শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সবুজ অর্থায়নে ধীরগতি

সবুজ অর্থায়নে ধীরগতি

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বায়ুমণ্ডলের কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে বিশ্বে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে পরিবেশবান্ধব কারখানা বা সবুজ শিল্প স্থাপনেও প্রশংসনীয় কাজ করে যাচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে পরিবেশবান্ধব ব্যাংকিং সেবার যাত্রা। অর্থায়নের ক্ষেত্রে যেখানে পরিবেশবান্ধব কারাখানাকেই বেছে নেয়া হয়। তবে ব্যাংকের অর্থায়নের অন্যতম খাত হিসেবে ইস্পাত, কাগজ, সিমেন্ট, রাসায়নিক, সার, বিদ্যুৎ এবং টেক্সটাইলের মতো যে কারাখানা বা প্রকল্প রয়েছে সেগুলোই সর্বাধিক কার্বন নিঃসরণ ঘটায়। যা পরিবেশের জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনে।

এমন পরিস্থিতিতে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক ইতোমধ্যে সবুজ ব্যাংকিংয়ের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমের পাশাপাশি গ্রিন প্রকল্পে অর্থায়ন জোরদার করেছে। আর পরিবেশবান্ধব টেকসই উন্নয়নে অর্থায়নের জন্য ব্যাংকিংখাতে চালু করা হয়েছে সবুজ ব্যাংকিং কার্যক্রম। এটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন এবং পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে।

প্রতি তিনমাস পর পর টেকসই অর্থের ওপর পর্যালোচনা প্রতিবেদনে সবুজ ব্যাংকিং কার্যক্রমের ফলাফল গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করা হয়। এ প্রতিবেদনে টেকসই আর্থিক শ্রেণিকরণের অধীনে টেকসই অর্থের সমস্ত উপাদানকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গ্রিন ব্যাংকিং শিল্পে ২০২১ সালে অর্থায়ন করা হয়েছে ৭৩৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে জানুয়ারী থেকে মার্চ পর্যন্ত অর্থায়ন করা হয় (ব্যাংক খাতে ১৮৮ কোটি ৮২ লাখ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৯ কোটি ৮৫ লাখ) ১৯৮ কোটি হাজার ৬৭ লাখ, এপ্রিল থেকে জুন (ব্যাংক খাতে ১৭০ কোটি ৮২ লাখ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৮ কোটি) ১৭৮ হাজার ৮১ লাখ, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর (ব্যাংক খাতে ১৫০ কোটি ৩৫ লাখ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৯ কোটি ২৮ লাখ) প্রায় ১৫৯ কোটি ৬৪ লাখ এবং অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থায়ন অর্থায়ন করা হয়েছে (ব্যাংক খাতে ১৭৮ কোটি ৫০ লাখ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ১৮ কোটি ৩৪ লাখ) প্রায় ১৯৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। পুনঃঅর্থায়ন প্রকল্পের অধীনে ৬১টি তফসিলি ব্যাংক এবং ৩৪টি নন ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এ অর্থায়ন করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের শাখা রয়েছে ৩ হাজার ৮১৩টি। তবে এতগুলো শাখার মধ্যে মাত্র ৮৩টির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে। এছাড়া এসব ব্যাংকের এটিএম বুথ রয়েছে ৩৭০টি। যার মধ্যে সৌরশক্তিনির্ভর বুথ মাত্র ৪টি। এ তুলনায় গ্রিন ব্যাংকিংয়ে বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকের অবস্থা কিছুটা সন্তোষজনক। দেশের বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শাখা রয়েছে ৫ হাজার ৬০৮টি। এসব শাখার মধ্যে ৬১২টির কারগরি কার্যক্রমে সৌরবিদ্যুত ব্যবহার করা হচ্ছে। ৯ হাজার ৫৮৬টি এটিএম বুথের মধ্যে ২০৬টি সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। দেশের সামগ্রিক হিসাব থেকে দেখা যায়, ১১ হাজার ২২টি ব্যাংকের শাখার মধ্যে সৌরবিদ্যুতে চালিত হচ্ছে ৭০২টি ও ১০ হাজার ১৮১টি এটিএম বুথের মধ্যে সৌরবিদ্যুতে চালিত হচ্ছে ২১৪টি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন- গ্রিন ব্যাংকিং পরিবেশের জন্য একটি টেকসই প্রকল্প। এটি সামাজিকভাবে দায়বদ্ধ বিনিয়োগকে উন্নীত করে। যা অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এটি সমাজ ও দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে। গ্রিন ব্যাংকিংয়ের উল্লেখযোগ্য এমন কিছু সুবিধা রয়েছে, যা ব্যাংকিং কার্যক্রম ও প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় ব্যাপকভাবে কাজ করতে পারে। গ্রিন ব্যাংকিং কাগজ ব্যবহারের যৌক্তিকতা কমায়, বন উজাড় নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, গ্রাহকদের দ্রুত ব্যাংকিং সেবা প্রদান করে, পরিষ্কার এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করে। এটি দেশের মানবসম্পদের উন্নয়ন করে, কম কার্বন ইমিসন তৈরি করে। এর ফলে ব্যাংকে বেশি ট্রিপ দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া গ্রিন ব্যাংকিং ব্যাংকের মুনাফা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। অর্থাৎ গ্রিন ব্যাংকিংয়ের প্রসার বেশ কল্যাণকর। দেশব্যাপী গ্রিন ব্যাংকিংয়ের প্রসার ঘটাতে হবে।

আরও পড়ুনঃ  ধান কাটতে আসা শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিশ্চিতের নির্দেশ মন্ত্রীর

এ বিষয়ে বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, এমন পরিস্থিতির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকই দায়ী। তারা একটি সার্কুলার প্রকাশ করেই দায় সারেন। সবুজ অর্থায়নের কথা বললেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকই সেটি মানছে না। তারা এখনও সব কাজ করেন ম্যানুয়ালি। এতে প্রচুর পরিমাণ কাগজ ব্যবহার করতে হচ্ছে। যে কারণে প্রতিবছর কোটি কোটি গাছ কাটতে হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি অনলাইন পেপারে কাজ করা শুরু করে তাহলে সবাই করবে। এতে সবুজ অর্থায়নের সুফল আসবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২২ সালের ত্রৈমাসিক (জানুয়ারি-মার্চ) প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সবুজ অর্থায়ন করা হয়েছে ২০৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এর বিপরীতে মেয়াদী ঋণ বিতরণ করা হয়েছে- ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ। এর মধ্যে ব্যাংকে ৩ দশমিক ১০ শতাংশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ। এ সময় ব্যাংক খাতে ঋণ দেয়া হয়- এক হাজার ৩২৮ জনকে এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৩১৬ জনকে। ২০২১ সালের একই সময়ে সবুজ অর্থায়ন হয়েছিলো ১৯৮ কোটি ৮৬ দশমিক ৩৭ লাখন টাকা। চলতি বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১১ কোটি টাকা কম। গত বছর একই সময়ে মেয়াদী ঋণ বিতরণ করা হয়েছে- ৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এর মধ্যে ব্যাংকে ৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৩ দশমিক ১৬ শতাংশ। এ ঋণ বিতরন করা হয়- এক হাজার ৩৫২ জনের মধ্যে। এর মধ্যে ব্যাংক খাতে এক হাজার ৪৪ জন এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ৩০৮ জন।

সামগ্রীকভাবে বাড়লেও গত বছরের তুলনায় অর্থায়ন কমেছে ব্যাংকিং খাতে। চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত এ খাতে সবুজ অর্থায়ন করা হয়েছে ১৬৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯ কোটি ৮৫ লাখ কম। ২০২১ সালের একই সময়ে এ খাতে সবুজ অর্থায়ন করা হয়েছিলো ১৮৮ কোটি ২১ লাখ টাকা। তবে সবুজ অর্থায়ন বেড়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। গত বছরের তুলনায় এ বছর অর্থায়ন বেড়েছে ৩১ কোটি টাকা। ২১ সালে অর্থায়ন করা হয়েছিলো ৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এ বছরের একই সময়ে এ অর্থায়ন বেড়ে হয়েছে ৪০ কোটি ৯০ লাখ টাকা।

আরও পড়ুনঃ  ঈদের আনন্দ প্রাণে প্রাণে

নবায়নযোগ্য শক্তিতে ৩৪ কোটি ৪৬ লাখ, শক্তি দক্ষতায় ১২৫ কোটি ৬ লাখ, বিকল্প শক্তিতে ৪৫ কোটি ৫২ লাখ, তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ৭৩০ কোটি ৬২ লাখ, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ৩ কোটি ৮০ লাখ, পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যের পুনর্ব্যবহারযোগ্য উৎপাদন ১১১ কোটি ১১ লাখ ৭৬ হাজার, পরিবেশ বান্ধব ইট উৎপাদন ৬১ কোটি ৩৩ লাখ ৮৭ হাজার, সবুজ পরিবেশবান্ধব প্রতিষ্ঠান ৫৫৬ কোটি ২৬ লাখ ২৯ হাজার, সবুজ কৃষিতে ১১ কোটি ৭৭ লাখ ৫৮ হাজার, সবুজ সম্পূরক রিজার্ভ সুবিধা (এসআরএফ) ১৪৬ কোটি ৩৫ লাখ এবং সবুজ কুটির, ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (সিএমএসএমই) এক হাজার ২৮০ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। সর্বমোট গ্রিন ফাইন্যান্স এক হাজার ৮ কোটি টাকা।

রাষ্ট্রায়ত্ত এক ঊর্ধ্বতন ব্যাংক কর্মকর্তা দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, সবুজ অর্থায়ন দেশের জন্য ভালো। কিন্তু এটি বাস্তবায়নে অনেক টাকার প্রয়োজন। যা সবার পক্ষে বহন করা সম্ভব না। এর মেইনটেইন খরচও অনেক। যদিও একটা সময় পর এর খরচ উঠে আসে, তবুও এর আগের সময়টায় যে ব্যায় করতে হয় তা অনেক বেশি।

গ্রিন ফাইন্যান্সে শতভাগ মেয়াদী ঋণ বিতরণ করে শীর্ষে উঠে এসেছে সিটিব্যাংক এনএ ব্যাংকের নাম। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আরেক বিদেশি ব্যাংক স্ট্যাট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া। প্রতিষ্ঠানটি বিতরণ করেছে ৭১ দশমিক ৮০ শতাংশ। এর পরে রয়েছে যথাক্রমে ইসলামী ব্যাংক ১৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ, কমিউনিটি ব্যাংক বাংলাদেশ ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ, এনআরবি ব্যাংক ৯ দশমিক ১০ শতাংশ, বেসিক ব্যাংক ৭ দশমিক ৪২ শতাংশ, সাউথইস্ট ব্যাংক ৭ দশমিক ১৮ শতাংশ, ব্যাংক এশিয়া ৬ দশমিক ৮১ শতাংশ, আইএফআইসি ব্যাংক ৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ, স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ, মধুমতি ব্যাংক ৫ দশমিক ২৩ শতাংশ এবং রুপালী ব্যাংক বিতরন করেছে ৫ দশমিক ১২ শতাংশ।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মেয়াদি ঋণ বিতরণের শীর্ষে অবস্থান করছে বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফাইন্যান্স ফান্ড। প্রতিষ্ঠানটি এ সময় ঋণ বিতরণ করেছে ৩২ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ১৬ দশমিক ৩০ শতাংশ ঋণ বিতরণ করে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভলপড কোম্পানি। এরপর ১৫ দশমিক ২২ শতাংশ ঋণ বিতরণ করে তৃতীয় সিভিসি ফাইন্যান্স, ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ ঋণ বিতরণ করে চতুর্থ অগ্রণী এসএমই ফাইন্যান্সিং কোম্পানি, ৬ দশমিক ৪৩ বিতরণে পঞ্চম আইডিএলসি ফাইনান্স, ৫ দশমিক ৬৯ শতাংশ বিতরণে ৬ষ্ঠ অবস্থানে উঠে এসেছে প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।

গ্রিন ব্যাংকিংয়ের ধারণাটি প্রথমে বিকশিত হয় পশ্চিমা দেশগুলোতে। পরিবেশ রক্ষার লক্ষ্যে ২০০৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রিন ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে ২০০৯ সালের মার্চ মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস সদস্য ক্রিস ভ্যান হোলেন তৎকালীন মার্কিন সরকারের মালিকানাধীন গ্রিন ব্যাংক প্রতিষ্ঠা ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে গ্রিন ব্যাংক আইন চালু করেন। তবে মজার ব্যাপার হলো বিশ্বের প্রথম কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক গ্রিন ব্যাংকিংয়ের পরিচ্ছন্ন ধারণা নিয়ে ২০১১ সালে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম গ্রিন ব্যাংকিং নীতিমালা তৈরি করে। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসারে ২০১৩ সালে সব তফসিলী ব্যাংক তাদের নিজস্ব গ্রিন ব্যাংকিং নীতি এবং গ্রিন ব্যাংকিং ইউনিট তৈরি করেছে।

আরও পড়ুনঃ  ডিএসইতে শীর্ষে শিপিং করপোরেশন

সবুজ অর্থায়নের বেশিরভাগই দুর্নীতিতে গ্রাস : ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক গভর্নর, কেন্দ্রীয় ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, বর্তমান সময়ে বৈশ্বিক জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। যার প্রভাবে বাংলাদেশ সরকার লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছে। বলা হচ্ছে জ্বালানি সাশ্রয়ের কথা। আমরা যদি সবুজ পরিবেশগত টেকসই উন্নয়নে মনযোগী হতে পারতাম তাহলে এ সংকটের কবলে পড়তে হতো না।

এ অর্থনীতিবিদ বলেন, পরিবেশবান্ধব টেকসই উন্নয়নে অর্থায়নের জন্য ব্যাংকিং খাতে চালু করা হয়েছে সবুজ ব্যাংকিং কার্যক্রম। কিন্তু তা খুব একটা কাজে দিচ্ছে না। যে হারে এ খাতে অর্থায়ন বাড়ানো দরকার সে হারে অর্থায়ন বাড়ছে না। আর যে পরিমাণ অর্থায়ন হচ্ছে তার অধিকাংশই দুর্নীতিতে গ্রাস হয়ে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ৩০ হাজার টাকার একটা সোলারের দাম ধরা হয় ৬০ হাজার টাকা। এতে অর্থায়নের অর্থের পরিমান বাড়তি দেখাচ্ছে কিন্তু পরিবেশ বান্ধব উন্নয়ন বাড়ছে না। যদি দুর্নীতি না হতো তাহলে এই টাকায় দুটি সোলার ক্রয় করা যেতো তাহলে পরিবেশবান্ধব উন্নয়নও বাড়তো। বাংলাদেশ ব্যাংককে এখাতে নজরদারি বাড়ানো দরকার জানিয়ে সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, টেকশই উন্নয়ন শুধু বাধাগ্রস্থই হবে না, মুখ থুবড়ে পড়বে।

সবুজ অর্থায়ন কেন্দ্রীয় ব্যাংকই মানছে না : ব্যাংক কর্মকর্তা, বাণিজ্যিক ব্যাংকখাত

সবুজ ব্যাংকিংয়ে ধীরগতির ব্যাপারে বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, এমন পরিস্থিতির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকই দায়ি। তারা একটি সার্কুলার প্রকাশ করেই দায় সারেন। সবুজ অর্থায়নের কথা বললেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকই সেটি মানছে না। তারা এখনও সব কাজ করেন ম্যানুয়ালি। ম্যানুয়ালি কাজ করার কারণে প্রচুর পরিমান কাগজ ব্যবহার করতে হচ্ছে। যে কারণে প্রতিবছর কোটি কোটি গাছ কাটতে হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি অনলাইন পেপারে কাজ করা শুরু করে তাহলে সবাই করবে। এতে সবুজ অর্থায়নের সুফল আসবে।

সবুজ অর্থায়নে অনেক টাকার প্রয়োজন : ব্যাংক কর্মকর্তা, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক

রাষ্ট্রায়ত্ত এক উর্ধতন ব্যাংক কর্মকর্তা দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, সবুজ অর্থায়ন দেশের জন্য ভালো। কিন্তু এটি বাস্তবায়নে অনেক টাকার প্রয়োজন। যা সবার পক্ষে বহন করা সম্ভব না। এর মেইনটেইন খরচও অনেক। যদিও একটা সময় পর এর খরচ উঠে আসে, তবুও এর আগের সময়টায় যে ব্যায় করতে হয় তা অনেক বেশি।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন