ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তিস্তা-কুশিয়ারায় সুখবর

তিস্তা-কুশিয়ারায় সুখবর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে চারদিনের সরকারি সফরে আগামী ৫ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশটিতে সফর করবেন। তার সফর ঘিরে ইতোমধ্যে কূটনৈতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনা শুরু হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে দুদেশের দ্বিপাক্ষিক অর্থনীতি, বাণিজ্য, আন্তঃসীমান্ত নদী ও রাজনৈতিক বিষয়ে কূটনীতিক ও বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে বিশেষ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হবে দৈনিক আনন্দবাজারে। আজ তৃতীয় পর্ব- তিস্তা-কুশিয়ারায় সুখবর।

বাংলাদেশের খোয়াই, ধরলা, দুধকুমার, মনু, মুহুরী ও গোমতী নদীর উজানে নয়াদিল্লি কোনো ড্যাম বা বাঁধ দিয়েছে কিনা সে ব্যাপারে তথ্য দিতে সম্মত হয়েছে ভারত। পাশাপাশি আরও আটটি নদী নিয়েও ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে দীর্ঘ একযুগ পর বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে অনুষ্ঠিত যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠকে।

দ্বিতীয় পর্ব- ত্রিপুরার বর্জ্যে ধুঁকছে তিতাস
প্রথম পর্ব- বাঁধনহারা নদীর স্বপ্ন

ভারতের জলশক্তি মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং সাখাওয়াত আশ্বাস দিয়েছেন, আন্তঃসীমান্তের নদীগুলোতে এককভাবে ভারত কোনো ধরনের কার্যক্রম বা প্রকল্প নেবে না। বিশেষ করে হিমালয়ের উৎস হতে সৃষ্ট নদীগুলোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই তারা এখন থেকে সিদ্ধান্ত নেবে। এরই অংশ হিসেবে অঞ্চলিক নদীগুলোর পরিস্থিতি পরিদর্শনে আগামী বছরের মার্চ-এপ্রিলে ঢাকা সফর করবেন গজেন্দ্র সিং সাখাওয়াত।

পানিমন্ত্রিপর্যায়ের জেআরসি বৈঠক থেকে ফিরে এসব তথ্য জানিয়েছেন পানিসম্পদমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক। গত ২৫ আগস্ট ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির সুষমা স্বরাজ ভবনে জেআরসির ৩৮তম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে ২৩ আগস্ট সচিব ও ২৪ আগস্ট টেকনিক্যাল পর্যায়ের বৈঠক হয়। যেখানে উভয় দেশের ১৭ সদস্যের কমিটির সদস্য অংশ নেন।

পানিসম্পদমন্ত্রী জানান, আগামী বছর ভারতের জলমন্ত্রী বাংলাদেশে এসে আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর সার্বিক অবস্থা দেখবেন। কোথায় কী ধরনের সমস্যা রয়েছে তা নিজ চোখে দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন। মন্ত্রী বলেন, ভারতকে বলেছি তারা আন্তর্জাতিক নদীতে ইন্টারলিংকিং করতে পারবে না। বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা যেন থাকে সেটি নিশ্চিত করার কথাও বলেছি। এসব আহ্বানে দেশটি সাড়া দিয়েছে। এসব নদীতে যৌথভাবে প্রকল্প নেয়া হবে। তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে যতদ্রুত সম্ভব ঐক্যমতে আসার আহ্বান জানিয়েছি। তারা বলেছে, তিস্তা চুক্তির খসড়া তাদের মন্ত্রিসভায় পাঠিয়েছে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।

তিস্তা চুক্তিতে ২০১১ সালে যেসব বিষয় ছিল তার মধ্যে কোনো পরিবর্তন হয়েছে কিনা জানতে চাইলে পানিসম্পদমন্ত্রী জানান আগের বিষয়গুলোই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। নতুন কিছুই যুক্ত হয়নি। পুরাতন কিছু বাতিলও হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে তবে কুশিয়ারার পানি নিয়ে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর (এমওইউ) হবে। সেটি পুরোপুরি চূড়ান্ত করা হয়েছে।

সিলেটের জকিগঞ্জের রহিমপুরের পাম্প হাউজের জন্য বাঁধ অপসারণ ও খাল খননে আগে বিএসএফ বাধা দিতো। তবে এ ব্যাপারে খোলামেলা আলোচনা করার পর তারা আর বাধা দেবে না বলে নিশ্চিত করেছে। পানিসম্পদমন্ত্রী জানান, ত্রিপুরার আগরতলার শিল্প, পয়ঃনিষ্কাশন ও হাসপাতালের বর্জ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় পানি ও পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। সেখানে তারা পানি শোধানাগার (ইটিপি) স্থাপন করেছে বলে জানিয়েছে। আরেকটি করবে শিগগিরই। আখাউরায় কী ধরনের পরিবেশ দূষণ ঘটছে তা দেখার জন্য প্রতিনিধি দল পাঠাবে তারা।

জেআরসি বৈঠকে গঙ্গা নদীর পানির সঠিক হিস্যা আর ২০২৬ সালে শেষ হতে যাওয়া চুক্তি নবায়নের ব্যাপারেও আলোচনা হয়েছে। তবে ভারত জানিয়েছেন, আমাদের মাথাভাঙ্গা ও চুরনিঘাটের খালের পানিতে তাদের ক্ষতি হচ্ছে। বাংলাদেশের পক্ষে সেখানে সুগারের বর্জ্য থেকে বায়ো-গ্যাস তৈরি হচ্ছে জানিয়ে পরিবেশবান্ধব করার ব্যবস্থার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে।

কুশিয়ারা থেকে বাংলাদেশ পানি পাবে। আর ফেনী নদী থেকে তাদের পানি দেয়া হবে। বৈঠকের তথ্যমতে, কুশিয়ারা নদীর পানি রহিমপুর খাল দিয়ে কৃষিকাজে ব্যবহার শুরু করার পর ভারতকে প্রতিদিন ফেনী নদীর ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি দেয়া হবে। ২০১৯ সালে দু’দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী ফেনী নদী থেকে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি ত্রিপুরার সাব্রুম শহরে সরবরাহ করা হবে। বাংলাদেশ থেকে ভারত বছরে ১৬২ কোটি ৫২ লাখ ৬৮ হাজার ৯৩৯ দশমিক ৮৪ লিটার পানি পবে।

প্রসঙ্গত, পানি বণ্টনের জন্য ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৩০ বছর মেয়াদি পানিবণ্টন চুক্তি সই হয়। সেখানে শুষ্ক মৌসুমে অর্থাৎ প্রতিবছর পহেলা জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত গঙ্গার (চীন, নেপাল, ভারত ও বাংলাদেশ দিয়ে প্রবাহিত আন্তর্জাতিক নদী; বাংলাদেশে পদ্মা নামে পরিচিত) ফারাক্কা পয়েন্টে পানির প্রবাহ ৭০ হাজার কিউসেক হলে দুই দেশ তা সমানভাগে ভাগ করে নেবে। পানিপ্রবাহ ৭০-৭৫ হাজার কিউসেক হলে সেখান থেকে বাংলাদেশ পাবে ৩৫ হাজার কিউসেক ও অবশিষ্টাংশ পাবে ভারত। পানিপ্রবাহ ৭৫ হাজার কিউসেকের বেশি হলে ভারত পাবে ৪০ হাজার কিউসেক এবং অবশিষ্ট বাংলাদেশ।

পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক জানিয়েছেন, ভারতের ১০টি আবহাওয়া অফিস থেকে বন্যাসংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যেত সেটি আরো ৫টি বাড়িয়ে ১৫টি করতে অনুরোধ করায় তারা রাজি হয়েছে। এসব অফিস একদিন আগে বন্যার আভাসের কথা জানাতে পারতো। এখন তাদের সক্ষমতা বেড়েছে ও ৫দিন আগে আভাস দিতে পারে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন