মিঠুর (৪৫) বাড়ি জয়পুরহাট সদরে। ২০১৪ সালে বাড়ির পাশে ৫ কাঠা জমিতে গড়ে তুলেছেন পোল্ট্রি খামার। সেই শুরু। এখন সেই ব্যবসা থেকেই চলে তার সংসার। শুধু মিঠু নয়। পুরো জয়পুরহাট জেলায় পোল্ট্রিশিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ২০ হাজারের বেশি মানুষ। এতো কর্মসংস্থান সৃষ্টি পেছনে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) জয়পুরহাটের অবদান ব্যাপক। শুধু পোল্ট্রি শিল্প নয় জয়পুরহাট বিসিকের অবদানে জয়পুরহাটে প্রায় ৩০ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে।
জয়পুরহাট শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে দাদড়া জন্তিগ্রাম এলাকায় ১৫ একর জমিতে বিসিক শিল্প এলাকা গড়ে উঠে। ১৯৯১ সালে জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়। ১৯৯৬ সালে ১১১টি প্লট তৈরি করে তা উদ্যোক্তাদের মধ্যে বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০০৭ সালে সব কটি প্লটই বরাদ্দ হয়ে যায়। সেই থেকে জয়পুরহাট জেলায় পোল্ট্রি শিল্পের প্রসার ঘটতে থাকে।
বর্তমানে ১১১টি প্লটের মধ্যে উৎপাদনরত শিল্প ইউনিটের সংখ্যা ৪০টি। যার মধ্যে কৃষিভিত্তিক শিল্প কারখানা রয়েছে ১৪টি। পোলট্রি ফিডসহ খাদ্য সহায়ক শিল্প রয়েছে ১৯টি। পশু-পাখির খাবার ভিটামিন তৈরি ও রি-প্যাকেটিং শিল্প কারখানা রয়েছে ২টি। হালকা প্রকৌশল শিল্প রয়েছে ২টি। তুলা তৈরি শিল্প কারখানা ১টি। প্রিন্টিং প্রেস ১টি, হোমিও ওষুধ তৈরি ও রি-প্যাকিং একটি। পূর্ণ নির্মানাধীন শিল্প ইউনিটের সংখ্যা ২টি।
ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান জাহাঙ্গীর। জয়পুরহাট বিসিক শিল্প এলাকায় হেচারী ও ফিডমিলের কারখানা আছে তার। তিনি জানান, বিসিক তৈরি হওয়ার পর থেকে এ জেলায় পোল্ট্রিশিল্পের বিপ্লব ঘটে। বিসিক এলাকায় পোল্ট্রি সংশ্লিষ্ট অনেক কারখানা আছে। ওইসব কারখানা জেলার চাহিদা পুরণ করে আশেপাশের জেলাগুলোতেও উৎপাদিত পণ্য দিয়ে থাকে। শুধু তাই না, এসব শিল্প কারখানার কারণে হাজার হাজার বেকার যুবকের কর্মসংস্থানও হয়েছে।
ব্যবসায়ী মনিরুজ্জামান জাহাঙ্গীর আরো জানান, তাদের ব্যবসাগুলো বেশ ভালোই চলছিল। কিন্তু করোনার কারণে অনেক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে তাদের। এতে পোল্ট্রিশিল্পের অনেক ক্ষতি হয়েছে। অনেক ব্যবসায়ীদের ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারছেন না। সরকারিভাবে যদি আর্থিক সহযোগিতা বা প্রনোাদনার ব্যবস্থা করা হয় তাহলে ক্ষতিগ্রস্থ শিল্প কারখানাগুলো আবার গতি পাবে।
ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, বিসিক শিল্প এলাকার কারণেই জয়পুরহাট অনেকখানি এগিয়ে গেছে। তবে বর্তমান সময়ে চাহিদা বেড়েছে। অনেকেই উদ্যোক্তা হতে আগ্রহী। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা হিসেবে ছোট ছোট শিল্পকারখানা তৈরি করতে চান অনেকেই। কিন্তু বিসিকে নতুন প্লট না পাওয়ায় তারা উদ্যোগ নিতে পারছেন না। বিসিকের পরিধি আরো বেশি বাড়ানোর প্রয়োজন বলে ব্যবসায়ীরা মনে করেন।
জয়পুরহাট বিসিকের শিল্পনগরী কর্মকর্তা আবু হাশেম জানান, বিসিক শিল্প এলাকায় বরাদ্দকৃত প্লট ১১১টি। একটি প্লটও ফাঁকা নেই। বর্তমান সরকার শিল্প কারখানা তৈরি করতে নানান ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করে যাচ্ছেন। এ সরকার উদ্যোক্তাবান্ধব সরকার। উদ্যোক্তাদের যে কোন সমস্যার সমাধান করতে বিসিক কর্তৃপক্ষ সবসময় প্রস্তুত।
আনন্দবাজার/শহক