বাণিজ্য ও আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে এই জোট খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সফরটিকে অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার ও আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির সহায়ক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিশ্বাস করি।
- ১৯৬৮-২০২২ তথা ৫৪ বছর যাবত তিনি ব্রুনাইয়ের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা এবং অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তার নেতৃত্বের কারিশম্যাটিক পয়েন্ট ও দেশকে উন্নতির ক্ষেত্রে তার চিন্তা-চেতনাগুলো আপনার দৃষ্টিতে কী হতে পারে?
ব্রুনাই সুলতান আধুনিক ও উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি। পরিশিলিত ও চৌকোশ-বুদ্ধিমান তিনি মালয়েশিয়া ও ইংল্যান্ড থেকে পড়ালেখা করেছেন। তার নেতৃত্বের গুণাবলী অসাধারণ। তিনি রাজপরিবার থেকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসলেও তার ব্যক্তিত্ব, গ্রহণযোগ্যতা অসাধারণ এবং তিনি শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব। ব্র্রুনাই তেল ও গ্যাস সমৃদ্ধ একটি আধুনিক দেশ। তিনি দেশটিতে নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে অপ্রতিদ্বন্দ্বি। শুধু রাজপরিবার নয় বরং জনগণ ও সার্বিক উন্নয়নে তার অবদান আছে। তার কারিশম্যাটিক নেতৃত্ব অসাধারণ। আধুনিক রাষ্ট্রনায়োকচিত প্রজ্ঞা এবং আঞ্চলিক নেতৃত্বদানের ক্ষমতাসহ নানান কারণে অগ্রগণ্য ব্যক্তি।
দেশটি মুসলিম প্রধান হওয়ায় সেখানে ইসালামি আইন-কানুন, ইতিহাস-ঐতিহ্যসহ নানান কাজে মূল্যবোধে সমৃদ্ধশালী। এমনকি সেখানকার সাইন ও বিলবোর্ডগুলোও আরবিতে কুরআন-হাদিসের রেফারেন্স দিয়ে লেখা। পাশের দেশ মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া ব্রুনাইকে একটি প্রেক্টিসিং মুসলিম দেশ হিসেবে সম্মান ও সমীহ করে। তাদের অনুপ্রাণিত করেছে। ১৯৬৮-২০২২ সাল তথা অর্ধশতাব্দির বেশি সময় ধরে দেশটিতে তিনি নেতৃত্ব দিয়ে চলছেন। যদিও ব্রুনাই ১৯৮৪ সালে ব্রিটিশের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে। সেই সময়ও তিনি দেশটিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। স্বাধীনতার পর পরই ১৯৮৪ সালের ৫ মে আমরা দেশটিকে স্বীকৃতি দিয়েছি, দূতাবাস খুলেছি ও ব্যবসায়ী কার্যক্রম শুরু হয়। যদিও মাঝখানে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ১৯৯৭ সালে আবার চালু করা হয়।
- এক সময়ের বিশ্বের শীর্ষ সম্পদশালী রাষ্ট্রপ্রধান হাসনানাল বলকিয়াহ। বর্তমানেও বিপুল সম্পদের মালিক, তিনি বিভিন্ন দেশে হোটেলসহ নানান ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে থাকেন। আমাদের দেশে ব্রুনাইয়ের বিনিয়োগ আনতে হলে কী ধরনের উদ্যোগ প্রয়োজন?
ব্রুনাই সুলতান উচ্চ শিক্ষিত এবং বিনিয়োগবান্ধব ব্যক্তি। তার নেতৃত্বের গুণাবলী যা গড়ে উঠেছে তা কিন্তু দেশটির প্রাকৃতিক সম্পদশালীতা থেকে। প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদের উৎস আছে দেশটিতে। সামান্য কিছু জিনিসপত্র প্রয়োজন সেগুলো বাহির থেকে আমদানি করা হয়ে থাকে। আধুনিক অর্থনীতি অন্যান্য বিষয় নিয়ে তার যথেষ্ট পড়াশুনা আছে। তার অনুসন্ধিৎসা থাকার কারণে এই বিচক্ষণতা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তিনি হোটেল ও পর্যটনশিল্পে বিনিয়োগ করছেন। সেই দৃষ্টিতে সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের একটা ভিত্তি পর্যটনকে ঘিরে তৈরি করা যেতে পারে।
বিশেষ করে সাম্প্রতিককালে জ্বালানি, তেল-গ্যাসখাতে যে সংকট যাচ্ছে তা নিরসনে দেশটির সহযোগিতা পেলে ভালো হয়। এসব কারণে তিনি বা ব্রুনাই বাংলাদেশের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তার বাংলাদেশ সফরে সরাসরি দুটি দেশে বিমান চলাচল চুক্তিসহ বাকি দুটি সমঝোতা স্মারক সই হবে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই মুহূর্তে জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় তার সহযোগিতা খুব প্রয়োজন। এটি শুধু সংস্কৃতি ও অর্থনীতি নয় বরং সার্বিক দিক দিয়ে গুরুত্ববহ। সিয়াকো’র পক্ষে ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশের ব্যাবসায়ী একাডেমিক ব্যক্তিত্ব ড. নুর আছেন। তিনি এসব বিষয়ে উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠায় সক্ষম ব্যক্তিত্ব। বলে রাখা ভালো সিয়াকো গঠনের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে ৫টি মুসলিম দেশ তাদের ব্যবসায়-বাণিজ্যসহ অন্যান্য বিষয়গুলোও শেয়ার করতে পারে। সুলতান সম্পদশালী ব্যক্তি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তিনি বিনিয়োগ করছেন। যেসব খাতে বিনিয়োগ করছেন বাংলাদেশে তার সুযোগ ও ক্ষেত্র রয়েছে। বাংলাদেশ সেই বিনিয়োগে উপকৃত হতে পারে।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে তাদের নাবিকদের আমরা সনদপত্র দিতে পারবো। দুটি দেশেই সমুদ্র রয়েছে। আমাদের মেরিন একাডেমি আছে সেখানে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া যাবে। মানবসম্পদ তৈরির ক্ষেত্রে এটি বড় ধরনের অবদান রাখবে। সাম্প্রতিককালে আমাদের অনেক পণ্যও তারা নিচ্ছেন।
- আপনার দৃষ্টিতে ব্রুনাই ও বাংলাদেশের উন্নয়ন সমন্বয় করতে হলে কী করা প্রয়োজন? অর্থাৎ শিক্ষা, জনকমংসংস্থানসহ সবখাতে। তাহলে কী করা দরকার?
আমাদের বাইলেটারেল যোগাযোগ, চুক্তি শুধু মুখে করে রেখে দিলে হবে না। এগুলোকে বাস্তবায়ন করতে হবে। সবসময় সফরের পর বড় একটি যৌথ বিবৃতি দেয়া হয়, আশাবাদ প্রকাশ করা হয় কিন্তু অনেক সময় সেটি বাস্তবে আর দেখা যায় না। কুটনৈতিক অর্থনীতির সাফল্য এখন আর সেই পর্যায়ে থাকার অবকাশ নেই। এমওইউ এর বাস্তবায়ন পর্যায়ে নিতে হবে। বিমান চলাচল, নাবিকদের প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য বিষয় ছাড়াও আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে ব্রুনাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক নতুন একটি দিক খুলে দেবে। কেননা ব্রুনাই আসিয়ানের শক্তিশালী একটি সদস্য। মনে রাখতে হবে আসিয়ানের আপাতত দুর্বল সদস্য মিয়ানমারের কিছু অস্থিতিশীল কাজের কারণে বাংলাদেশ সমস্যায়, মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মিয়ানমারকে মোকাবেলায় বা আয়ত্ত্বে আনতে বাংলাদেশকে আসিয়ান এর কাছাকাছি আসা দরকার।
আর ব্রুনাই সেই ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা করতে পারে। অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন ওআইসিভুক্ত ৫টি সদস্য দেশ নিয়ে সিয়াকো হবে রাজনৈতিক জোট নয় বরং ব্যবসায়ীদের সংগঠন। ৫ দেশের ব্যবসায়ীরা ব্যবসায়-বাণিজ্য-ট্রেড সহজে করতে পারবে সহযোগিতা করতে পারবে। আসিয়ানের সদস্য হতে না পারলেও তাদের পরিবারে ঢোকা গেলে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সববিষয়ে এগিয়ে যাওয়া যাবে, সহযোগিতা মিলবে। তাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ও জ্ঞানের আদান-প্রদান হবে। সিয়াকোর প্লাটফর্ম থেকে ৫ দেশের বিশ্ববিদ্যালয় নেটওয়ার্ক তৈরি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ব্রুনাইয়ের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমাদের সরকারি ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পথে। নেটওয়ার্ক হয়েছে। বাই-লেটারেল সম্পর্ক প্রথমে হবে সেখান থেকে আঞ্চলিক সম্পর্ক তৈরি হবে। এটি ব্রুনাই বা বাংলাদেশকে অবলম্বন করে হতে পারে। আমার ব্রুনাই সফরকালে দেশটির সব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছিলাম। তারা রাজিও হয়েছিল।
২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন সরকারী সফরে ব্রুনাই গিয়েছিলেন তখন ব্রুনাই সুলতান সিয়াকোর ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করে বলেছিলেন আমাদের এক হওয়া দরকার। সিয়াকোর অন্যান্য সদস্য মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপের সহযোগিতা দরকার। আমরা ইন্দোনেশিয়া সফরকালে সেখানকার সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত বিজে হাবিবির কাছে যখন গেলাম তিনি আগ্রহ প্রকাশ করে বলেন, তিনি ব্রুনাইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়াহকে ফোন করে বিষয়টি সম্পর্কে বলে দিতে চেয়েছিলেন অর্থাৎ তাদের হৃদ্যতা কতটা গভীর! এসব দেশের নেতাগুলো এক হতে পারলে আলাদা একটি দিগন্ত খুলে যাবে। আমরা আসিয়ান, সিয়াকো ও সার্কসহ আঞ্চলিক গ্রুপগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের দিকে তাকিয়ে আছি।
- আপনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন ও সাফল্যের উচ্চ চূড়ায় অবস্থান করিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটিকে। আমাদের দেশে সরকারের আয়ের অন্যতম উৎস কর কিন্তু উল্টো ব্রুনাইয়ের জনগণকে সরকার করের টাকা তথা ঘরবাড়ি, কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে অর্থায়ন করে থাকে এটি কী করে সম্ভব হলো? আমরা এক্ষেত্রে তাদের কাছ থেকে কী শিখতে পারি? দেশে কি প্রয়োগ করতে পারি?
রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ব্রুনাইয়ের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ আলাদা। বাংলাদেশ জনসংখ্যা বহুল উন্নয়নশীল দেশ। তার ব্যালেন্স অব পেমেন্ট পরিস্থিতি, অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয়ের উদ্দৌ বিধেয় ভিন্ন। বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ বড় হতে হলে রাজস্ব অবশ্যই আদায় করতে হবে। জনগণের কাছ থেকেই কর নিয়ে সেটি দিয়ে জনগণের জন্য অবকাঠমো ও উন্নয়নমূলকসহ সব কাজ করতে হয়। তবে ব্রুনাইয়ের ক্ষেত্রে বিষয়টি উল্টো সেখানে লোকসংখ্যা খুব কম, মাত্র সাড়ে ৪ লাখ। তাদের পার ক্যাপিটাল ইনকাম ৩১ হাজার মার্কিন ডলারের বেশি। লোকসংখ্যা যেহেতু কম সেখানে জনগণকে সরকারকে কর দেয়ার দরকার নেই বরং সরকারি তথা রাষ্ট্রীয় সম্পদ থেকে পাওয়া অর্থ দিয়েই তাদেও সেবা দান করার সুযোগ রয়েছে।
কেননা দেশটি মনে করে থাকে অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সব কাজ রাষ্ট্রীয়ভাবে করে দিতে হবে ও দিচ্ছে। লিবিয়াতে কর্নের মোয়াম্মের গাদ্দাফী এই কাজ করেছিলেন। তিনি জনগণের জন্য সবকিছু রাষ্ট্রীয়ভাবে করে দিয়েছিলেন। রাষ্ট্রের অঢেল পয়সা আছে। সেই টাকা দিয়েই তারা করেছে। ব্রুনাই তাই করেছে। কেননা প্রাকৃতিক সম্পদ তো রাষ্ট্রীয় সম্পদ। জনগণের সম্পদ। সরকার ব্যবসা করে এখান থেকে যে অর্থ পাচ্ছে তা দিয়েই জনগণের উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। প্রাকৃতিক সম্পদই আভ্যন্তরীণ সম্পদের উৎস। কিন্তু আমাদের দেশে কর রাজস্বই আভ্যন্তরীণ সম্পদের উৎস।
- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৯ সালে ব্রুনাই সফরকালে জ্বালানি তথা তেল-গ্যাস ও এলএনজি নিয়ে কথা বলেছিলেন। জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় তাদের সহযোগিতা নিতে হলে কী করা প্রয়োজন?
সময়ের প্রেক্ষাপটেই প্রয়োজন উঠে আসে। ২০১৯ সালের সমঝোতা স্মারকে জ্বালানি খাতে সহযোগিতার উল্লেখ ছিল ঠিকই কিন্তু সেই অনুযায়ী ৩-৪ বছরে তার আর প্রয়োজন হয়নি। আমরা ব্যবহার করিনি। কাতার, কুয়েত, সৌদি আরব থেকে তেল কিনেছি। এখন করোনা ও তার পরবর্তী ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রভাব জ্বালানিখাত বিপাকে পড়েছে। এখন বিশ্ব ব্যাংকের যে বার্ষিক মিটিং হচ্ছে সেখানে প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের প্রধান খুব কড়া হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। বলেছেন যদি যুদ্ধ থামানো না যায়, যদি এভাবে যুদ্ধ চলতে থাকে তাহলে বিশ্বের অর্থনীতি পঙ্গুত্ববরণ করবে। এখন যুদ্ধ থামানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা হচ্ছে। এখন ব্রুনাইয়ের সঙ্গে জ্বালানি আমদানিতে একটি সরাসরি চুক্তিতে যেতে হবে, যাওয়া দরকার। এটি অনিবার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আমরা সকলকে বিদ্যুৎ যদি না দিতে পারি তাহলে সকল উন্নয়নের চাকা থেমে যাবে। এই আপনাকে একটা ইন্টারভিউ দেবো সেটিই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, পিছিয়ে যাচ্ছি। এমন অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয়ও থেমে যাচ্ছে। আর বড় বিষয় তো আছেই। আমাদের অর্থনীতি পিছিয়ে যাচ্ছে। ২০২৬ সালে মধ্য-আয়ের দেশে পৌঁছাবো তা কি করে সম্ভব হবে? সেখানে যাওয়ার জন্য যেসব কন্ডিশন আমাদের পালন করতে হবে জ্বালানি সংকটের কারণে তা থেমে যাচ্ছে। এতে করে না ঘরকা না ঘাটকা অবস্থা হয়ে যাবে। হয়তো আমাদের কিছু অবকাঠামো তৈরি হচ্ছে তাও শেষ হচ্ছে না। এসব বিষয়গুলো অর্থবহ ও উপযুক্ত করতে জ্বালানি তেলের সংগ্রহ, স্থিরপ্রাজ্ঞ, সুনিশ্চিত ও স্থিতিশীল উৎস প্রয়োজন। এখন ব্রুনাই সেই উৎসটি হতে পারে। অত্যন্ত যৌক্তিকতার সঙ্গে এ পথে অগ্রসর হতে হবে। সেই দৃষ্টিতেও ব্রুনাই সুলতানের সফরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- জনকর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ব্রুনাই আর বাংলাদেশকে কোন স্থানে দেখতে চান?
ব্রুনাইয়ে লোকসংখ্যা কম। সেখানে পর্যটন, শিল্প-কারখানা হচ্ছে। সেখানে লোক লাগবে। আর আমাদেও উদ্বৃত্ত শ্রমসম্পদ আছে আমরা প্রশিক্ষিত জনবল পাঠাতে পারি বেশি করে। কেননা আপনি গতকাল আপনার ‘ব্রুনাই রপ্তানি বাণিজ্য’ প্রতিবেদনে দেখিয়েছেন কখনো কখনো বাংলাদেশ থেকে ব্রুনাইয়ে রপ্তানি এক মার্কিন ডলারে নেমে গেছে। সেখান থেকে এখন অনেক উপরের দিকে যাচ্ছে। রপ্তানি বাণিজ্য ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৭ লাখ মার্কিন ডলারে এসে পৌঁছে। এটি আরো ভালো জায়গায় নিয়ে যাওয়া যাবে। বাংলাদেশ শ্রমিক রপ্তানি ও ব্রুনাই আমদানিকারক দেশ। আমাদের দক্ষশ্রমিক প্রেরণের সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস এবং সেখানে আমাদেও রাষ্ট্রদূত সুমনাও চেষ্টা করে যাচ্ছেন, বাংলাদেশ থেকে বেশি করে জনসম্পদ নেয়ার ব্যাপারে ।
- ব্রুনাই-বাংলাদেশ সম্পর্ককে আপনি কোন জায়গায় নিয়ে যেতে চান বা নাগরিক হিসেবে দেখতে চান?
আমি অত্যন্ত সৌহার্দ্য সমমর্যাদা সম্পন্ন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বিশ্বাসী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্রুনাইকে বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে দেখতে চাই। আঞ্চলিক যোগাযোগ, সংহতি, ব্যবসায়-বাণিজ্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিশেষত আসিয়ানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্রুনাইকে কাজে লাগানোর প্রত্যাশা করতে পারি। এক্ষেত্রে ব্রুনাইয়ের সুলতানের বাংলাদেশ সফর একটি আশির্বাদ। এ সুযোগকে আমরা কাজে লাগাতে পারি। সৌহার্দের সরোবরে ফুটুক সাফল্যের শাপলা।
আনন্দবাজার/শহক