শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মধুপুরের আনারসে মধু

মধুপুরের-আনারসে-মধু

আনারসের রাজধানীখ্যাত টাঙ্গাইলের মধুপুরে বিষমুক্ত আনারস উৎপাদনের ফলে চাহিদা বেড়েছে আগের চেয়ে বহুগুণ। দেশের বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপে। বিশেষ করে গড় অঞ্চলে উৎপাদিত জলডুগী বা জায়ন্টকিউ ও কলম্বিয়া জাতের আনারসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। চলতি বছরে ৫ মেট্রিক টনের বেশি রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

চাষিরা বলছেন, মধুপুরের পাশাপাশি ঘাটাইল ও সখীপুর উপজেলার পাহাড়িয়া এলাকায় কয়েক বছর ধরে প্রচুর আনারসের চাষ হচ্ছে। ফলন যেমন বেশি হচ্ছে তেমনি ভালো দামও পাচ্ছেন। চাষিরা আরও বলছেন, চলতি বছরে টানা দাবদাহের কারণে ব্যাপক চাহিদার পাশাপাশি আনারসের দাম বেড়েছে। ফলে চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে। আগামীতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়বে বলে মনে করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি বছরে মধুপুর অঞ্চলে আনারসের চাষ হয়েছে ৬ হাজার ৫৮২ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ৬১ হাজার ৬০০ টন। বিক্রির লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে আড়াইশ কোটি টাকার বেশি। চাষিরা বলছেন, এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে। একইভাবে বিক্রির টার্গেটও পূরণ হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আশা করছেন মধুপুরে এবার আনারস উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। চলতি বছরে ফিলিপাইন থেকে আনা আন্তর্জাতিকমানের এমডি-২ জাতের প্রায় ছয় লাখ আনারসের চারা চাষিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। এসব আনারসের সংরক্ষণ সময় এক মাসের মতো। যে কারণে এসব আনারস বিদেশে রপ্তানি করা সুবিধাজনক।

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, অতিমাত্রায় হরমোন ও ক্ষতিকারক ঔষধ প্রয়োগ বন্ধে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। তাছাড়া প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এসব ঔষধের ক্ষতিকারক দিক আনারস চাষিদের মাঝে তুলে ধরা হচ্ছে। একইসঙ্গে বিষমুক্ত আনারস চাষে ব্যাপকভাবে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। গত কয়েক বছরের চেষ্টার ফলে চাষিরা বিষাক্ত কেমিকেল ব্যবহার থেকে বেরিয়ে এসেছেন। এসব কারণে গেল বছরের চেয়ে উন্নতমানের আনারসের উৎপাদন এবার বেশি হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  কীটনাশকে পুড়লো পেঁয়াজ বীজ

স্থানীয় সূত্রমতে, বর্তমানে আনারসের উৎপাদন মৌসুম। গড়াঞ্চলের চাষি, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা ভোর থেকে রাত অবধি ব্যস্ত সময় পার করছেন। মধুপুরের জলছত্র, মোটের বাজার, গারোবাজার ও সাগরদিঘিতে আনারসের হাটে জমে উঠেছে বেচাকেনা। সকাল থেকেই সাইকেল, ভ্যান, রিকশা, অটোবাইক আর ঘোড়ার গাড়িতে করে বাজারে আনারস নিয়ে আসছেন চাষিরা। দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে আসা পাইকাররা আনারস করে ট্রাক বোঝাই করে নিয়ে যাচ্ছেন।

বাজারের ব্যবসায়ী আর চাষিদের কথা বললে তারা জানান, এক একটি আনারাস উৎপাদনে ১৭ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত খরচ পড়ে। বাজারে ছোট আকারের আনারস পাইকারিতে বেচাকেনা হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা পর্যন্ত। তাছাড়া মাঝারি আকারের আনারস বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। অন্যদিকে বড় আনারসের দাম অনেক বেশি। প্রতিটি বিক্রি হচ্ছে পাইকারিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। তবে এসব আনারস রাজধানীতে এলেই দাম চড়ে যায়। এক একটি বড় আনারস ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হয়।

মধুপুরসহ গোটা টাঙ্গাইল জেলায় উন্নতজাতের আনারস উৎপাদনের মধ্য দিয়ে স্থানীয় অর্থনীতির বদল ঘটছে। আনারসের চাষ আর বাজার ঘিরে কর্মসংস্থান বাড়ছে। বিশেষ করে আনারস উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, বেচাকেনা, পরিবহন ঘিরে অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে।

  • প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন