ভুটানের পণ্যের শতভাগ রপ্তানি বাংলাদেশ হয়ে
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে বাংলাদেশের। এ সম্পর্ককে অর্থনৈতিক কূটনীতিতে পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে বিষয়টিকে ভিত্তি ধরে অর্থনৈতিক কূটনীতি বিষয়ে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করছে দৈনিক আনন্দবাজার। আজ বাংলাদেশ-ভুটানের ট্রানজিট নিয়ে চতুর্থ প্রতিবেদন।
চীনের সঙ্গে ভুটানের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ হলে ট্রানজিট সুবিধায় ভুটানের ভেতর দিয়ে চীনে পণ্য পরিবহন করবে বাংলাদেশ
বাংলাদেশ-ভুটান ট্রানজিট চুক্তির শর্তাবলী চূড়ান্ত করা হয়েছে। অচিরেই এটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে অনুমোদন পেলে মন্ত্রিপরিষদে পাঠানো হবে। আর মন্ত্রিপরিষদ সভায় অনুমোদন পেলে চলতি বছরের নভেম্বরে চুক্তিটি সম্পাদন হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এফটিএ অনুবিভাগের ১ অধিশাখার যুগ্ম-সচিব মো. আব্দুছ সামাদ আল আজাদ।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের (বিআইডিএস) সিনিয়র রিসার্চার ফেলো মোহাম্মদ ইউনুস ‘আঞ্চলিক ট্রানজিট ও বাংলাদেশ: কতিপয় বিবেচ্য বিষয়’ শীর্ষক গবেষণা নিবন্ধে বলেছেন, বাংলাদেশ ও এ অঞ্চলের সবগুলো স্থলবেষ্টিত দেশে ১৫টি করিডরের বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। তার মধ্যে সড়কপথে ৮টি, রেলপথ ৫টি ও নৌপথ ২টিসহ মোট ১৫টি।
সড়কপথ: বাংলাদেশ-ভারতের স্থল বাণিজ্যের ৭০ শতাংশ হয় বেনাপোল- পেত্রাপোল স্থলবন্দর দিয়ে। পেত্রাপোলের সঙ্গে কলকাতার সড়কটি মাত্র ৫.৫ মিটার চওড়া। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের (অরুণাচল, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মনিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং চীনের ইউনান প্রদেশ) রাজ্যগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি ট্রাক যাতায়াতের সুযোগ নেই। স্ব স্ব সীমান্তে গিয়ে ট্রানশিপমেন্ট করতে হয়। এই পথেই বাংলাদেশ-ভুটানের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বুড়িমারি-চ্যাংড়াবান্দা করিডরের অনুমতি দেয় ভারত। আর বাংলাদেশ-নেপালের মধ্যে বাংলাবান্দা-ফুলবাড়ির অনুমতিও রয়েছে।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও চীনের কুনমিং এর জন্য একটি সাউদার্ন করিডর করা হলে পথের দূরত্ব কমবে ৭০০ কিলোমিটার। কেননা ভারত-বাংলাদেশ চুক্তি না থাকায় চিকেন নেকের মাধ্যমে ১৪০০ কিলোমিটারের পথ পাড়ি দিয়ে কলকাতা বন্দরে এসে আসামের চা রপ্তানি হয় ইউরোপে। অথচ বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহার করলে দূরত্ব কমবে অর্ধেক। কারণ আগরতলা হতে চট্টগ্রামের দূরত্ব ৪০০ কিলোমিটার। একই সুযোগ তৈরি হবে ভুটান-নেপালের ক্ষেত্রেও। এই সুযোগ নিয়ে ভুটান নেপাল-ভারত-বাংলাদেশ-মিয়ানমার-চীনে পণ্য রপ্তানি করতে পারবে।
রেলপথ: ভারতের মালবাহী রেলগুলো বাংলাদেশের সীমান্ত স্টেশনগুলোতে যাতায়াত করে। বাংলাদেশের রেল ইঞ্জিনগুলো ভারতের ওয়াগনগুলোকে টেনে অভ্যন্তরে নিয়ে আসার পর মালামাল ট্রানশিপমেন্ট করে আবার ভারতীয় সীমান্তে নিয়ে যায়। তবে বাংলাদেশের রেল ইঞ্জিনগুলো ভারতের ওয়াগনগুলোকে টানার সক্ষমতা রাখে না।
নৌপথ: নৌপথ হলো এ অঞ্চলে কম খরচে পণ্য পরিবহনের অন্যতম উপায়। ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য চুক্তির ধারা ৫ অনুযায়ী সে বছরের ১ নভেম্বর দু’দেশের মধ্যে ৫ বছর মেয়াদি নৌ-ট্রানজিট ও বাণিজ্য প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়। পরবর্তীতে নানা সময়ে এটি নবায়ন হয়েছে। পণ্যবাহী নৌযানের জন্য অভিন্ন ডকুমেন্টেশন, নিষ্পত্তি ব্যবস্থা, ক্লিয়ারেন্স ও রেমিট্যান্স, অভিন্ন টোল ও মাশুলের বিধান রাখা হয়। বর্তমানে দ্রুত পলি ভরাট হওয়া, নৌযানের কম গতি এবং ভৌত প্রতিবন্ধকতা যেমন দুর্বল পণ্যাগার সুবিধা, বন্দরে প্রবেশের পথ সংকীর্ণ হওয়ার কারণে অভ্যন্তরীণ নৌপথে করিডরের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা নেই বললেই চলে।
মোহাম্মদ ইউনুস লেখেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য ৩টি নোডাল পয়েন্ট বিবেচনা করা হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে উত্তরে গোহাটি, পূর্বে শীলচর ও দক্ষিণে আগরতলা। ১. গোয়াহাটি নোডাল পয়েন্ট থেকে ট্রানজিট করিডর শিলচর ও মেঘালয়ের পূর্ব অংশ থেকে আসা ও সেসব এলাকাগামী ট্রাফিক/ ডাউকি তামাবিলের মাধ্যমে, ২. শিলচর নোডাল পয়েন্ট থেকে ট্রানজিট করিডর সমগ্র মনিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও আসামের দক্ষিণাঞ্চল এবং চীনের ইউনান প্রদেশের অংশ বিশেষ থেকে আসা ও এলাকাগামী ট্রাফিক সুতারকান্দির মাধ্যমে, ৩. আগরতলা নোডাল পয়েন্ট থেকে ট্রানজিট করিডর ত্রিপুরা ও ইউনান প্রদেশের অংশবিশেষ থেকে আসা ও সেসব এলাকাগামী পণ্য পরিবহন করবে। এই তিনটি নোডালের মধ্যে প্রথমটি শুধু সড়ক পরিবহনে, দ্বিতীয়টি সড়ক ও রেল এবং তৃতীয়টি সড়ক, রেল ও নৌপথে পণ্য পরিবহন করবে। আন্তঃরাজ্য ট্রাফিকের ক্ষেত্রে রেল ও সড়কের মাধ্যমে ট্রান্সপোর্ট বেনাপোল ও দর্শনা হয়ে পশ্চিমবঙ্গে যাবে, নৌপথে করিডর মংলা হয়ে কলকাতা বন্দরে যাবে।
ভুটান-নেপালের জন্য আরো ৩টি নোডাল পয়েন্ট বিবেচনা করা হয়েছে ১. ফুন্টশলিং, ২. বীরগঞ্জ ও ৩. কাঠমুন্ডু। বুড়িমারির মাধ্যমে ফুন্টশলিং নোডাল পয়েন্ট থেকে ট্রানজিট করিডর ভুটান এবং আসামের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাসমূহ (ককরাজহর ও ধুবরি) থেকে আসা ও সেসব এলাকাগামী পণ্য পরিবহন করবে। এসব নোডালের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহন হবে রেল ও সড়ক পথে। এক্ষেত্রে ভুটানে শতভাগ পণ্য বাংলাদেশ হয়ে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করবে।
মোহাম্মদ ইউনুস দেখিয়েছেন, নেপাল, ভুটান, চীনের ইউনান প্রদেশসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মোট পণ্য পরিবহন তথা ভারতের অরুণাচল, আসাম, মনিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড ও মেঘালয়ের আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহন হয় ২০ হাজার ২৭৩ টিইইউ ও ২৩ লাখ ৫৪ হাজার ২৫ টন, আভ্যন্তরীণ ১৭ হাজার ৯০৬ টিইইউ ও ৩ কোটি ৮৫ লাখ ৪২ হজার ৬২১ টন এবং মোট আন্তর্জাতিক টিইইউ ১ লাখ ৭৭ হাজার ২০৮ ও আভ্যন্তরীণ ২৫ লাখ ৮৭ হাজার ৪১৪ টিইইউ, সর্বমোট ২৭ লাখ ৬৪ হাজার ৬২২ টিইইউ।
ভুটানের আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহন হয় ৫৮ হাজার টন অর্থাৎ সর্বমোট ৩৮৬৭ টিইইউ। নেপালে ভুটানের আন্তর্জাতিক পণ্য পরিবহন হয় ৩১ হাজার ৭৬৫ টিইইউ ও আভ্যন্তরীণ ৮৫৮ হাজার টন। সর্বমোট ৮৮ হাজার ৯৫৫ টিইইউ।
এদিকে, স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরের (এসওপি) আওতায় ভুটানকে ট্রানজিট সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশ। চুক্তিতে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে রেল ও সড়কপথে সরাসরি পণ্য পরিবহনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সাধারণত চট্টগ্রাম বন্দরে একটি জাহাজের নোঙ্গর থেকে শুরু করে কনটেইনার আনলোড করা ও জাহাজটিতে কনটেইনার লোড করা পর্যন্ত মাশুলগুলোর ধরা হয় ১৯৮৬ সালের গেজেটে। এখনো সেই মাশুলই বিদ্যমান। ২০১৩ সালে মংলা বন্দর আলাদা গেজেটের মাধ্যমে নিজস্ব মাশুল নির্ধারণ করেছে। ট্রানজিট পণ্যের ক্ষেত্রে সেই নির্ধারিত মাশুলই নেয়া হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরে একটি জাহাজ থেকে ৫২ ধরনের মাশুল আদায় হয়। এর মধ্যে ৩১ ধরনের মাশুলই ১৯৮৬ সালের গেজেট অনুযায়ী। ১৪ ধরনের মাশুল ১৯৯০ সালের গেজেট অনুযায়ী। ২০০৭ সালে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারে যুক্ত হয় গুদামজাতকরণ, কন্টেইনার এবং নন-সিপিএ যন্ত্রপাতি ব্যবহার মাশুল। ১৯৮৯, ১৯৯১, ২০০৩ এবং ২০০৪ সালে প্রজ্ঞাপনে কিছু সেবার মাশুল বাড়ানো হয়েছে। এসব মাশুল অর্থমন্ত্রণালয় এবং নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় আলোচনা সাপেক্ষে গেজেট আকারে প্রকাশ করে। আর চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের জন্য ১৯৮৬ সালে প্রথম বিস্তারিত মাশুল কাঠামো নির্ধারণ করা হয়। তবে ১৯৯০ সালে তার বেশ কিছু সেবার মাশুল পুনর্নির্ধারণ করা হয়। ২০০৭ সালে মাশুলে একটি সেবা যোগ করা হয়েছে। বাকি কাঠামোই ১৯৮৬ এবং ১৯৯০ সালের নির্ধারিত মাশুলেই থেকে গেছে।
বন্দরে জাহাজের মাশুল নিয়ে সর্বশেষ ২০০৩ সালের ২৯ জানুয়ারি গেজেট প্রকাশ হয় সেখানে ১৯৯০ সালের প্রকাশিত গেজেটের দরই ধার্য করা আছে। বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) সই হয়েছে ২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর। এই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের ১০০ পণ্য ভুটানে এবং ভুটানের ৩৪ পণ্য বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া শুরু হয়েছে চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে উভয় দেশ প্রয়োজনীয় স্টেটোটরি রেগুলেটরি অর্ডার (এসআরও) জারির মাধ্যমে। ভুটানের সঙ্গে এই চুক্তিটির ফলে দেশে বিনিয়োগ রপ্তানি আয় ও কর্মসংস্থান বাড়বে বলে আশা খাতসংশ্লিষ্টদের। এটি কোনো দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় প্রথম বাণিজ্যচুক্তি।
পিটিএ সইয়ের দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দেন, বাংলাদেশের তিনটি বন্দর চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা ভুটানের জন্য উন্মুক্ত এবং তারা এগুলো ব্যবহার করতে পারবে। এই চুক্তির অধীনে বাংলাদেশের স্থলবন্দর যেমন- বুড়িমারি থেকে ভুটানের ফুলসিলিং পর্যন্ত বা অন্য যেকোনও বন্দর থেকে বন্দর পর্যন্ত বাংলাদেশ, ভুটান ও ভারতের ট্রাকে পণ্য পরিবহন হবে।
২০১৯ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহার করে সড়ক, রেল ও নৌপথে ভারতের ওপর দিয়ে ভুটানের পণ্য পরিবহনের বিষয়ে বাংলাদেশ নীতিগতভাবে সম্মত হয়। খসড়া এসওপিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার নৌ প্রটোকল বা ‘প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড’ (পিআইডব্লিউটিটি) এর যে রুটগুলো রয়েছে সেগুলোর মধ্যে থেকেই ব্যবহার করবে ভুটান। সম্প্রতি ৫-৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে বাংলাদেশকে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির জন্য বিনা শুল্কে ট্রানজিট সুবিধার প্রস্তাব দেয় ভারত। তবে বাংলাদেশকে নির্দিষ্ট বন্দর বা স্থল কাস্টম ব্যবহার করতে হবে। এ ব্যবস্থাকে ট্রানজিট বা ট্রান্সশিপমেন্ট বলা হয়।
সদ্য উদ্বোধন হওয়া চিলাহাটি-হলদিবাড়ি ও বিরল সীমান্ত দিয়ে রেলপথে ভারতের ট্রানজিট সুবিধা নিয়ে ভুটান ও নেপালের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণের সুযোগ আছে। এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ির বাগডোগরা বিমানবন্দর ব্যবহারের সুযোগও নিতে পারবে বাংলাদেশ।
ভুটানে পণ্য রপ্তানি করতে হলে বুড়িমারী সীমান্তে পণ্যবাহী ট্রাক যায়। সেখান থেকে ভারতের প্রায় ৯০ কিলোমিটার ভূখণ্ড পাড়ি দিয়ে জয়নগর সীমান্ত দিয়ে ভুটানে ঢোকে ট্রাক। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে হালুয়াঘাট ও নাকুগাঁও স্থলবন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বর্তমানে দেশটির সঙ্গে বুড়িমারী ও তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। এছাড়া ট্রানজিট সুবিধার আওতায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহারের অনুমতি এবং চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্র বন্দর দিয়ে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানি ও আমদানি করার সুযোগ চাইছে ভুটান। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভুটানকে ট্রানজিটের আওতায় এ দুটি বন্দরও ব্যবহার করতে দেয়া হবে।
বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি হয়েছিল ১৯৮০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠন করলে আবার ২০০৯ সালের ৭ নভেম্বর সেটি সই হয়। চুক্তিটি নবায়ন করা হয় ২০১৪ সালের ৬ ডিসেম্বরে। এ বাণিজ্য চুক্তির প্রটোকলও একইভাবে ১৯৮০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর সই হয় এবং সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৬ ডিসেম্বর সই করা হয়।
ইতিপূর্বে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালকে নিয়ে চার দেশীয় মোটরযান চলাচল চুক্তি (বিবিআইএন) থেকে সরে আসার পর বাংলাদেশের কাছে দ্বিপক্ষীয় ট্রানজিট চুক্তির প্রস্তাব দেয় ভুটান। চুক্তিটি করা হলে বাংলাদেশের জল, স্থল ও আকাশপথ ব্যবহার করে নির্ধারিত ফি-এর বিনিময়ে পণ্য পরিবহন করতে পারবে দেশটি। ভবিষ্যতে চীনের সঙ্গে ভুটানের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ হলে ট্রানজিট সুবিধায় ভুটানের ভেতর দিয়ে চীনে পণ্য পরিবহন করবে বাংলাদেশ।
২০১৩ সালে ভুটানকে ট্রানজিট সুবিধা দিতে সার-সংক্ষেপে সই করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন এ নিয়ে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার লক্ষ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ট্রানজিট এ্যান্ড প্রটোকল গঠন করা হয়। এরপর চার দেশের মধ্যে বিবিআইএন নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ায় দ্বিপক্ষীয় ট্রানজিট সুবিধার বিষয়টি নিয়ে আর কোন আলোচনা হয়নি। তবে ১৯৮০ সালে ১০ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ-ভুটান ট্রানজিট চুক্তি সম্পাদিত হয়। চুক্তির শর্তানুযায়ী এটি আরও ১৮ বছর বহাল থাকার পর ২০০৮ সালে মেয়াদ শেষ হলে ২০০৯ সালে আবার সই হয়।
প্রস্তাবিত রূপরেখা অনুযায়ী বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে সব ধরনের অবকাঠামো ব্যবহারের সুবিধা পাবে দেশটি। এটি হবে ট্রানজিট সংক্রান্ত বহুমুখী সমন্বিত চুক্তি। চুক্তির ফলে রেল, সড়ক, নৌ, বিমান পথ ও বন্দর ব্যবহারের বিনিময়ে বাংলাদেশ পাবে রাজস্ব। এর আগে ২০১৪ সালে ভুটান চুক্তির একটি খসড়া বাংলাদেশকে দেয়। ২০১৩ সালে বাংলাদেশও ভুটানকে চুক্তির একটি খসড়া দিয়েছিল।
দ্বিপক্ষীয় ট্রানজিট চুক্তি সইয়ের বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের আলোকে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর থেকে একটি ফি নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১৮ সালে। সেখানে ১৫ টনের যানের জন্য প্রতি কিলোমিটারে প্রতি টনে ২.৩০৩ টাকা মাসুল ধরার কথা বলা হয়। আর ১৫ টন থেকে ২৫ টন পর্যন্ত যানবাহনের ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটারে প্রতি টনে ২.৫৮৪ টাকা এবং ২৫ টনের বেশি ওজনের যানবাহনের জন্য প্রতি টনের জন্য কিলোমিটার প্রতি ৫.৩৭৯ টাকা আরোপের কথা বলা হয়। ট্রানজিটের ফলে সৈয়দপুর আঞ্চলিক বিমান বন্দর-বাংলাবান্ধা-বুড়িমারি এই তিনটি বন্দর দিয়ে বাণিজ্য ও যোগাযোগ বৃদ্ধি পাবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব মো. আনিসুর রহমান বলেন, মাশুল কত হবে তা সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে নির্ধারণ করা হবে।