জলবায়ু পরিবর্তন ও মানব সৃষ্ট দূর্যোগের মারাত্মক প্রভাব পড়ছে কক্সবাজারে। পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় ভাঙছে সাগর পাড়। ভাঙছে সাগর তীরবর্তী উপকূল। মহেশখালীর মাতারবাড়ী, ধলঘাটা, কুতুবদিয়া আলী আকবর ডেইল, বড়ঘোপ, কৈয়ারবিল, উত্তর ধূরং, পেকুয়ার মগনামা, উজানটিয়া, হরিয়ারদিয়াও টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ পড়েছে ভয়াবহ ভাঙনের কবলে।
বিশেষ করে মাতারবাড়ির জালিয়া পাড়া, হংস মিয়াজির পাড়া, সাইরার ডেইল ও মাঝের ডেইল এলাকার প্রায় তিন কিলোমিটার বেড়িবাঁধে ভয়াবহ ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। গেল এক বছের শতাধিক বসতবাড়ি মসজিদ, মাদ্রাসা ও দুইশ’একরের মতো ফসলি জমি সাগর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এ দিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের রক্ষাকবচ সারিবদ্ধ ঝাউবন ও বিলীন হয়ে যাচ্ছে সাগর গর্ভে। ফলে সংকোচিত হয়ে আসছে পর্যটকদের সৈকত বেলাভূমি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কতৃপক্ষের দাবী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সাগরের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় ভাঙছে সাগর পাড় ও উপকূলীয় অঞ্চল। অন্যদিকে মাবব সৃষ্ট দূর্যোগের কারণে ও উপকূলের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে আমাবশ্যা ও পূর্নিমার জোয়ারে।যে কারণে উপকূলের জানমাল অরক্ষিত হয়ে পড়েছে দিন দিন।কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত সহ টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ ও নাফনদীর উপর নির্মিত বেড়ীবাঁধ , মহেশখালীর ঘটিভাঙ্গা,বডদিয়া,ধলঘাটা, মাতারবাড়ী,পেকুয়ার উজানটিয়া মগনামা,রাজাখালী এবং কুতুবদিয়ার প্রায় ১৫ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে চরম ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ড, তানজির সাঈদ আহমেদ বলেন, সমুদ্র সৈকতের ভাঙন ঠেকাতে বসানো হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বালিভর্তি টিউব বা জিও ব্যাগ। আপদ কালীন এটি হচ্ছে সবচেয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ। এ ক্ষেত্রে বেশ সফলতা পাওয়া যাচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন। বিশেষ করে নাজিরাটেক, সমিতি পাড়া পয়েন্টে বালি ভর্তি টিউব বা জিও ব্যাগ বসানোর কারণে পলি জমে বিশাল বিস্তীর্ণ সৈকত বেলা ভূমি ভরাট হয়েছে। নাজিরাটেক থেকে সমুদ্র সৈকতের কবিতা চত্ত্বর পর্যন্ত প্রায় ৭ কিলোমিটার সৈকত তীরে বসানো হয়েছে জিওব্যাগ।
অন্যদিকে টেকনাফের বিভিন্ন স্থানে বাঁধ ঝুকিতে পড়ায় শিডিউল পরিবর্তন করে আরো উঁচু টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন পানি উন্নয়ন বোর্ড। কুতুবদিয়া ছাড়া মহেশখালীসহ যে সব জায়গা বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ তাতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে ও জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ কর্মকর্তা।
কুতুবদিয়ার ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধই সমতল থেকে ৫ মিটার উঁচুতে। অথচ সমুদ্রের পানির উচ্চতা এর চেয়ে বেশি। তাই এই বাঁধ আরো ২ মিটার উঁচু করে নির্মাণ করার প্রস্তাব রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের। অতি দ্রুততম সময়ে বাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
পরিবেশ বিজ্ঞানী ড, আনচারুল করিম বলেন, উপকূল জুড়ে ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট কেটে তৈরি হচ্ছে চিংড়ি ঘের, সমুদ্র পৃষ্ট থেকে বালি উত্তোলন করে নিম্নাঞ্চল ভরাট করে বহুতল ভবন নির্মাণ, আর জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় সাগরের ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। প্রকৃতির গতিধারাকে কোনোভাবে পরিবর্তন করা যাবে না। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড, পরিবেশ ও বন মন্ত্রালয় যৌথ সার্ভের মাধ্যমে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগ থেকে উপকূলের জানমাল রক্ষা করা সম্ভব।
চট্টগ্রাম উপকূলীয় বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা ড. আবদুর রহমান বলেন, সাগরপাড় রক্ষা করতে লাগানো হয় ঝাউবন ও ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। একটি অসাধুচক্র ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট ধ্বংস করে তৈরি করছেন চিংড়ি ঘের এবং ঝাউবন নিধন করে তৈরি হচ্ছে একের পর এক স্থাপনা। ফলে প্রকৃতি সব কিছু গ্রাস করে নিচ্ছে। নিচ্ছে নিষ্ঠুর প্রতিশোধ।
আনন্দবাজার/শহক