ঢাকা | বুধবার
২৬শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১২ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মূলধন বেড়েছে ৮৬৪৫ কোটি টাকা

মূলধন বেড়েছে ৮৬৪৫ কোটি টাকা

লেনদেন–

বেড়েছে ৩৭ শতাংশ
পিই রেশিও ১৪.৫৩
বেড়েছে ৬৩ শতাংশ
টপটেন শতভাগ ‘এ’

দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে (রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার) লেনদেন পরিমাণ আগের সপ্তাহ তুলনায় বেড়েছে ২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা বা ৩৭ শতাংশ। গেল সপ্তাহে উত্থান হয়েছে সব ধরনের সূচকের। সপ্তাহটিতে ৬৩ ভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। এসময় হাউজগুলোতে ক্রেতার চাপ বেশি ছিল। সপ্তাহে ডিএসই মূলধন পরিমাণ আগের সপ্তাহের চেয়ে বেড়েছে ৮ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা বা ১ দশমিক ৬৮ শতাংশ। সব মিলিয়ে গেল সপ্তাহে পুঁজিবাজার উর্ধ্বমুখী ছিল।

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকটসহ এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং ঘোষণার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল পুঁজিবাজারে। এর কারণে বড় ধরনের দরপতন হয়েছিল পুঁজিবাজারে। আরও বলেন, লোডশেডিং ঘোষণার দিন ১৮ জুলাই ডিএসইতে বড় পতন শুরু হয়। সেই পতন আরো বড় আকারে দেখা দেয় পরের দিন ১৯ জুলাই। ওই দুইদিনের তুলনায় পরের দুইদিনের (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) পতন আকার কিছুটা ছোট হয়ে আসে। এরপর সেই জায়গা থেকে পুঁজিবাজার উত্থানে ফিরে এসেছে। বিভিন্ন মহলের শত চেষ্টায় পুঁজিবাজারে এ ধরনের উত্থানে স্বস্তিতে বিনিয়োগকারীরা।

ডিএসইর সূত্রে জানা যায়, গেল সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৯ হাজার ৫১৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৬ হাজার ৯৩৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ৩৭ দশমিক ২২ শতাংশ বা ২ হাজার ৫৮০ কোটি ৬১ লাখ টাকা। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৯০২ কোটি ৯০ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ৩৮৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৩৯৫টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ২৪৯টির, দর কমেছে ৯৩টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ৫৬টির কোম্পানির। লেনদন হয়নি ৭টি কোম্পানির শেয়ার।

আরও জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে ডিএসইর পুঁজিবাজারের মূলধন দাঁড়ায় ৫ লাখ ২১ হাজার ৮৮৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। গত ১ সেপ্টেম্বর মূলধন ছিল ৫ লাখ ১৩ হাজার ২৪০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে মূলধন বেড়েছে ৮ হাজার ৬৪৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। সপ্তাহে ডিএসইর পুঁজিবাজারে সব ধরনের সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ হয়। এক সপ্তাহে ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৫৩ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৩০৫ দশমিক ৬৬ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই৩০ সূচক ৩৮ দশমিক ৩১ পয়েন্ট এবং শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ১৮ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ২ হাজার ৩০৫ দশমিক ৬৬ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৪০৯ দশমিক ১৯ পয়েন্টে।

এদিকে গেল সপ্তাহের শেষে ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১৪ দশমিক ৫৩ পয়েন্টে। যা আগের সপ্তাহের শেষে ছিল ১৪ দশমিক ১৩ পয়েন্ট। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পিই রেশিও বেড়েছে দশমিক ৪০ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৮৪ শতাংশ।”

পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ১৫ পয়েন্ট ছাড়ালেই তা বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। এ হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। সেই হিসেবে গত বৃহস্পতিবার ডিএসইর পিই দাঁড়িয়েছে ১৪ দশমিক ৫৩ পয়েন্টে। আগের সপ্তাহ থেকে বাড়লেও পিই রেশিও হিসাবে বিনিয়োগ নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে।

গেল সপ্তাহে ‘এ’ ক্যাটাগরি শতভাগ কোম্পানির শেয়ার টপটেন লেনদেনে অবস্থান করেছে। সপ্তাহটিতে ‘এ’ ক্যাটাগরির ৮০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার টপটেন গেইনারে অবস্থান করেছে। ‘বি’ ক্যাটাগরির ২০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর টপটেন গেইনারে রয়েছে। অপরদিক টপটেন লুজারে ‘এ’ ক্যাটাগরির ৪০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার অবস্থান করেছে। সপ্তাহে ‘বি’ ক্যাটাগরির ৫০ শতাংশ, ‘জেড’ ক্যাটাগরির ১০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর টপটেন লুজারে অবস্থান করেছে।

সপ্তাহটিতে মোট লেনদেনের ২৬ দশমিক ৬৯ শতাংশ শেয়ার ১০ কোম্পানির দখলে রয়েছে। ওইসব কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ারে। কোম্পানিটি একাই মোট শেয়ারের ৫ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ লেনদেন করেছে। এছাড়া ওরিয়ন ফার্মা ৩ দশমিক ৮২ শতাংশ, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ, মালেক স্পিনিং ২ দশমিক ৫২ শতাংশ, লার্ফাজ-হোল্ডসিম ২ দশমিক ৫১ শতাংশ, ইস্টার্ন হাউজিং ২ দশমিক ৩৭ শতাংশ, ফরচুন সুজ ২ দশমিক ২৩ শতাংশ, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ, ম্যাকসন ১ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং আইপিডিসি ফাইন্যান্স ১ দশমিক ৬৪ শতাংশের শেয়ার লেনদেন হয়েছে।

উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারের ‘এ’ ক্যাটাগরির শেয়ার ‘বি’ ও ‘জেড’ ক্যাটাগরির থেকে তুলনামূলক ভালো কোম্পানি। নিয়ম অনুসারে, যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে তার ঊর্ধ্বে লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নিচে থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারা ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ নিচে থেকে শুরু জিরো লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই ‘জেড’ ক্যাটাগরি কোম্পানির শেয়ার। এছাড়া এন ক্যাটাগরি নতুন কোম্পানির শেয়ার। যেগুলোর পুঁজিবাজারের লেনদেন শুরু হয়েছে কিন্তু বছর পার হয়নি, সেইগুলো ‘এন’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে।

সপ্তাহটিতে ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার টপটেন লেনদেনে দাপট ছিল। সপ্তাহটিতে লেনদেন শীর্ষে ছিল বেক্সিমকোর শেয়ার। প্রতিষ্ঠানটি লেনদেন করেছে ৪৭৭ কোটি ১১ লাখ টাকা। বেক্সিমকো ছাড়া টপটেন লেনদেনে ‘এ’ ক্যাটাগরির অন্য কোম্পানিগুলো হলো- ওরিয়ন ফার্মা, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন, মালেক স্পিনিং, লার্ফাজ-হোল্ডসিম, ইস্টার্ন হাউজিং, ফরচুন সুজ, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ম্যাকসন স্পিনিং এবং আইপিডিসি ফাইন্যান্স। এর মধ্যে ওরিয়ন ফার্মা ৩৬৩ কোটি টাকা, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশন ২৬৫ কোটি টাকা, মালেক স্পিনিং ২৩৯ কোটি টাকা, লার্ফাজ-হোল্ডসিম ২৩৮ কোটি টাকা, ইস্টার্ন হাউজিং ২২৫ কোটি টাকা, ফরচুন সুজ ২১২ কোটি টাকা, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ১৮৫ কোটি টাকা, ম্যাকসন স্পিনিং ১৬৯ কোটি টাকা এবং আইপিডিসি ফাইন্যান্স ১৫৬ কোটি টাকার টাকার শেয়ার লেনদেন হরেছে।

‘এ’ ক্যাটাগরির ওরিয়ন ইনফিউশন শেয়ার দর টপটেন গেইনারের শীর্ষে ওঠে এসেছে। সপ্তাহটিতে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ৪১ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ। গেইনারে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর হলো- ইস্টার্ন হাউজিং, এডভেন্ট ফার্মা, বসুন্ধরা পেপার, আমান কটন, এপেক্স ফুডস, ন্যাশনাল টি, মেট্রো স্পিনিং, ন্যাশনাল পলিমার এবং মালেক স্পিনিং। এর মধ্যে ইস্টার্ন হাউজিং (‘এ’ ক্যাটাগরি) ৩৮ দশমিক ৯০ শতাংশ, এডভেন্ট ফার্মা (‘বি’ ক্যাটাগরি) ২৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ, বসুন্ধরা পেপার (‘এ’ ক্যাটাগরি) ২৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ, আমান কটন (‘এ’ ক্যাটাগরি) ২০ দশমিক ৫১ শতাংশ, এপেক্স ফুডস (‘এ’ ক্যাটাগরি) ২০ দশমিক ৪৬ শতাংশ, ন্যাশনাল টি (‘এ’ ক্যাটাগরি) ১৯ দশমিক ৬৪ শতাংশ, মেট্রো স্পিনিং (‘বি’ ক্যাটাগরি) ১৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ন্যাশনাল পলিমার (‘এ’ ক্যাটাগরি) ১৭ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং মালেক স্পিনিং (‘এ’ ক্যাটাগরি) ১৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ করে শেয়ার দর বেড়েছে।

এছাড়া ‘বি’ ক্যাটাগরির ইউনিয়ন ক্যাপিটাল শেয়ার দর টপটেন লুজারের শীর্ষে ওঠে এসেছে। সপ্তাহটিতে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ১৪ দশমিক ৮১ শতাংশ। লুজারে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর হলো- সান লাইফ ইন্স্যুরেন্স, বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার, জুট স্পিনার্স, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন, আইপিডিসি ফাইন্যান্স, সোনারগাঁ টেক্সটাইল, পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, পদ্মা ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং প্রিমিয়ার লিজিং। এর মধ্যে সান লাইফ ইন্স্যুরেন্স (‘বি’ ক্যাটাগরি) ১০ দশমিক ৮৬ শতাংশ, বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার (‘এ’ ক্যাটাগরি) ৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ, জুট স্পিনার্স (‘জেড’ ক্যাটাগরি) ৮ দশমিক ৮২ শতাংশ, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন (‘এ’ ক্যাটাগরি) ৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ, আইপিডিসি ফাইন্যান্স (‘এ’ ক্যাটাগরি) ৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ, সোনারগাঁ টেক্সটাইল (‘বি’ ক্যাটাগরি) ৭ দশমিক ৪১ শতাংশ, পেপার প্রসেসিং অ্যান্ড প্যাকেজিং (‘এ’ ক্যাটাগরি) ৭ দশমিক ২১ শতাংশ, পদ্মা ইসলামি লাইফ ইন্স্যুরেন্স (‘বি’ ক্যাটাগরি) ৬ দশমিক ৭৩ শতাংশ এবং প্রিমিয়ার লিজিং (‘বি’ ক্যাটাগরি) ৫ দশমিক ৮১ শতাংশ করে শেয়ার দর কমেছে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন