ঢাকা | মঙ্গলবার
২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কমেছে পণ্যের বেচাকেনা

কমেছে পণ্যের বেচাকেনা

জ্বালানি তেলের দাম বেড়েছে। যার প্রভাব পড়েছে সব ধরনের পণ্যের দামে। প্রভাব পড়েছে নিত্যপণ্যের বাজারেও। প্রতিটি পণ্যের দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত। যার সংসার চালাতে আগে খরচ হতো ২০ হাজার, বর্তমানে সেই ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার টাকায়। তবে পণ্যের দাম নাগালের বাইরে চলে গেলেও বাড়েনি আয়, রোজগার। যে কারণে আয়-ব্যয়ের সমন্বয় করতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের। বেশিরভাগ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে আশঙ্কাজনক হারে।

জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ার প্রভাব দৃশ্যমান সবখাতেই। নিত্যপণ্যের দাম নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় খুচরা পর্যায়ে বিক্রি কমে গেছে আশঙ্কাজনকহারে। খুচরা ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে। সবজির দোকান থেকে শুরু করে পোশাক, কসমেটিকস, টাইলস্, রড-সিমেন্ট, শো-পিচ, রেস্টুরেন্টগুলোতে বিক্রি কমে গেছে। দামের চাপে মানুষ যতোটা পারে নিজেদের ভোগপ্রবণতা থেকে বেরিয়ে এসেছেন। জীবন চালাতে অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনগুলো মেটানো ছাড়া বাড়তি ব্যয় কমাতে চেষ্টা করছেন।

রাজশাহীর পবা উপজেলার বাগধানী বাজারের গার্মেন্টস ব্যবসায়ী হুমায়ন কবীর জানান, আগের চেয়ে অনেক হিসাব করে চলছেন মানুষ। আগে শার্ট বা প্যান্ট পছন্দ হলে একটির জায়গায় দুটিও কিনেছেন। কোনো পোশাক ক্রেতাদের চোখে পড়লে নেয়ার চেষ্টা করেছেন। তবে চিত্র এখন পাল্টে গেছে। প্রয়োজনের বেশি কেউ কিছু কিনতে চাচ্ছেন না।

হুমায়ন কবীর তার অভিজ্ঞতা থেকে জানান, আগের চেয়ে পণ্যের দাম বেড়েছে। দাম বাড়ার আগে তার দোকানে দিনে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার কাপড় বিক্রি হতো। এখন সেই বিক্রি এসে ঠেকেছে এক হাজার ৫০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকায়।

শুধু কাপড়েই নয়, বেচাকেনা কমে গেছে নির্মাণ সামগ্রীতেও। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পরপরই বেড়েছে সিমেন্ট, রডসহ অন্যসব নির্মাণ সামগ্রীর দাম। সে কারণে যারা নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন বা করবেন তাদের হিসেবও এলোমেলো। অনেকেই নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখেছেন। আবার অনেকেই শুরু করার পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছেন।

রাজশাহী মহানগরীর উপশহর এলাকার বাবুল হোসেন। তার বাড়িটি নির্মাণের জন্য প্লান পাস করিয়েছেন। নির্দিষ্ট একটি অর্থের জোগান নিয়ে এগিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ার কারণে সব হিসেব তার এলোমেলো। বাবুল হোসেন জানান, তার ৬ তলা ভিত দিয়ে একতলা বাড়ি নির্মাণ করতে তার খরচ হওয়ার কথা ১৮ লাখ টাকা। কিন্তু এখন হিসাব ভিন্ন। সেই হিসাব ঠেকবে ২১-২২ লাখ টাকায়। বাকি অর্থ তার কাছে নেই। সে কারণে এখন তিনি বাড়ি নির্মাণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

মেঘনা সিম ডিলাক্স রাজশাহী জোনের টেকনিক্যাল সাপোর্ট এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার কামরুল ইসলাম জানান, জ্বালানির দাম বাড়ার কারণে সিমেন্টসহ অন্যসব নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়েছে। দাম বাড়লে প্রভাব কিছুটা পড়বেই বাজারে। যারা বাড়ি নির্মাণের চিন্তা করছিলেন, তাদের হিসাব মিলছে না। নতুন করে বাড়ি বা অন্য কোনো স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু করার হার কমেছে ২০ শতাংশের মতো। সে কারণে সিমেন্ট সেলসের ওপরে কিছুটা প্রভাব পড়েছে।

আবাসন ব্যবসাতেও নেমেছে ধ্বস। ফ্লাট বা প্লট কিনতেও মানুষের মধ্যে অনীহা দেখা দিয়েছে। রাজশাহী মহানগরীর নওদাপাড়া আমচত্বর এলাকার প্লট ব্যবসায়ী আওয়াল হোসেন জানান, আয়ের তুলনায় ব্যয় বৃদ্ধি হওয়াতে মানুষের জমানো অর্থে ব্যয় হতে শুরু হয়েছে। আগামীতে কী হবে তা নিয়েও মানুষ বেশ শঙ্কিত। সে কারণে মানুষ জমি কিনছে না। তার আবাসন এলাকাগুলোতে যেখানে মাসে ২০ থেকে ২৫টি প্লট বিক্রি হয়। তবে চলতি মাসের ২০ দিন পার হয়ে গেলেও মাত্র ৩টি প্লট বিক্রি হয়েছে।

রাজশাহীর পবা উপজেলার বাগধানী বাজারের কসমেটিকস ব্যবসায়ী উজ্জ্বল হোসেন জানান, তার দোকানের বিক্রিও অর্ধেকে নেমেছে। যেখানে মানুষ চাল, ডালের দাম মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে কীভাবে সাজগোজের পণ্যে কিনবে।

সবজির বাজারেও পড়েছে প্রভাব। রাজশাহী মহানগরীর বায়া বাজারে খুচরা সবজি ব্যবসায়ী জমশেদ আলী জানান, মানুষ আগে যেটা এক কেজি কিনতেন সেটা এখন ২৫০ গ্রাম কিনছে। বেচাবিক্রিতে একই অবস্থা। সকাল থেকে দুপুর গড়িয়ে গেছে। বিক্রি যা হয়েছে তাতে খরচই উঠবে না।

জমশেদ আলী বলেন, মানুষের কামাই আগের মতোই রয়েছে। কিন্তু খরচ বেড়েছে অনেক। মানুষ ওই টাকার মধ্যেই পণ্যে কেনার চেষ্টা করছেন। সবক্ষেত্রে বিক্রি কমায় ব্যবসায়ীদের মধ্যেও হতাশা দেখা দিয়েছে। বিক্রি কমে যাওয়ার তাদের সংসারে টানাটানি শুরু হয়েছে। সামনের দিনগুলো কীভাবে চলবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে পুষ্টি গ্রহণের মাত্রাও গেছে কমে। যা স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন