ঢাকা | বৃহস্পতিবার
১৫ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১লা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

উন্নয়নের গতি উত্তরে

উন্নয়নের গতি উত্তরে

কৃষিনির্ভর অর্থনীতি থেকে ক্রমেই শিল্পায়নের মাধ্যমে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হচ্ছে বাংলাদেশ। এরই ধারাবাহিকতায় এবার সরকার নজর দিয়েছে বৃহত্তর দিনাজপুরের অঞ্চলের শিল্প বিকাশে। দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় জেলায় বিভিন্ন ধরনের ছোট-বড় শিল্প গড়ে ওঠেছে।

পঞ্চগড়ে দুশটির বেশি চা বাগান রয়েছে। দিনাজপুরে সুগারমিল, জুটমল ছাড়াও ১০০টির বেশি অটো রাইস মিল রয়েছে। ঠাকুরগাঁও জেলায় রেশম কারখানা আর বড়পুকুরিয়ায় রয়েছে উন্নতমানের কয়লা, যা জ্বালানিখাতে মূল্যবান। তাই এসব এলাকার শিল্পায়নে গতি আনতে নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ নিশ্চিত করতে ও প্রায় ৬০ লাখ মানুষের জীবনমান উন্নয়নে নতুন প্রকল্প নিয়েছে সরকার।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি বা একনেক সভায় ‘বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন’ নামের একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থয়নের এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। যদিও প্রথমে ২ হাজার কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছিল, তবে পরিকল্পনা কমিশন প্রকল্পটির ২০০ কোটি টাকা বাদ দিয়েছে। ২০২২ সালের জুলাই মাস থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।

প্রকল্পের আওতায় ৩ জেলার ২৩টি উপজেলার নাগরিক সুবিধা উন্নত করা হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করার লক্ষ্যে ২৪ শতাংশ উপজেলা সড়ক, ৪০ শতাংশ ইউনিয়ন সড়ক ও ৯ শতাংশ গ্রামীণ সড়ক উন্নত করা হবে। ফলে কৃষি-অকৃষি পণ্যপরিবহণ ও বাজারজাতকরণ সহজ হবে। প্রকল্পটির অনুমোদনের সময় একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী এলজিইডিকে কাজের মানের বিষয়ে আরো নজর দেওয়ার নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন।

প্রকল্পের ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ১৯ দশমিক ৭ কিলোমিটার উপজেলা সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬ কোটি ১৬ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। ফলে প্রতি কিলোমিটার সড়কে ব্যয় পড়বে ১ কোটি ৩২ লাখ টাকার বেশি। অন্যদিকে ৩৮৬ কিলোমিটার ইউনিয়ন সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫২৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এখানে প্রতি কিলোতে ব্যয় পড়বে ১ কোটি ৩৭ হাজার টাকার বেশি। আর ৩৮৩ মিটার ব্রিজ নির্মাণে ব্যয় হবে ৩৮ কোটি টাকা। ৬৩ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ১০৩ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার করা হবে। তাড়াছা ২৩ কিলোমিটার রাস্তার পাশে বৃক্ষরোপন ও পরিচর্যায় ব্যয় হবে ১ কোটি ২৭ লাখ টাকা।

এদিকে, প্রকল্পের ২৫২ জন কর্মকর্তার ৪২ মাসের বেতন বাবদ বরাদ্দ করা হয়েছে ১ কোটি ৮২ রাখ টাকা। সঙ্গে ১০ ধরনের ভাতার জন্য দওয়া হবে আরও এক কোটি ৮৩ লাখ টাকা। ফলে বেতনের চেয়ে ভাতার পরিমাণ বেশি দাঁড়াচ্ছে। যার মধ্যে দায়িত্ব ভাতা নামেরও একটি ভাতা রয়েছে। তাছাড়া একটি গাড়ি ভাড়ার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে এক কোটি ১৭ লাখ টাকা। যেখানে পেট্রোল জ্বালানী বাবদ আরো ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চার বছর গড়ে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলা ও পঞ্চগড়-ঠাকুরগাও জেলার ৫টি করে উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে পরিবেশের ওপর কোন বিরুপ প্রভাব পড়বে বলা হয়েছে। নিম্নআয়ের ২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির কথা বলা হচ্ছে। উন্নত যোগাযোগ কৃষিতে ইতিবাচক প্রভাব পেলবে এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের আশা করা হচ্ছে। প্রকল্পটির সিংগভাগ ব্যয় হবে সড়ক অবখাঠামো খাতে।

এর আগে গত ৬ মার্চ প্রকল্পটির মূল্যায়ন করে পরিকল্পনা কমিশন। সেখানে প্রশিক্ষণসহ ৮ ধরণের ব্যয় বাদ দেওয়া হয়। তাছাড়া প্রকৌশল ও অফিস সরঞ্জাম ক্রয়ে ব্যয় কমানো হয়। ফলে প্রস্তাবিত ব্যয় থেকে ২০০ কোটি টাকা হ্রাস পায়। প্রকল্পটিতে আর মেয়াদ বাড়নো হবে না বলেও জানায় পরিকল্পনা কমিশন। বৃক্ষরোপন করার ক্ষেত্রে একটি ফলজ, বনজ ও ওষুধি গাছ আনুপাতিক হারে লাগানোর পরামর্শ দেয় কমিশন। পরে পরিকল্পনা কমিশন থেকে প্রকল্পটি পাশ করার সুপারিশ করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০২২-২৩ অর্থবছরে এলজিআরডি খাতে মোট বরাদ্দ রয়েছে ১৬ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা। যা গত অর্থবছরের তুলনায় ২ হাজার ৮১০ কোটি বা ২০ দশমিক ৫৭ শতাংশ বেশি। যার মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় ৭৭টি প্রকল্প চলমান রয়েছে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন