ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিক্রয় চাপে ৬৭ ভাগ কোম্পানির শেয়ারে পতন

বিক্রয় চাপে ৬৭ ভাগ কোম্পানির শেয়ারে পতন
  • লেনদেন কমেছে ৪২৩ কোটি
  • মূলধন বেড়েছে ৭৭৯ কোটি
  • পিই রেশিও ১৪.৫৬ পয়েন্ট
  • উত্থানে সব ধরনের সূচক

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে (রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার) লেনদেন পরিমাণ আগের সপ্তাহ তুলনায় কমেছে। সপ্তাহটিতে ৬৭ ভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর কমেছে। এসময় হাউজগুলোতে ক্রয়ের চেয়ে বিক্রয়ের চাপ বেশি ছিল। তবে গেল সপ্তাহে উত্থান হয়েছে সব ধরনের সূচকের। ডিএসই মূলধন পরিমাণও বেড়েছে।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকটসহ এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং ঘোষণার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল পুঁজিবাজারে। এর কারণে বড় ধরনের দরপতন হয়েছিল পুঁজিবাজারে। আরও বলেন, লোডশেডিং ঘোষণার দিন ১৮ জুলাই ডিএসইতে বড় পতন শুরু হয়। সেই পতন আরো বড় আকারে দেখা দেয় পরের দিন ১৯ জুলাই। ওই দুইদিনের তুলনায় পরের দুইদিনের (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) পতন আকার কিছুটা ছোট হয়ে আসে। অবশ্য পরের সপ্তাহে পুঁজিবাজার উত্থানে ফিরে এসেছিল। এরপর গেল সপ্তাহে লেনদেন ও অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর কমছে। তবে বেড়েছে সূচক সহ মূলধন পরিমান।

ডিএসইর সূত্রে জানা যায়, গেল সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৯ হাজার ৯১ কোটি ২২ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৯ হাজার ৫১৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ৪২৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা বা ৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৮১৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে গড়ে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৯০২ কোটি ৯০ লাখ টাকা। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৩৯৫টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৬৮টির, দর কমেছে ২৬৫টি বা ৬৭ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ ও অপরিবর্তিত রয়েছে ৫৪টির কোম্পানির। লেনদন হয়নি ৮টি কোম্পানির শেয়ার।

আরও জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে ডিএসইর পুঁজিবাজারের মূলধন দাঁড়ায় ৫ লাখ ২২ হাজার ৬৬৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। গত ১ সেপ্টেম্বর মূলধন ছিল ৫ লাখ ২১ হাজার ৮৮৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে মূলধন বেড়েছে ৭৭৯ কোটি ১ লাখ টাকা। সপ্তাহে ডিএসইর পুঁজিবাজারে সব ধরনের সূচক পতনে লেনদেন শেষ হয়। এক সপ্তাহে ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫১ দশমিক ৪১ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৫৬০ দশমিক শূন্য ২ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই৩০ সূচক ৭০ দশমিক ৫২ পয়েন্ট এবং শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ৩২ দশমিক শূন্য ৬ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ২ হাজার ৩৭৬ দশমিক ১৭ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৪৪১ দশমিক ২৫ পয়েন্টে।

এদিকে “গেল সপ্তাহের শেষে ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১৪ দশমিক ৫৬ পয়েন্টে। যা আগের সপ্তাহের শেষে ছিল ১৪ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পিই রেশিও বেড়েছে দশমিক শূন্য ৩ পয়েন্ট বা দশমিক ২৪ শতাংশ।”

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ১৫ পয়েন্ট ছাড়ালেই তা বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। এ হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। সেই হিসেবে গত বৃহস্পতিবার ডিএসইর পিই দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৫৬ পয়েন্টে। আগের সপ্তাহ থেকে বাড়লেও পিই রেশিও হিসাবে বিনিয়োগ নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে।

গেল সপ্তাহে ‘এ’ ক্যাটাগরির ৯০ ভাগ কোম্পানির শেয়ার টপটেন লেনদেনে অবস্থান করেছে। ‘এন’ ক্যাটাগরির ১০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর টপটেন লেনদেনে রয়েছে। সপ্তাহটিতে ‘এ’ ক্যাটাগরির ৭০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার টপটেন গেইনারে অবস্থান করেছে। ‘বি’ ক্যাটাগরির ৩০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর টপটেন গেইনারে রয়েছে। অপরদিক টপটেন লুজারে ‘এ’ ক্যাটাগরির ৮০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার অবস্থান করেছে। সপ্তাহে ‘বি’ ক্যাটাগরির ২০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর টপটেন লুজারে অবস্থান করেছে।

সপ্তাহটিতে মোট লেনদেনের ৩৪ দশমিক ২০ শতাংশ শেয়ার ১০ কোম্পানির দখলে রয়েছে। ওইসব কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ারে। কোম্পানিটি একাই মোট শেয়ারের ৭ দশমিক ২৯ শতাংশ লেনদেন করেছে। এছাড়া ওরিয়ন ফার্মা ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ, লার্ফাজ-হোল্ডসিম ৪ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, জেএমআই হসপিটাল (এন ক্যাটাগরি) ৩ দশমিক ২৪ শতাংশ, নাহি এ্যালুমিনিয়াম ২ দশমিক ৬৮ শতাংশ, ইস্টার্ন হাউজিং ২ দশমিক ৫৭ শতাংশ, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ২ দশমিক ১৫ শতাংশ, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ২ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ, ন্যাশনাল পলিমার ১ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং ওরিয়ন ইনফিউশন ১ দশমিক ৮০ শতাংশের শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারের ‘এ’ ক্যাটাগরির শেয়ার ‘বি’ ও ‘জেড’ ক্যাটাগরির থেকে তুলনামূলক ভালো কোম্পানি। নিয়ম অনুসারে, যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে তার ঊর্ধ্বে লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নিচে থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারা ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ নিচে থেকে শুরু জিরো লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই ‘জেড’ ক্যাটাগরি কোম্পানির শেয়ার। এছাড়া এন ক্যাটাগরি নতুন কোম্পানির শেয়ার। যেগুলোর পুঁজিবাজারের লেনদেন শুরু হয়েছে কিন্তু বছর পার হয়নি, সেইগুলো ‘এন’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে।

গেল সপ্তাহটিতে ‘এ’ ক্যাটাগরির ওরিয়ন ইনফিউশনের শেয়ার দর টপটেন গেইনারের শীর্ষে ওঠে এসেছে। সপ্তাহটিতে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৩৫ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। গেইনারে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর হলো- কহিনূর কেমিক্যাল, বিকন ফার্মা, ওরিয়ন ফার্মা, সোনালি আঁশ, সি পার্ল বিচ, ইবনে সিনা ফার্মা, দেশ গার্মেন্টস, ফাইন ফুডস এবং সান লাইফ ইন্স্যুরেন্স। এর মধ্যে কহিনূর কেমিক্যাল ৩২ দশমিক ৮২ শতাংশ, বিকন ফার্মা ২৬ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, ওরিয়ন ফার্মা ২০ দশমিক ১৩ শতাংশ, সোনালি আঁশ ১৮ দশমিক ২১ শতাংশ, সি পার্ল বিচ (‘বি’ ক্যাটাগরি) ১৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ, ইবনে সিনা ফার্মা ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ, দেশ গার্মেন্টস ১৩ দশমিক ১৫ ১৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ, ফাইন ফুডস (‘বি’ ক্যাটাগরি) ১৩ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ এবং সান লাইফ ইন্স্যুরেন্স (‘বি’ ক্যাটাগরি) ১০ দশমিক ৬০ শতাংশ করে শেয়ার দর বেড়েছে।

এছাড়া ‘এ’ ক্যাটাগরির ফনিক্স ফাইন্যান্সের শেয়ার দর টপটেন লুজারের শীর্ষে ওঠে এসেছে। গেল সপ্তাহটিতে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ২০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। লুজারে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর হলো- ইস্টার্ন হাউজিং, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, এসইএমএল এফবিএলএসএল গ্লোড ফান্ড, রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস, ন্যাশনাল টি, এপেক্স ফুডস, পেপার প্রসেসিং এন্ড প্যাকেজিং, প্রাইম ফাইন্যান্স এবং ইবিএল এনআরবি ফান্ড। এর মধ্যে ইস্টার্ন হাউজিং ১৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল (‘বি’ ক্যাটাগরি) ১৬ দশমিক ৫২ শতাংশ, এসইএমএল এফবিএলএসএল গ্লোড ফান্ড ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ, রতনপুর স্টিল রি-রোলিং মিলস ১৪ দশমিক ২৯ শতাংশ, ন্যাশনাল টি ১৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ, এপেক্স ফুডস ১৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ, পেপার প্রসেসিং এন্ড প্যাকেজিং ১১ দশমিক ৯৭ শতাংশ, প্রাইম ফাইন্যান্স (‘বি’ ক্যাটাগরি) ১১ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং ইবিএল এনআরবি ফান্ড ১০ দশমিক ৯৬ শতাংশ করে শেয়ার দর কমেছে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন