ঢাকা | শনিবার
২৪শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১০ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বিশ্বে গমের দামে ভাটা

বিশ্বে গমের দামে ভাটা

রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে খাদ্যশস্য রপ্তানিতে কৃঞ্চসাগর ব্যবহারের চুক্তি করার ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে ইতোমধ্যে গমের দাম কমতে শুরু করেছে। বিশ্বব্যাপী গম নিয়ে যে হাহাকার দেখা দিয়েছিল, তা অনেকটা কেটে যাচ্ছে। খাদ্য আমদানিমুখী দেশগুলোতে স্বস্তির নিঃশ্বাস পড়ছে। সেই স্বস্তির বাতাস বইছে দেশীয় বাজারেও। ইতোমধ্যে দেশের বাজারে গমের দাম নিম্নমুখী দেখা গেছে। বিশেষ করে গত তিনদিনের ব্যবধানে দেশের বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে গমের দাম প্রতি মণে ১০০ টাকা পর্যন্ত নেমে গেছে।

গমের পাইকারি ব্যবসায়ীদের মতে, আজ থেকে মাস ছয়েক আগেও দেশে প্রতি মণ গমের দাম ছিল মানভেদে ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে দাম হঠাৎ করেই দ্বিগুণ বেড়ে মণপ্রতি ২ হাজার ১৫০ টাকা ছাড়িয়ে বিক্রি হতে থাকে। এতে দেশে উৎপাদিত গম আর আটার দামও চড়তে থাকে দ্বিগুণ দামে। তবে গত কয়েকদিন ধরে গমেই সেই দাম পড়তে শুরু করেছে।

খাতুনগঞ্জের গম ব্যবসায়ীদের কয়েকজন জানান, বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেনের চুক্তি, আন্তর্জাতিক বুকিং কমতে থাকায় দেশের বাজারে প্রভাব পড়েছে। দুই দিনের ব্যবধানে দাম মণপ্রতি অন্তত ৮০-১০০ টাকা কমেছে। তারা মনে করছেন, ইউরোপের গমের সরবরাহ বিশ্বব্যাপী স্বাভাবিক হয়ে এলে দাম আরো কমে যেতে পারে।

খাতুনগঞ্জে বর্তমানে প্রতিমণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) ভারতীয় গম বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ টাকা দামে। যা গত সপ্তাহে ১৫০০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে। সেই হিসেবে, চলতি সপ্তাহের প্রথম দুই দিনেই পণ্যটির দাম মণে ১০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। ভারতীয় গমের পাশাপাশি মণে ৮০ টাকা পর্যন্ত কমেছে কানাডা থেকে আমদানি করা গমের দামও। গত সপ্তাহের শেষ দিকে বাজারে প্রতিমণ কানাডার গম বিক্রি হয়েছে ২০০০ টাকা দামে। যা আজকের বাজারে ১৯৩০ টাকা দামে বিক্রি হয়েছে।

সূত্রমতে, বর্তমানে মধ্য ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে গমের উত্তোলন মৌসুম শুরু হয়েছে। আগামী কয়েক মাসে কানাডা, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়াসহ বেশ কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় খাদ্যশস্য উৎপাদনকারী দেশের উত্তোলন মৌসুম শুরু হবে। যার কারণে আসন্ন মৌসুমটি বৈশ্বিক খাদ্যশস্যের বাজার নিম্নগামী অবস্থায় স্থিতিশীল থাকবে। এতে শীর্ষ ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশে পণ্যবাজার আরো নিম্নমুখী হবে বলে আশা করছেন তারা।

আমদানিকারকরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন চুক্তির ফলে বিশ্ববাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম নিম্নমুখী হওয়ায় বাংলাদেশ রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে পণ্য আমদানি না করলেও এর সুফল পাবে। তাছাড়া সরাসরি আমদানি না করলেও তৃতীয় কোনো দেশ বা ওইসব দেশের এজেন্সির মাধ্যমে পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে খাদ্যশস্য আমদানি করতে পারবে।

তথ্যমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে ৪০ লাখ টন গম আমদানি হয়েছে। আগের অর্থবছরে আমদানির পরিমাণ ছিল ৫৪ দশমিক ৪৩ লাখ টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গম আমদানি হয়েছিল ৬৪ লাখ ৩৪ হাজার টন। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ৫৬ লাখ ২৯ হাজার টন এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে আমদানি হয়েছিল ৫৮ লাখ ৮১ হাজার টন গম।

মূলত, খাদ্যশস্য হিসেবে চালের পর দেশে গমের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকায় পণ্যটির মূল্যবৃদ্ধিতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। তবে আন্তর্জাতিক বাজারের পাশাপাশি দেশীয় বাজারেও গমের দাম কমতে থাকায় শিগগিরই আটা ও ময়দার দাম কমার সুখবর মিলবে বিপাকে পড়া সাধারণ মানুষের কাছে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন