ঢাকা | শুক্রবার
২৯শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১৪ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফের লাগাম ছাড়া ডিম

ফের লাগাম ছাড়া ডিম

সহজলভ্য ও জনপ্রিয় খাবার ডিম। প্রোটিন এবং পুষ্টি উপাদানের শক্তির উৎসও বলা হয় এ খাবারকে। তাই প্রতিদিনের খাবার তালিকায় যাদের ডিম রয়েছে, তাঁদের ব্যয় আরো বাড়লো। বর্তমানে রাজধানীতে ডিমের হালি ৫০ টাকা। তবে দুই-তিন সপ্তাহের আগেও ডিমের হালি ছিল ৪০ টাকা।

বাজার অনুসন্ধানে জানা যায়, পাইকারি বাজারের প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১ দশমিক ৩০ পয়সা। কিন্তু খুচরা বাজারে প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২ টাকা। অথচ ক্রেতা পাচ্ছে ১২ টাকা ৫০ পয়সা। অবশ্য এলাকা ভেদে ডিমের দামের ভিন্নতা দেখা যায়।

এদিকে গত ৫ আগস্ট জ্বালানি তেলের (কেরোসিন, ডিজেট, পেট্রোল এবং অকটেন) দাম বাড়ানোর পর সবকিছুর দাম বেড়েছে। হু হু করে সব খাবারের দাম চড়া হয়ে পড়েছে। সবকিছুর সাথে ডিমের দাম বাড়ায় সংসারের ব্যয়ে অস্বস্তিও বাড়ালো। পাইকারী ব্যবসায়ীরা বলছেন, ৫ আগস্টে জ্বালানি নতুন দাম কার্যকরের পর ট্রাকভাড়া বেড়ে যাওয়ায় সবজির কেজিতে ২ টাকা বেশি গুনতে হয়েছিল। তবে খুচরা বাজারে যেভাবে বেড়েছিল, সেটা রীতিমতো অন্যায়। সম্প্রতি সরকার জ্বালানির দাম কমিয়েছে। পূর্বে জ্বালানির দাম বেড়েছিল সর্বোচ্চ ৫২ টাকা। কিন্তু কমিয়েছে ৫ টাকা। যেটা বাড়ানোর তুলনায় কমানো খুবই সামান্য। যা বাজারে কমার ক্ষেত্রে ভুমিকা রাখেনি।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ঘুরে দেখা যায়, গতকাল শুক্রবার ফার্মের মুরগির ডিমের হালি দাম সর্বোচ্চ ৫০ টাকা। সেই হিসেবে একটি ডিমের দাম দাঁড়ায় ১২ দশমিক ৫০ টাকা। কিন্তু এলাকার ভেতরে মুদি দোকানগুলোতে অনেকেই ডিমের হালি আরো বেশি করে রাখছে। তবে আগের সপ্তাহে ডিমের হালি ছিলো ৪৫ টাকা। জ্বালানি তেলের বৃদ্ধির ঘোষণার অজুহাত দেখিয়ে একটি চক্র দফায় দফায় বাড়িয়ে ডিমের হালি ৬৫ টাকার ওপরে নিয়ে গিয়েছিলো। তেলের দাম কমানোর পড়ে ডিমের হালি দাম ৪০ টাকায় নেমে এসেছিলো। সেখান থেকে বেড়ে ফের ৫০ টাকায় দাঁড়ায়। এলাকাভেদে ডিমের দামের ভিন্নতা রয়েছে।

ডিমের দাম বৃদ্ধির প্রসঙ্গে কথা হয় শনিরআখড়ার ডিমের পাইকারি দোকানের ম্যানেজার মাসুমের সঙ্গে। তিনি বলেন, কিছুদিন আগেও ডিমের দাম কম ছিলো। একশ ডিম নয়শ টাকায় বিক্রি করেছি। কিন্তু বর্তমানে একশ ডিম ১১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সেই হিসেবে একটি ডিমের দাম দাঁড়ায় ১১ টাকা ৩০ পয়সা।

ডিমের সরবরাহ কমেছে জানিয়ে একাধিক ডিম ব্যবসায়ী বলেন, বর্তমানে পোলট্রি খাবারের দাম অনেক বাড়তি। অনেকেই ফার্মের মুরগির খাবারের ব্যয় নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। আবার দাম বাড়ায় অনেকেই ডিমপাড়া ফার্মের মুরগি বাজারে বিক্রি করছে। ফলে ডিম সরবরাহ ঘাটতির কারণে ডিমের দাম বেড়েছে। তবে কয়েকদিন সরবরাহের চিত্রটা কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। ডিম বাড়ছে, সামনে ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

ডিমের বেচাকেনা কমে গেছে জানিয়ে আরেক ব্যবসায়ী খোকন বলেন, আড়ৎ থেকে দোকানে ডিম আনার পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। আবার পোলট্রির খাবারের সব কিছুই দাম বেড়েছে। এছাড়া ডিমের সরবরাহ কমেছে। সব মিলিয়ে ডিমের দাম বেড়েছে। তবে সরবরাহ বাড়লে ডিমের দাম কমবে।

কথা হয় ডিম ক্রেতা মোমিনের সাথে। তিনি বলেন, এক হালি ডিম কিনেছি ৫০ টাকা দিয়ে। গত ১২ দিন আগেও এক হালি ডিম কিনেছি ৪০ টাকা দিয়ে। আরেক ক্রেতা জোবায়ের বলেন, বাড়ির সামনে দোকান থেকে এক হালি ডিম কিনেছি ৫২ টাকা দিয়ে। গত কয়েকদিন আগে একই দোকান থেকে এক হালি ডিম কিনেছিলাম ৪৫ টাকা দিয়ে। প্রতি হালি ডিম ৫০ টাকায় বিক্রি করছি জানিয়ে মুদি দোকান সুমন হাওলাদার বলেন, প্রতি ডিম সাড়ে ১২ টাকায় বিক্রি করছি। কিছুদিন আগ ডিমের কম ছিলো।

এদিকে, ডিমের দাম বৃদ্ধি রোধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আন্দোলন চলছে। সেখানে মুরগির ডিমের মূল্যবৃদ্ধির কারণে অনেকেই ৭দিন ডিম কেনা ও খাওয়া থেকে বিরত থাকতে বলছেন। আর তারা পরামর্শ দিচ্ছেন কিছুদিন ডিম খাওয়া বন্ধ রাখলেই ডিমের দাম কমবে। অপরদিকে অনেকেই বলছেন, এভাবে ডিম খাওয়া বন্ধ রাখলে খামারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে ও ডিম উৎপাদন বন্ধ হবে। পরবর্তীতে ডিমের দাম আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। সব মিলিয়ে ডিমের মূল্যবৃদ্ধির কারণ হচ্ছে মুরগির খাদ্য ও ঔষধের অধিক মূল্যবৃদ্ধি এবং যানবাহনের তেলের দাম বাড়ায় অতিরিক্ত গাড়ি ভাড়া আদায়। খাদ্য, ঔষধ এবং তেলের দাম আরো কমলেই কমবে ডিমের দাম, এমনি ধারণা তাদের।

উল্লেখ্য “একটি ডিমের বায়োলজিক্যাল ভ্যালু ৯৬। আদর্শ একটি ডিমের ওজন সাধারণত ৫০ গ্রাম। একটি ডিমে এনার্জি থাকে ১৪৩ ক্যালোরি। কার্বোহাইড্রেট থাকে দশমিক ৭২ গ্রাম, প্রোটিন থাকে ১২ দশমিক ৫৬ গ্রাম, ফ্যাট ৯ দশমিক ৫১ গ্রাম। এছাড়া ফসফরাস থাকে ১৯৮ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ১৩৮ মিলিগ্রাম, জিঙ্ক থাকে ১ দশমিক ২৯ মিলিগ্রাম। এছাড়া আছে ভিটামিন এ ডি ই বি ১২, আয়রন, কোলেস্টেরল, কোলিন ইত্যাদি “

সংবাদটি শেয়ার করুন