- মজুদ হবে ৩৫ লাখ টন খাদ্য
- দেশের ৮ অঞ্চলে ৮টি স্টিল সাইলো নির্মিত হচ্ছে
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০২১ সালের মধ্যে সরকারি পর্যায়ে খাদ্যশস্য ধারণ ক্ষমতা ২৭ লাখ টনে উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা এবং রূপকল্প-২০২১ এর সঙ্গে সমন্বয় করে দেশে আধুনিক খাদ্য গুদাম ও সাইলো নির্মাণের কার্যক্রম নেয়া হয়। সরকারি পর্যায়ে খাদ্যশস্য সংরক্ষণের বিদ্যমান ধারণক্ষমতা প্রায় ২১ লাখ ৭২ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে। আরও প্রায় ৫ লাখ ৮৬ হাজার টন ধারণ ক্ষমতার আধুনিক খাদ্য গুদাম ও সাইলো নির্মাণের লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। এছাড়া খাদ্যশস্যের সংরক্ষণ ক্ষমতা বাড়ানো এবং বিদ্যমান গুদামের ধারণ ক্ষমতা বজায় রাখতে নতুন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
এর মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আরও পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার। এর অংশ হিসেবে খাদ্য মজুদ রাখতে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ৮ স্থানে ৮টি স্টিল সাইলো নির্মাণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৫টি রাইস সাইলো আর ৩টি গমের। এছাড়া খুব শিগগিরই ৩০টি পেডি সাইলো নির্মাণের কাজ শুরু হবে। চট্টগ্রাম সাইলো দেশের খাদ্য সংরক্ষণে বড় ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। গত শনিবার বিকালে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ১ লাখ ১৪ হাজার ৩ শ টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন আধুনিক স্টিল সাইলো নির্মাণ কাজের ভিত্তিস্থাপ করেছেন খাদ্যমন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেছেন, দেশে ২১ লাখ টন খাদ্য শষ্য সংরক্ষণের সক্ষমতা আছে। ২০২৫ সালের মধ্যে ৩৫ লাখ টন খাদ্য শস্য মজুদের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে সরকার। কৃষকের ভেজা ধান সাইলোতে শুকিয়ে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, খাদ্য নিরাপত্তার পাশাপাশি কৃষককে সহায়তার জন্য সরকার ধান চাল প্রকিউর করে। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী সমস্যা তৈরি করেছে। তবে তুরষ্কের মধ্যস্থতায় একটি সমঝোতা হতে যাচ্ছে। ইউক্রেন ও রাশিয়া খাদ্যপন্য রপ্তানি করার বিষয়ে একটি চুক্তি করেছে যা আমাদের জন্য স্বস্তিদায়ক হবে, গম আনতে কষ্ট হবে না।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ৫৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিণ করা চট্টগ্রাম গমের সাইলোর কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে। ১২,৭০০ টন ক্ষমতার মোট ৯টি বিন রয়েছে সাইলোটিতে। এ সমস্ত সাইলো বিনে কীটনাশক ব্যবহার ব্যতিরেকেই অত্যাধুনিক চিলার ও নাইট্রোজেন ফিউমিগেশন যন্ত্রের মাধ্যমে আদ্রতা ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে মজুদ চাল প্রায় ২ বছর সংরক্ষণ করা যাবে।
সড়ক ও নৌপথে এ সাইলোর সরবরাহ ও বিতরণ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে বিদেশ হতে জাহাজে করে বাল্ক আকারে আমদানিকৃত গম এ সাইলোতে মজুদ করা হবে। মজুদকৃত গম বাল্ক আকারে অভ্যন্তরীণ অন্যান্য সাইলোতে রেল ও নৌপথে সরবরাহ করা হবে। এছাড়াও ৫০ কেজির বস্তায় করে গম সড়ক ও রেলপথে বিভিন্ন এলএসডিতে ও সিএসডিতে বিতরণের জন্য প্রেরণ করা হবে। এ সাইলো নির্মাণের কাজ করছে বাংলাদেশের কনফিডেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও আমেরিকার দ্য জিএসআই গ্রুপ।
চলতি বছরের হিসাবে, সরকারের গুদামে রেকর্ড পরিমাণ খাদ্য মজুদ গড়ে উঠেছে। বর্তমানে মজুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৭ হাজার ৪৪৫ টন। এই প্রথম সরকারি মজুদ ২০ লাখ টনের বেশি। এর আগে রেকর্ড মজুদ ছিল ২০১৯ সালের অক্টোবরে ১৯ লাখ ৭৫ হাজার ৬৩৮ টন। বর্তমান মজুদ খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে সরকারকে সুদৃঢ় অবস্থানে নিয়ে এসেছে। স্বস্তিদায়ক মজুদ গড়ে উঠলেও বাজারে চালের দাম বেড়েই চলেছে। অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাঝিতে বাজারে চালের দাম বেড়েই চলেছে।
আনন্দবাজার/শহক