ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গমের বাজারে অস্থিরতা

গমের বাজারে অস্থিরতা

দেশের পাইকারী বাজারে অস্থির গমের বাজার। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর পর বাড়তে থাকে গমের বাজার। এরপর গত মে মাসে ভারত হঠাৎ গম রপ্তানি বন্ধ করে দিলে দেশের বাজারে আরেক দফা বাড়ে দাম। তবে পরবর্তীতে গত মাস থেকে ফের গম রপ্তানি শুরু করে ভারত। ফলে বাজারে বাড়ে ভারতীয় গমের সরবরাহ।

তবে বাজারে সরবরাহ বাড়লেও দামের ক্ষেত্রে তেমনটা প্রভাব পড়েনি। নিয়মিত বিরতিতে দাম একদিন কিছু কমলে পরদিন তার দ্বিগুণ বাড়ছে। এমনকি সকালের দামের সঙ্গে বিকেলের দামেও দেখা যাচ্ছে পার্থক্য। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গমের বুকিং দর উঠানামা করছে। এছাড়া আমাদের ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণেও আমদানি ব্যয় বেড়েছে। এটিও দামে প্রভাব পড়েছে।

খাতুনগঞ্জের পাইকারী বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত মাসের শেষের দিকে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) গম বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৩০০ টাকা। চলতি মাসের শুরুতে সেটি ১ হাজার ৫৫০ টাকায় গিয়ে ঠেকে। চলতি মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে দাম ১ হাজার ৩৮০ টাকায় নেমে যায়। কয়েকদিন পরে আবার দাম ১ হাজার ৬৫০ টাকায় উঠে। বর্তমানে ১০০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫৫০ টাকায়।

খাতুনগঞ্জের একজন গম ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বর্তমানে খাতুনগঞ্জের পাঁচজন ব্যবসায়ী নিয়ন্ত্রণ করছে গমের বাজার। তারা সিন্ডিকেট করে দাম উঠানামা করাচ্ছেন। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে সেটির প্রভাব পড়তেও তিন মাস সময় লাগবে। শুধুমাত্র ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে দাম উঠানামা করার কোনো যুক্তি হতে পারে না। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর থেকে গমের বাজার বাড়তে শুরু করে।

গম ব্যবসায়ী আরও জানান, ইউক্রেন-রাশিয়া অন্যতম বিশ্বের অন্যতম গম রপ্তানিকারক দেশ। বিকল্প হিসেবে এরপর থেকে প্রতিবেশি দেশ ভারতের গমের ওপর আমাদের নির্ভরশীলতা বেড়ে যায়। ভারত ছাড়া আমাদের দেশে গম আসে অস্ট্রেলিয়া কানাডা এবং আর্জেন্টিনা থেকে। তবে সেইসব দেশের গমের আমদানি খরচও অনেক বেশি। অন্যদিকে ভারতের গম কম আমিষযুক্ত। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া-কানাডা এবং আর্জেন্টিনার গম অধিক আমিষযুক্ত। ময়দা তৈরিতে এই গম সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।

চট্টগ্রামের বনেদি পাইকারী বাজার খাতুনগঞ্জের ভোগ্যপণ্যের শীর্ষ আমদানিকারক বিএসএম গ্রুপের কর্ণধার আবুল বশর চৌধুরী বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর থেকে আসলে গমের বাজার বেড়ে যায়। এরপর ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দেয়, পরে আবার রপ্তানি চালু করে। পাইকারিতে তুলনামূলকভাবে বাজার কমতির দিকে রয়েছে। তবে এটা ঠিক বাজার স্থির থাকছে না, উঠানামা করছে। সারাবিশ্বের গমের বাজারের চিত্র অনেকটাই এরকম। এছাড়া আমাদের দেশে ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণেও গমের আমদানি ব্যয় বেড়েছে। এটিও দামের ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ছে।

কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, ভোগ্যপণ্যের বাজারে এখন এমন কোনো পণ্য নেই যে দাম বাড়েনি। তেলের দাম নিয়ে বলার অবকাশ রাখে না। এখন গমের বাজারও অস্থির। সকালে একদাম তো বিকেলে আরেক দাম। মনে হচ্ছে, এটি জুয়ার বাজার। আন্তর্জাতিক বাজারে কোনো পণ্যের দাম বাড়লে সেটি সঙ্গে সঙ্গে ভোগ্যপণ্যের বাজারে প্রভাব পড়বে, এটির কোনো যুক্তি নেই। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এগুলো দেখার কেউ নেই।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন