- মূলধন বেড়েছে ২১ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা
- সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৩৩১ পয়েন্ট
- বেড়েছে ৯৪ ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর
- লেনদেন বেড়েছে ১ হাজার ৮৮৯ কোটি টাকা
বিদায়ী সপ্তাহে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূলধন পরিমাণ আগের সপ্তাহের চেয়ে বেড়েছে। পাশাপাশি লেনদেন বেড়েছে। ডিএসইর ৯৪ ভাগ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের দর উত্থান হয়। সব ধরনের সূচকও বেড়েছে। সব মিলিয়ে গেল সপ্তাহে পুঁজিবাজার উর্ধ্বমুখী ছিল। তবে এর আগের সপ্তাহ তা ছিল নিম্নমুখী।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সংকট সহ এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং ঘোষণার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল পুঁজিবাজারে। ফলে বড় ধরনের দরপতন হয় পুঁজিবাজারে। আরও বলেন, লোডশেডিং ঘোষণার দিন ১৮ জুলাই ডিএসইতে বড় পতন শুরু হয়। সেই পতন আরো বড় আকারে দেখা দেয় পরের দিন ১৯ জুলাই। ওই দুইদিনের তুলনায় পরের দুইদিনের (বুধবার ও বৃহস্পতিবার) পতন আকার কিছুটা ছোট হয়ে আসে। পতনের ফলে অপ্রত্যাশিত ভাবে পুঁজিবাজার মন্দায় ডুবেছে। কিন্তু গেল সপ্তাহের শুরুর দিন বা রবিবার পুঁজিবাজারে বড় উত্থান হয়েছিল। ওইদিন ক্রেতা বহুগুনে বেড়েছিল। রবিবারের মতো গত সোমবারে উত্থান ছিল। ওইদিনও ক্রেতার চাপ বেশি ছিল। সেই ধারায় গত মঙ্গলবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবারও উত্থান অব্যাহত ছিল। বিভিন্ন মহলের শত চেষ্টায় পুঁজিবাজারে এ ধরনের উত্থানে স্বস্তিতে বিনিয়োগকারীরা।
তারা বলেন, গত ২৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণের পর থেকেই পুঁজিবাজার উত্থান। সেই উত্থান মাত্রা আরো বাড়িয়ে গত মঙ্গলবারের পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ হবে ক্রয়মূল্যের সিদ্ধান্তটি। সবমিলিয়ে গেল সপ্তাহের টানা পাঁচ কার্যদিবস পুঁজিবাজারের সূচক বাড়ে। বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর বাড়ে। ক্রয়মূল্যের সিদ্ধান্তের খবরটির পর লেনদেন হাজার কোটি টাকার ওপরে চলে আসে।
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলে উত্তেজিত হওয়া যাবে না মন্তব্যে করে বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা বিভিন্ন জায়গায় দেখছি সবাই লিখালিখি করছে দেশে তেল শেষ, জ্বালানী শেষ। এগুলো সব গুজব। আর গুজবে কান দিয়ে পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা তাদের কষ্টের টাকায় কেনা শেয়ার নামমাত্র মুল্যে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এটা মোটেও ঠিক না। এটা থেকে সবাইকে বেরিয়ে আসতে হবে। এদিকে বিভিন্ন সমস্যায় ঈদের (ঈদুল আযহা) পর থেকেই পুঁজিবাজার নিম্নমুখী বিষয়টি চরমভাবে ভাবিয়ে তুলেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি)। পতন থেকে রক্ষায় ২৮ জুলাই শেয়ার দর পতনের সর্বনিম্ন সীমা বেঁধে দিল বিএসইসি। ওইদিন সংস্থাটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম সাক্ষরিত এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছিল। ফ্লোর প্রাইস নির্ধারণের পর গত মঙ্গলবার নতুন যোগ হলো পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ হবে ক্রয়মূল্যের সিদ্ধান্ত। এসব কারনে গেল সপ্তাহ পুঁজিবাজার উত্থানে ফুলে ফেঁপে ওঠেছে।
ডিএসই সূত্র মতে, “গত বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে ডিএসইর পুঁজিবাজারের মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ১৩ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা। গত ২৮ জুলাই মূলধন ছিল ৪ লাখ ৯২ হাজার ১১৩ কোটি টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে মূলধন বেড়েছে ২১ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা।”
জানা যায়, চলতি বছরের প্রথম তিন সপ্তাহ (১৫ কার্যদিবস) কারণ বিহীন বেড়ে উঠেছিল পুঁজিবাজার মূলধন। হঠাৎ করেই এরপরের দুই সপ্তাহ (১০ কার্যদিবস) মূলধন কমতে দেখা গেছে। তাল মিলিয়ে বছর শুরুর তিন সপ্তাহে লেনদেন উত্থানে চমক থাকলেও পরের দুই সপ্তাহে লেনদেন নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল। পরের সপ্তাহে মূলধন বৃত্ত বেড়েছিল। সেখান থেকে পরের সপ্তাহগুলোতে মূলধন বাড়া-কমার মধ্যে ছিল। এরপর চার সপ্তাহে মূলধন কমার গতি অনেক বেশি ছিল। কিন্তু গেল সপ্তাহে পতন বৃত্ত থেকে বেরিয়ে বড় উত্থানে ফিরে আসলো পুঁজিবাজার। ফলে গেল সপ্তাহে ডিএসইর মূলধন পরিমান বাড়লো ২১ হাজার কোটি টাকা বেশি। এ ধরনের বৃদ্ধিকে স্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইর পুঁজিবাজারে সব ধরনের সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ হয়। এক সপ্তাহে ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩৩১ দশমিক ৭৪ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৩১২ দশমিক ২৫ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই৩০ সূচক ১১৯ দশমিক ৯৫ পয়েন্ট এবং শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ৬৬ দশমিক ৯৯ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়ায় যথাক্রমে ২ হাজার ২৬৫ দশমিক ২০ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ৩৭৫ দশমিক ১৯ পয়েন্টে।
গেল সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৫ হাজার ৫৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন ছিল ৩ হাজার ১৬৯ কোটি ১৯ লাখ টাকা। গেল সপ্তাহে গড়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ১১ কোটি ৭২ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৬৩৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৩৯৫টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৩৭৩টির বা ৯৪ শতাংশ, দর কমেছে ৭টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ৮টির কোম্পানির। লেদনের হয়নি ৭টি কোম্পানির শেয়ার।
আনন্দবাজার/শহক