- রাজধানীতে বর্ণাঢ্য উদযাপন
- বিদেশে রপ্তানি করে আসছে বৈদেশিক মুদ্রা
বাংলাদেশের মৌলিক পণ্য হিসেবে এবার ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি অর্জন করেছে ‘রংপুরের শতরঞ্জি’। এ উপলক্ষে গত সোমবার বিকেলে রাজধানী ঢাকার শুক্রবাদের নন্দিনী ভবনে অনন্য এ অর্জনের উদযাপন এবং কারুপণ্য-এর ‘শতরঞ্জি-র’ নতুন প্রদর্শনী কেন্দ্রের উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে শতরঞ্জির ঐতিহ্য, বিবর্তনের ধারাবাহিকতাসহ পুরো ইতিহাস দর্শকদের সামনে উপস্থাপন করা হয়। পাশাপাশি দেশের অন্যান্য হস্তশিল্পের সম্ভাবনার জায়গাটি তুলে ধরতে পাট, বাঁশ, কচুরিপানা, কাশিয়া ও লোহালক্কড়সহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক উৎস থেকে পাওয়া কাঁচামাল দিয়ে তৈরি পণ্যের প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। বিশেষ অতিথি ছিলেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী মনিরুল ইসলাম, কবি নির্মলেন্দু গুন, কথা সাহিত্যিক আনিসুল হক ও তরুণ চিত্রশিল্পী তরুণ ঘোষ।
আনিসুল হক বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে কারণ সেলিমের মতো অসংখ্য উদ্যোক্তা আছেন বলে। আমাদের সেলিমের মতো উদ্যোক্তা দরকার। যারা কচুরিপানা, হোগলা পাতা দিয়ে তৈরি করা পণ্য বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন।
তরুণ ঘোষ বলেন, দেশের ঐতিহ্যবাহী শতরঞ্জি এখন শুধু দেশেই জনপ্রিয় নয়, বিদেশেও অবস্থান করে নিয়েছে। যার কৃতিত্ব বেসরকারি উদ্যোক্তাদের। তাদের মধ্যে এই শতরঞ্জি শো রুমটি অন্যতম।
সফিকুল আলম সেলিম বলেন, রংপুরের ঐতিহ্য শতরঞ্জি কারুপণ্যের একটি টিম ওয়ার্ক। সমন্বিত চিন্তার ফসল। কয়েকজন মানুষের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল আজকের জিআই। রংপুরে দেড় শতাধিক শতরঞ্জির কারখানা রয়েছে।
মাটির প্রদীপ প্রজ্জলনের মাধ্যমে প্রদর্শনীর উদ্বোধনের পর পর শুরু হয় রংপুর অঞ্চলের ভাওয়াইয়া গভন।
১৯৯১ সাল থেকে কারুপণ্য রংপুর লিমিটেডের হাত ধরে বিশ্ববাজারে শতরঞ্জির যে প্রবেশ এবং উত্থান, সে ধারাবাহিকতায় এবার ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পায় বাংলার ঐতিহ্যবাহী রংপুরের শতরঞ্জি।
উল্লেখ্য, শতরঞ্জিকে ২০২০ সালে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদফতর (ডিপিডিটি)। বিগত ৩ দশক ধরে রংপুরের ঐতিহ্যবাহী শতরঞ্জি নিয়ে কাজ করছেন উদ্যোক্তা সফিকুল আলম সেলিম। এই দীর্ঘ সময়ের প্রচেষ্টায় শতরঞ্জিকে তিনি নিয়ে গেছেন বিশ্ব দরবারে। শতরঞ্জি এখন প্রশংসিত হচ্ছে ইউরোপের বাজারে।
এরই ধারাবাহিকতায় শতরঞ্জিকে জিআই (জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন) পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ডিপিডিটি। এর মধ্য দিয়ে শতরঞ্জিকে রংপুর অঞ্চলের ঐতিহ্যগত পণ্য হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। শতরঞ্জির এই অর্জন উদ্যোক্তাকে দেশের অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পের বিকাশ ও প্রসারে উৎসাহী করে তুলেছে।
রংপুর কারুপণ্য লিমিটেড এখন শতরঞ্জি ছাড়াও কামার-কুমারদের তৈরি পণ্য এবং বিভিন্ন অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্পগুলোকে দেশের বাজারে জনপ্রিয় করে তোলার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও জনপ্রিয় করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। শতরঞ্জি যদি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়, তাহলে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বাংলাদেশের অসংখ্য স্থানীয় পণ্য জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে। এদেশের মানুষের অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা নিশ্চিত হতে পারে এসব পণ্য উৎপাদনের মধ্য দিয়ে।
আনন্দবাজার/শহক