ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বৃষ্টির প্রভাবে বাড়লো সবজির দাম

বৃষ্টির প্রভাবে বাড়লো সবজির দাম
  • কমেছে গাজরের, বেড়েছে শিমের
  • বেড়েছে মুরগির দাম, ডিম
  • বাড়েনি আয়, বেড়েছে ব্যয়

পণ্যের দাম বৃদ্ধি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছি, কিছুই বলার নেই। বেঁচে থাকার তাগিয়ে সব সহ্য করে কোনো মতে টেনেটুনে সংসার চালিয়ে যাচ্ছি বলে জানিয়েছেন কাপ্তানবাজারে বাজার করতে আসা ক্রেতা মো. তৌহিদুজ্জামান। আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, চলতি বছরের শুরুতে ২শত টাকায় ৬ থেকে ৭ ধরনের সবজি পাওয়া যেত। বর্তমানে সেই পরিমাণ সবজি কিনতে গুণতে হচ্ছে তিনশ টাকা। মাস হিসেব করলে, যেখানে শুধু সবজিতে আড়াই হাজার টাকা গুণতে হতো সেখানে গুণতে হচ্ছে চার হাজার টাকার বেশি। এতো শুধু সবজির বেলা। অন্যান্য পণ্যের বেলায় দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশ। কিন্তু বেতন বাড়েনি, বরং কমেছে।

একই বাজারে কথা হয় ক্রেতা আলি আকবরের সাথে। দীর্ঘ নি:শ্বাস ছেড়ে করুন কণ্ঠে তিনি বলেন, আমার ছোট দুটি বাচ্চা রয়েছে। একটি সাত বছরের অন্যটি তিন বছরের। তাদের প্রোটিন চাহিদা মেটাতে প্রতিদিনই ডিম থাকা লাগে। সেই ডিমে রয়েছে চড়া দাম। মাসে যেখানে ডিমের পেছনে হাজার টাকা লাগতো, বর্তমানে সেখানে লাগছে দেড় হাজার টাকার বেশি। একইভাবে খরচ বেড়েছে মাছ-মাংসের বেলায়। সবজিতে রয়েছে অতি চড়া দাম। এখন পেঁপে ছাড়া কোন সবজি ৫০ টাকার নিচে পাওয়া যায় না।

তবে দাম বৃদ্ধির প্রসঙ্গে রাজধানীর ব্যবসায়ীরা বলেন, অতিবৃষ্টির প্রভাব পড়েছে নিত্যপণ্যের বাজারে।

দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভারি বৃষ্টির কারণে ক্ষেতের ফসল নষ্ট হওয়ায় বেড়েছে সবজির দাম জানিয়ে রাজধানীর সবজির পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন, গেল সপ্তাহে সবজির দাম বেড়েছে। নতুন করে বেড়েছে ডিম ও মুরগির দামও। একাধিক সবজি খুচরা বিক্রেতা বলেন, বৃষ্টির কারণে অনেক সবজি নষ্ট হয়েছে। ফলে সরবরাহ কমেছে। এর কারনে সবজির দামি বাড়তি। আমাদের কিছু করার নেই। অপরদিকে ক্রেতারা বলেন, বৃষ্টি শুধু উসিলা। সুযোগ পেলেই দাম বাড়ে।

এদিকে দেশের সব প্রতিষ্ঠানের সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার। এদিনে বেশ সময় নিয়ে কমবেশি সবাই একটু গুছিয়ে বাজার করে। যে কারণে অন্যান্য দিনের তুলনায় ছুটির দিনে ক্রেতার চাপ বেশি থাকে। আর ক্রেতাদের অতিরিক্ত চাপের কারণে কাঁচাবাজারে প্রায় সব পণ্যের দাম অন্যদিনের চেয়ে কিছুটা বাড়তি। এই বাড়তি পাওয়ার লোভে ব্যবসায়ীরা এদিনে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের তাজা সবজি ও মাছ-মাংসের পসরা সাজিয়ে বসেন। বরাবারের মতো গতকাল শুক্রবার সবজির বাজারের এমন চিত্র ফুঁটে উঠেছে।

হাতিলপুর কাঁচাবাজারে কথা হয় ডাক্তার রোকনুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, শুক্রবার কিছুটা অলস সময় কাঁটাতে হয়। ফলে এসময় সাপ্তাহিক বাজার করে থাকি। বরাবারের মতো এবারে বাজারে এসেছি। বাজারও করেছি। বর্তমান বাজার দর অতীতের চেয়ে বাড়তি। গত সপ্তাহে (৯ সেপ্টেম্বর) যেখানে তিন হাজার টাকার বাজার করেছি। সেই পরিমাণ বাজার করতে এবারে চার হাজার টাকায় ঠেকেছে।

বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে অধিকাংশ সবজির দাম। দামের দাপটের শীর্ষে রয়েছে শিম। প্রতি কেজি শিম ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। শীর্ষ দামের সঙ্গী হিসেবে রয়েছে টমেটো। প্রতি কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ডিম ও মুরগি। তবে চোখ ধাঁধানো রঙিন সবজি গাজরের ক্ষেত্রে উল্টো গতি। কেজিতে কমেছে ২০ টাকা। গতকাল প্রতি কেজি গাজর ১২০ (চায়না) টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেশি গাজর ১০০ টাকা। যা আগের শুক্রবার বিক্রি হয়েছিলো ১৪০ (চায়না) টাকার বেশি। দেশি গাজর ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছিলো। দামের দিক দিয়ে সঞ্চুরির পথের কাছাকাছিতে রয়েছে বটবটি, করলা, বেগুন (গোল) এবং ঝিঙা। এসব প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে ডাবল সেঞ্চুরির ওপরে থাকা কাঁচা মরিচের দাম নেমেছে অর্ধেকের নিচে। কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজধানীর বাজারগুলো প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ৭০ টাকার মধ্যে ছিল। কিন্তু গতকাল মরিচের দাম বাড়তি লক্ষ্য করা গেছে। প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। মরিচের ঝালের সাথে বাড়লো মুরগির দাম। তবে গরুর মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে, পাইকারি বাজারের তুলনায় খুচরা বাজারের ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। প্রতি কেজিতে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। বেশকিছু সবজিতে পার্থক্য আরো দ্বিগুণ। কাঁচাবাজারে নিম্নবিত্তের নাগালের বাইরে থাকার চেষ্টা করছে। ব্যবসায়ীরা যুক্তি দিচ্ছেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দাম চড়া। উত্তরাঞ্চলে বন্যার কারণে সবজির দাম  সামনে আরো বাড়বে এমন আভাস দিচ্ছেন বিক্রেতারা। তবে রাজধানীর ব্যবসায়ীদের যুক্তির সঙ্গে কোনোভাবেই মেলে না মফস্বলের ব্যাখ্যা। কৃষি পর্যায়ে যে পণ্য ২০ টাকা কেজি রাজধানীতে এলেই ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেড়ে যায় তিনগুণ। সরকারের বিভিন্ন কঠোর তদারকিও সবজির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি। এদিকে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে মিল নেই কমানোর সমন্বয়ও।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, সব সবজিই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। স্থান ভেদে প্রতি কেজি দামে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। চড়া দাম প্রসঙ্গে শনিরআখড়ায় সবজি ব্যবসায়ী আম্বার মুনশি বলেন, এখন শিমের মৌসুম না। কিন্তু বাজারে চাহিদা রয়েছে। চাহিদা থাকায় শিমের দাম কেজি প্রতি দেড়শ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ৩০ টাকা।

শান্তিনগরের কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী রহমান আলী বলেন, চাহিদার তুলনায় কম টমোটো বাজারে রয়েছে। যেহেতু বাজারে সরবরাহ কম, সেহেতু দাম বেশি এটাই স্বাভাবিক। বর্তমানে বাজারে টমোটো প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা। আগের সপ্তাহেও একই দামে বিক্রি হতো। সবজির দাম প্রসঙ্গে একই বাজারের ক্রেতা আব্দুস সালাম বলেন, টমেটোর দাম অনেক বেশি। অবশ্য গাজরের দামে কিছু কমেছে। তবে সেটা দামও অতিরিক্ত। দাম বেড়েছে লতি ও ঝিঙ্গার।

এদিকে সবজির দাম প্রসঙ্গে কাওরান বাজারের ব্যবসায়ী জব্বার বলেন, কাঁচাবাজারে সবজির চাহিদার বেশি। কিন্তু সরবরাহ কম। তাই সবজির বাজার কিছুটা বাড়তি। বেশির ভাগ সবজিতে গত সপ্তাহে একই দাম ছিল। একই বাজারের ক্রেতা নাজমুল ফারুক দুই বাজার ঘুরে মুরগি কিনেছেন। তাতে দামে পার্থক্য খুব ছিল না। তিনি কাঁটাবন বাজারে সোনালি মুরগি কিনতে গেলে বিক্রেতা দাম হাঁকান ৩৪০ টাকা কেজি। পার্শ্ববর্তী আরেকটি বাজারে ৩৪৫ টাকা। একই বাজারের মাংস ব্যবসায়ী জামিল হোসেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় গরুর মাংস কেজিতে কত বাড়লো? তিনি জানান, এখনো বিক্রি করছি ৭০০ টাকায়।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন খোলাবাজার সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে রাজধানীর ডিমের হালি ৫০ টাকা। তবে কিছুদিন আগেও ডিমের হালি ছিল ৪০ টাকা। পাইকারি বাজারের প্রতিটি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১১ দশমিক ৩০ পয়সা। বেশিরভাগ ব্যবসায়ী ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৮০ টাকায়। আগে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পর মুরগির কেজি ২০০ টাকা উঠেছিল। বেড়েছে পাকিস্তানি কক বা সোনালী মুরগির দাম। বর্তমানে মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৪০ টাকায়। খুচরা বাজারে শসা ৬০ টাকা কেজি। ঢেঁড়শের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে দাম অপরিবর্তিত রয়েছে পেঁয়াজ ও আলুর। পেঁয়াজ গত সপ্তাহের মতো কেজিপ্রতি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলুর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। এছাড়া লতি ৭০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০ টাকা, পেঁপের ৩০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, বেগুন ৮০ (গোল) টাকা, বেগুন ৬০ (লম্বা) টাকা, কহি ৫০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ টাকা এবং পেঁপেঁ ৩০ টাকায় কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কচুর ঘাডি, চিচিঙ্গা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। এছাড়া চালকুমড়া ৫০ টাকা, প্রতিটি ফুলকপি ৫০ টাকা, পাতাকপি ৫০ টাকা এবং লাউ ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। তবে সাইজের ওপরে দাম কমবেশি রয়েছে।

রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৪০০ টাকায়। তেলাপিয়া, পাঙাস মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ২০০ টাকায়। শিং মাছের কেজি ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। আর ২০০ তেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে কৈ মাছের কেজি। পাবদা মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা। মাছের মধ্যে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে চিংড়ি ও ইলিশ। চিংড়ির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। এক কেজি ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১৩০০ টাকা। ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ৭৫০ থেকে ১০০০ টাকা। আর ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬৫০ টাকা।

সংবাদটি শেয়ার করুন