কমেছে বেশির ভাগ কোম্পানির দর
লেনদেন
- ডিএসইতে হাজার কোটি
- সেরা ডিএসইতে বেক্সিমকো
- সিএসইতে ন্যাশনাল ব্যাংক
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সব ধরনের সূচক পতন হয়েছে। এদিন ডিএসইর লেনদেন কমে হাজার কোটি টাকায় অবস্থান করেছে। কমেছে দুই স্টকের বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, গেল সপ্তাহের শুরুর দিন বা রবিবার (৩১ জুলাই) পুঁজিবাজারে বড় উত্থান হয়েছিল। ওইদিন ক্রেতা বহুগুনে বেড়েছিল। রবিবারের মতো পরেরদিন সোমবারে পুঁজিবাজার উত্থান ছিল। ওইদিন ক্রেতার চাপও বেশি ছিল। এরপর তিন কার্যদিবস (মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার) উত্থান ধারা অব্যাহত ছিল। উত্থান কারণে স্বস্তিতে ছিলো বিনিয়োগকারীরা। সেই স্বস্তি গত দুই কার্যদিবস কাল হয়ে দাঁড়ালো। এই দুইদিন সূচকসহ বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর কমে। এসময় ক্রেতার চেয়ে বিক্রেতার চাপও বেশি হয়েছে।
স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, ২৭ ও ২৮ জুলাই দুই কার্যদিবস বড় পতন পরের পাঁচ কার্যদিবস উত্থানে পুঁজিবাজার। সেই উত্থান চলতি সপ্তাহের দুই কার্যদিবসে ফের পতনে ফিরে আসে। গতকাল সোমবার ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৮৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকার শেয়ার। আগের কার্যদিবস রবিবার লেনদেন হয়েছিল ১ হাজার ১১৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৮০টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ১০৩টি, কমেছে ২১১টি এবং পরিবর্তন হয়নি ৬৬টির।
এদিন ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪৫ দশমিক শূন্য ৫ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২৫৮ দশমিক ৯৫ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই-৩০ সূচক ২১ দশমিক ৯৬ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস সূচক ৮ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট কমে যথাক্রমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৩৭ দশমিক ৬০ পয়েন্ট এবং ১ হাজার ৩৬৮ দশমিক ২৩ পয়েন্টে।
গতকাল ডিএসইর বেশির ভাগ খাতের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে। এদিন ব্যাংক, সিমেন্ট, ইঞ্জিনিয়ারিং, নন ব্যাংকিং আর্থিক, বিমা, জ্বালানি শক্তি, আইটি, ওষুধ রসায়ন এবং বস্ত্র খাতের বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে। এদিন সিরামিক, পাট, বিবিধ এবং সেবা আবাসন খাতের বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর বেড়েছে। এছাড়া খাদ্য আনুষঙ্গিক, ফান্ড, টেলিকম এবং ভ্রমণ অবসর খাতের শেয়ার দরে উত্থান-পতন মিশ্রাবস্থা ছিল। খাতগুলোর শেয়ার দরে উত্থান-পতনের একই চিত্র ছিল পুঁজিবাজার সিএসইতে।
অপরদিকে, সিএসইতে গতকাল লেনদেন হয়েছে ১৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবস রবিবার লেনদেন হয়েছিল ২১ কোটি ৭২ লাখ টাকা। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২৭৩টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ৯১টি, কমেছে ১২১টি এবং পরিবর্তন হয়নি ৬১টির। এদিন সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ৯৬ দশমিক ৫৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৪৩৮ দশমিক ৪০ পয়েন্টে।
এছাড়া সিএসই-৫০ সূচক ১০ দশমিক ৮২ পয়েন্ট, সিএসই-৩০ সূচক ১১৯ দশমিক ৮৮ পয়েন্ট, সিএসসিএক্স সূচক ৫৮ দশমিক ৬৮ পয়েন্ট এবং সিএসইআই সূচক ২ দশমিক ৯২ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৩৪৭ দশমিক ৮১ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ৪২২ দশমিক শূন্য ১ পয়েন্টে, ১১ হাজার ৪৭ দশমিক ২০ পয়েন্ট এবং ১ হাজার ১৭১ দশমিক শূন্য ৯ পয়েন্টে।
ডিএসইতে এদিন বেক্সিমকোর শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। এদিন বেক্সিমকো ৮০ কোটি ৯২ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা এদিন অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে মালেক স্পিনিং ৪৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, কপারটেক ৩২ কোটি ১৮ লাখ টাকা, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ ৩১ কোটি ১৯ লাখ টাকা, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং ২৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, লার্ফাজ-হোল্ডসিম ২৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট ২২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, ম্যাকসন স্পিনিং ২২ কোটি ৮০ লাখ টাকা, একমি পেস্টিসাইড ২১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা এবং ওরিয়ন ইনফিউশন ১৭ কোটি ১৭ লাখ টাকার কেনাবেচা হয়েছে।
অপরদিকে, এদিন সিএসইতে ন্যাশনাল ব্যাংকের শেয়ার কেনাবেচায় কদর সবচেয়ে বেশি ছিল। ফলে লেনদেন শীর্ষে কোম্পানিটির শেয়ার স্থান পায়। এদিন ন্যাশনাল ব্যাংক ৯৬ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লেনদেনের শীর্ষ অবস্থানে থাকা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে বেক্সিমকো ৬৯ লাখ টাকা, ফরচুন সুজ ৫৪ লাখ টাকা, ড্রাগন সোয়েটার ৫১ লাখ টাকা, ফু-ওয়াং ফুড ৪৯ লাখ টাকা, ম্যাকসন স্পিনিং ৪৮ লাখ টাকা, কুইন সাউর্থ ৪১ লাখ টাকা, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং ৩৬ লাখ টাকা, লার্ফাজ-হোল্ডসিম ৩৩ লাখ টাকা এবং পেনিনসূলা ৩২ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়।
গত ২৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণের পর থেকেই পুঁজিবাজার উত্থানমুখী ছিলো জানিয়ে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, এর ফলে টানা পাঁচ কার্যদিবস পুঁজিবাজারের সূচক বাড়ে। লেনদেনসহ অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দরও বাড়ে। এর সঙ্গে যোগ হলো গত মঙ্গলবারের পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ হবে ক্রয়মূল্যের সিদ্ধান্ত। ওই খবরটির পর লেনদেন ১২শ কোটি টাকার ঘরে চলে আসে। সব মিলিয়ে উত্থানে ছিলো পুঁজিবাজার। কিন্তু চলতি সপ্তাহে শুরু বা গত দুই কার্যদিবস (রবিবার ও সোমবার) ফের ফিরে আসলো উল্টোমুখীতে। তলিয়ে গেল মন্দায়।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিভিন্ন সমস্যায় ঈদের (ঈদুল আযহা) পর থেকেই পুঁজিবাজার নিম্নমুখী ছিল। ঈদের পরে টানা ৯ কার্যদিবস ধরে পুঁজিবাজার পতন। সেই পতন হঠাৎ করেই দুই কার্যদিবস সামান্য উত্থানে ফিরেছিল। সেই উত্থান ধরে রাখা যায়নি। ফের নেমে আসলো পুঁজিবাজারে পতন। দীর্ঘ পতন পর হঠাৎ উত্থানে আসায় শান্তি পেয়েছিল বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু গেল সপ্তাহে শেষ দুই কার্যদিবসে (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) বড় ধরনের পতনে তাদের সেই শান্তিতে বড় ধরনের ছেদ পড়েছিল।
এই পতন বিষয়টি চরমভাবে ভাবিয়ে তুলেছিল বিএসইসিকে। ফলে গত ২৮ জুলাই পতন থেকে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের বাঁচাতে শেয়ার দর পতনের ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। ঠিক তার পরের কার্যদিবস ৩১ জুলাই (রবিবার ও সোমবার) বড় উত্থান হয়েছিল পুঁজিবাজারে। এছাড়া দীর্ঘ বিতর্কের পর গত মঙ্গলবার নির্ধারণ হলো পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ হবে ক্রয়মূল্যে। এটা নির্ধারণ পর থেকে লেনদেন ওঠে এসেছে হাজার কোটি টাকার ওপরে।
এসব কারণের উত্থান ধারা অব্যাহত ছিল গত সপ্তাহে। ফ্লোর প্রাইস ও বিনিয়োগ ক্রয়মূল্যে নির্ধারণ পর থেকে সব ধরনের সূচক উত্থানকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছিলেন বিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু গতকাল দুই কার্যদিবস (রবিবার ও সোমবার) পুঁজিবাজার ফের মন্দায় ফিরেছে। তবে এই মন্দাটা স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছেন বলে জানান তারা।