শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উদার হচ্ছে বিশ্বব্যাংক

উদার হচ্ছে বিশ্বব্যাংক
  • জরুরি ঋণ সহায়তায় তৎপরতা বাড়ছে
  • ধেয়ে আসা মন্দায় সুদ হারেও নমনীয়তা

ধেয়ে আসা মন্দার আভাস দিচ্ছে জাতিসংঘ। বৈশ্বিক এই মন্দায় বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি দরিদ্র মানুষের বসবাসকারী ৫৪টি দেশে অর্থনৈতিক সংকট দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে। সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, তিউনিসিয়া, চাদ এবং জাম্বিয়া। এই সংকট সমাধানে প্রয়োজন জরুরি ভিত্তিতে ঋণ সহায়তা। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

এই প্রতিবেদনের আলোকে রূপ পাল্টাচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক। সাধারণত সুদের ভিত্তিইে ঋণ দিতো বিশ্বব্যাংক। এখন অবশ্য ভিন্নরূপে কাজ করতে চাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। সংকটে পড়া সদস্য দেশগুলোকে সুদ ও ঋণ পরিশোধে ছাড় দেওয়ার বিষয়ের কথা ভাবছে সংস্থাটি। তার সঙ্গে দেশগুলোর জন্য আরও ঋণ সহায়তা বাড়ানোর কথাও বলা হচ্ছে।

গত মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বিশ্ব ব্যাংক গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফ বার্ষিক সভায় ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস এ কথা বলেন।

ডেভিড ম্যালপাস বলেন, বৈশ্বিক মন্দা, করোনা সংকট, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন, জ্বালানির অস্বাভাবিক দামবৃদ্ধি ও খাদ্য সংকটে পড়েছে বেশকিছু দেশ। সংকটে পড়া তুলনামূলক দরিদ্র দেশগুলোকে আরও সহায়তা দেওয়া হবে। সেইসঙ্গে ঋণ আদায়ে ছাড় দেওয়ার বিষয়েও আলোচনা চলছে।

বিশ্ব অর্থনীতির হিসাব-নিকেশ উল্ট-পাল্ট হয়ে গেছে মন্তব্য করে ডেভিড ম্যালপাস বলেন, করোনার ধাক্কা সামলে উঠার আগেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এর প্রভাবে ওল্ট-পাল্ট হয়ে গেছে বিশ্ব অর্থনীতির হিসাব-নিকেশ। যার কারণে গেল বছরের তুলনায় এবার গোটা বিশ্বের প্রবৃদ্ধি নেমে আসবে অর্ধেকে।

আরও পড়ুনঃ  ২৫ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্সের প্রত্যাশা

আগামী বছর বিশ্ব অর্থনীতির সংকট আরো বাড়বে। এ বছরই প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ২ শতাংশে নেমে যাবে। এমনই পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ। সেই শঙ্কা থেকে মুক্তি পেতে বাংলাদেশের জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এজন্য মূল্যস্ফীতি যত সম্ভব নিয়ন্ত্রণে রেখে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

প্রতিবেদনে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি) সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, উন্নয়নশীল কয়েক ডজন দেশ ইতিমধ্যে বেশ দ্রুতই গুরুতর আকার ধারণ করা অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। বাস্তবতা বলছে, এই সংকটে বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের ‘নিষ্ক্রিয়তার’ ভয়াবহ ঝুঁকি রয়েছে। অর্থাৎ সংকটে থাকা উন্নত দেশগুলো যে অর্থনৈতিকভাবে সংকটে থাকা দেশের পক্ষে দাঁড়াবে সেই আশাও করা যাচ্ছে না। অবিলম্বে ঋণসহায়তা করা না হলে এই দেশগুলোতে দারিদ্র্যের মাত্রা চরম আকার নেবে।

সংকটে থাকা দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকায় আরও বেশি উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক এবং ওয়াশিংটনে জি-২০ জোটের অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকের আগে প্রকাশিত ইউএনডিপির প্রতিবেদনে তাই দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তায় জোর দেওয়া হয়েছে।

বৈশ্বিক এই অর্থনৈতিক সংকট সম্পর্কে বারবার সতর্ক করে দেওয়া হলেও এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি এবং এ কারণে ঝুঁকি আরও বাড়ছে, জেনেভায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই মন্তব্য করেছেন ইউএনডিপির প্রধান আচিম স্টেইনার। তিনি বলেন, এই সংকট তীব্রতর হচ্ছে এবং বিশ্বের কয়েক ডজন দেশে ছড়িয়ে পড়ার হুমকি রয়েছে।

সংস্থাটি জানায়, দরিদ্র ঋণগ্রস্ত দেশগুলো সম্মিলিত অর্থনৈতিক চাপের সম্মুখীন হচ্ছে এবং অনেকের জন্য তাদের ঋণ পরিশোধ বা নতুন অর্থায়নের ব্যবস্থা করা অসম্ভব বলে মনে হচ্ছে। বাজার পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যাচ্ছে। ধারাবাহিক রাজস্ব ঘাটতি, আর্থিক সংকোচন ও প্রবৃদ্ধির ধীরগতি বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা বাড়িয়ে তুলছে। ইতিমধ্যে কভিড-১৯ মহামারীর সময় উন্নয়নশীল দেশগুলোর বোঝা হালকা করার জন্য ঋণ পরিশোধের স্থগিতাদেশের মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে।

আরও পড়ুনঃ  জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বন্ধে ১৯০ দেশর অঙ্গীকার

প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫৪ দেশের মধ্যে অন্তত ৪৬ দেশ ২০২০ সালে মোট ৭৮২ বিলিয়ন ডলারের সরকারি ঋণ সংগ্রহ করেছে। আর এই ঋণের এক-তৃতীয়াংশের বেশি একাই নিয়েছে আর্জেন্টিনা, ইউক্রেন এবং ভেনেজুয়েলা।

সংবাদটি শেয়ার করুন