বগুড়ায় চারার গ্রাম শাজাহানপুর উপজেলার শাহনগর। ছোট বড় প্রায় ৩ শতাধিক চারা তৈরির নার্সারি গড়ে উঠেছে গ্রামটিতে। পেঁপে, কপি, মরিচ, টমেটো এসব সবজির চারাসহ দেশি বিদেশি নানা দুর্লোভ গাছের চারা তৈরিতে নিয়োজিত রয়েছে প্রায় সহাস্রাধিক মানুষ। অনেক শিক্ষিত বেকার যুবকের কর্মসংস্থান হয়েছে এ চারা উৎপাদন কাজে। নার্সারি মালিক সামতির নেতারা বলছেন, বছরে প্রায় ১২ কোটি টাকার চারা বিক্রি হচ্ছে এ গ্রাম থেকে।
শাহনগর গ্রামের সব আবাদি জমিতে সাদা পলিথিনে মোড়ানো সারি সারি বিছানা। নরম মাটির পরিপাটি বিছানায় বড় হচ্ছে বিভিন্ন সবজির চারা। বিভিন্ন জেলার সবজি চাষিদের কাছে চারা গ্রাম নামে পরিচিত বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার শাহনগর গ্রাম। চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এ গ্রামের সবজি নার্সারির সংখ্যা। এ পর্যন্ত ছোট বড় প্রায় তিন শতাধিক নার্সারি গড়ে উঠেছে গ্রামটিতে। এসব নার্সারিগুলোতে টমেটো, কপি, মরিচ, বেগুনসহ বিভিন্ন সবজির হাইব্রিড জাতের চারা তৈরি করা হয়।
সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় চারা পরিচর্যা ও কেনাবেচার কাজ। কেউ চারা তুলছেন কেউ পানি দিচ্ছেন কেউ আবার দামদর করছেন ক্রেতার সাথে। এভাবে ভোর থেকে মুখরিত থাকে এই চারা পল্লি। জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ টি জেলায় যাচ্ছে এখানকার সবজি চারা।অধিক ফলনশীল জাত ও চারার গুনগত মান ভালো হওয়ায় জেলা ও জেলার বাইরে থেকে চারা কিনতে শাহনগর গ্রামে আসেন সবজি চাষীরা।
বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলার দূর্গাহাটা গ্রামের সবজি চাষি সাজেদুর রহমান মিলু জানান, তার নিজের গ্রামে চারা পাওয়া গেলেও তিনি সেখান থেকে চারা না কিনে চারা কিনতে এসেছেন শাহনগর গ্রামে। তিনি আরো বলেন, অন্যান্য জায়গায় চারা পাওয়া গেলেও চারার জাত ও গুণগত মানের নিশ্চয়তা পাওয়া যায় না। এখানকার চারা অধিক ফলনশীল ও তুলনামূলক দামেও কম।
একই সঙ্গে চারা কিনতে আসা আলমগীর হোসেন বলেন, আমি নিজেই চারা তৈরী করতাম কিন্তু ভালো ফলন হতো না। গেলো তিন বছর ধরে শাহনগরের চারা কিনে সবজি চাষে ভালো লাভ পেয়েছি।
ভালো জাতের চারার জন্য বীজ সংগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে ওই গ্রামের সততা নার্সারির স্বত্বাধিকারী মমিন জানান, তাদের গ্রামে প্রতিষ্ঠিত নার্সারি মালিক সমিতি থেকে বিভিন্ন ভাবে পরিক্ষা নিরীক্ষা করে বীজ নির্বাচন করে সমিতির আওতাভুক্ত সব নার্সারিতে দেয়া হয়।আর তাই তাদের বীজের চারা ভালো হয়।
একই এলাকার সবজি নার্সারি মালিক লুৎফর রহমান জানান, মাত্র ১৩ শতাংশ জমিতে চারা তৈরি করে এক মৌসুমে কমপক্ষে দুই লাখ টাকা আয় করা সম্ভব। তবে এবছর তিনি মৌসুমের আগেই একবার আগাম চারা বিক্রি করায় প্রায় তিন লক্ষ টাকার চারা বিক্রি করবেন।
শাহনগর সবজি নার্সারি মালিক সমিতির আওতাভুক্ত নার্সারি আছে মোট ১৪২টি। সমিতির সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম বলেন, সমিতির আওতাভুক্ত নার্সারিগুলোতে এবছর প্রায় এক কোটি টাকার বীজ দেয়া হয়েছে। এই বীজ থেকে চারা করে বিক্রি করা পর্যন্ত পরিচর্যা বাবদ খরচ হবে প্রায় তিন কোটি টাকা। আর এবছর সব মিলিয়ে চারা বিক্রি কারা যাবে প্রায় ১২ কোটি টাকা। সমিতির বাইরেও নার্সারি রয়েছে কমপক্ষে একশটি। সব মিলিয়ে শাহনগর গ্রামের নার্সারিগুলো থেকে এ বছর বিক্রি হবে প্রায় ১৫ কোটি টাকার চারা।
শুধুমাত্র নার্সারি মালিকরা নয় সাবলম্বি হয়েছে ঐ গ্রামের নিম্নবিত্ত মানুষগুলোও। ভাই ভাই নার্সারিতে কাজ করা মরিয়ম খাতুন জানান, চারা তৈরির মৌসুমে তিন মাস নার্সারিতে কাজ করে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা আয় করেন তিনি। বছরের বাকি সময় বাড়িতে গরু পালন ও মাঝে মাঝে কৃষি কাজ করে জীবিকা চালান তিনি।
শাজাহানপুরের শাহনগর গ্রাম চারা গ্রাম হয়ে ওঠার পেছনে কৃষি বিভাগের কৃতিত্ব কি? এমন প্রশ্নের জবাবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বগুড়া জেলার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক এনামুল হক জানান, শাহনগরে চারা তৈরির জন্য ভালো বীজের সন্ধান দেওয়, কৃষকের উন্নত প্রশিক্ষনেরর ব্যাবস্থা করাসহ বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা প্রদান করছেন তারা। এছাড়া কৃষি ঋণ পেতে তাদের জন্য সুপারিশ করা হয়। জেলায় চারা উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ১ হাজার ২শ হেক্টর জমিতে।
বগুড়ায় শাহনগর ছাড়াও অন্যান্য উপজেলার বেশ কিছু গ্রামে চারা তৈরি করা হয়। সব মিলিয়ে শস্যভাণ্ডার খ্যাত বগুড়া জেলায় এবছর প্রায় ৪০ কোটি টাকার চারা বিক্রি করবেন নার্সারি মালিকরা।
আনন্দবাজার/শহক