- শেয়ার বিক্রিতে ক্রেতার সংকট
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে (রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার) গড় লেনদেন পরিমাণ আগের সপ্তাহ তুলনায় কমেছে। এসময় পতন হয় সব ধরনের সূচক। কমেছে অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট দর। সপ্তাহটিতে ক্রেতার সংকটের কারণে শেয়ার বিক্রয়ের চাপ বাড়ে।
গেল সপ্তাহে মন্দা পুঁজিবাজারে টপটেন লেনদেনে ৯০ ভাগ ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার দর ওঠে এসেছে। তবে টপটেন গেইনার ও লুজারে ৫০ ভাগ ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার দর ওঠে এসেছে। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৫৫৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এর আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল ৬৫৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত ৩৯৫টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ৪৫টির, দর কমেছে ৩৩১টির বা ৮৩ দশমিক ৮০ শতাংশ ও অপরিবর্তিত রয়েছে ১১টির কোম্পানির। লেদনের হয়নি ৮ কোম্পানির শেয়ার। গেল সপ্তাহের শেষে ডিএসইর পিই রেশিও অবস্থান করে ১৩ দশমিক ৯৩ পয়েন্টে। যা আগের সপ্তাহের শেষে ছিল ১৪ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট। এক সপ্তাহের ব্যবধানে পিই রেশিও কমেছে দশমিক ৪০ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ৭৯ শতাংশ।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানির মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ১৫ পয়েন্ট ছাড়ালেই তা বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। অন্যদিকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনও (বিএসইসি) মার্জিন ঋণের যোগ্যতা হিসেবে সর্বোচ্চ ৪০ পিই রেশিও বেঁধে দিয়েছে। এ হিসেবে ৪০ পর্যন্ত পিইধারীর শেয়ার বিনিয়োগের জন্য নিরাপদ বলে জানায় বিএসইসি। সেই হিসেবে গত বৃহস্পতিবার ডিএসইর পিই দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৯৩ পয়েন্টে। মানে পিই রেশিও হিসাবে বিনিয়োগ নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে।
ডিএসইর সূত্রে জানা যায়, গেল সপ্তাহে ‘এ’ ক্যাটাগরি ৯০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার টপটেন লেনদেনে অবস্থান করেছে। লেনদেনে ‘বি’ বা সেকেন্ড ক্যাটাগরির ১০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার অবস্থান করেছে। সপ্তাহটিতে ‘এ’ ক্যাটাগরির ৬০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার টপটেন গেইনারে অবস্থান করেছে। গেইনারে ‘বি’ ক্যাটাগরির ৪০ শতাংশ এবং ‘এন’ ক্যাটাগরির ১০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার অবস্থান করেছে। অপরদিক ‘এ’ ক্যাটাগরির ৫০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর টপটেন লুজারে অবস্থান করেছে। সপ্তাহে ‘বি’ ক্যাটাগরির ২০ শতাংশ, ‘জেড’ ক্যাটাগরির ২০ শতাংশ এবং ‘এন’ ক্যাটাগরির ১০ শতাংশ কোম্পানির শেয়ার দর টপটেন লুজারে অবস্থান করেছে।
গেল সপ্তাহে ডিএসইতে ‘এ’ ক্যাটাগরির বেক্সিমকোর শেয়ার টপটেন লেনদেনের শীর্ষে ওঠে এসেছে। লেনদেন শীর্ষে থাকলেও কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে। সপ্তাহটিতে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। কোম্পানিতে ১৪৫ কোটি ৫৮ লাখ ৯৭ হাজার টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি দর দাঁড়ায় ১১৬ দশমিক ৬০ টাকায়। আগের সপ্তাহে শেষ কার্যদিবস শেয়ার প্রতি দর ছিল ১২৮ টাকা। এই সময়ের ব্যবধানে কোম্পানির শেয়ার প্রতি দর কমেছে ১১ দশমিক ৪০ শতাংশ। কারণবিহীন বেক্সিমকোর শেয়ার দর এভাবে কমাকে বাঁকা চোখে দেখছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, গেল সপ্তাহে লেনদেন পরিমান কমেছে। এসময় শেয়ার ক্রয়ের চেয়ে বিক্রয় বেশি হয়। তবে গেল সপ্তাহে সব ধরনের সূচক পতন হয়। কমেছে ৮৪ ভাগ কোম্পানির শেয়ার দর। এই অবস্থায় এমন কি হলো, হঠাৎ করেই বেক্সিমকোর শেয়ার দর লাফিয়ে লাফিয়ে কমেছে। তাও সপ্তাহ ব্যবধানে কমেছে ৮ দশমিক ৯১ শতাংশ।
উল্লেখ্য, পুঁজিবাজারের ‘এ’ ক্যাটাগরির শেয়ার ‘বি’ ও ‘জেড’ ক্যাটাগরির থেকে তুলনামূলক ভালো কোম্পানি। নিয়ম অনুসারে, যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ থেকে তার ঊর্ধ্বে লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ নিচে থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারা ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার। যেসব কোম্পানি বছর শেষে তাদের শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ নিচে থেকে শুরু জিরো লভ্যাংশ (নগদ বা বোনাস) দেয় তারাই ‘জেড’ ক্যাটাগরি কোম্পানির শেয়ার। এছাড়া এন ক্যাটাগরি নতুন কোম্পানির শেয়ার। যেগুলোর পুঁজিবাজারের লেনদেন শুরু হয়েছে কিন্তু বছর পার হয়নি, সেইগুলো ‘এন’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে।
সপ্তাহটিতে ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির শেয়ার টপটেন লেনদেনে কদর বেশি ছিল। সপ্তাহটিতে বেক্সিমকো ছাড়া টপটেন লেনদেনে ‘এ’ ক্যাটাগরির অন্য কোম্পানিগুলো হলো- সোনালি পেপার, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ইন্ট্রাকো, কেডিএস, ওরিয়ন ফার্মা, তিতাস গ্যাস, ফরচুন সুজ, বিট্রিশ আমেরিকান টোব্যাকো। টপটেন লেনদেনে ওঠে এসেছে ‘বি’ ক্যাটাগরির কোম্পানি শাইনপুকুর সিরামিকসও। এর মধ্যে সোনালি পেপার ৯৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স ৭৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং ৬১ কোটি ৬২ লাখ টাকা, কেডিএস এক্সেসরিজ ৬০ কোটি ৪ লাখ টাকা , ওরিয়ন ইনফিউশন ৫৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, তিতাস গ্যাস ৫৫ কোটি ৫ লাখ টাকা, ফরচুন সুজ ৪৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা, বিট্রিশ আমেরিকান টোব্যাকো ৩৫ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং শাইনপুকুর সিরামিকস ৩৪ কোটি ৭২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন করেছে।
অপরদিকে, ‘এ’ ক্যাটাগরির এইচ আর টেক্সটাইলের শেয়ার দর টপটেন গেইনারের শীর্ষে ওঠে এসেছে। সপ্তাহটিতে কোম্পানিটির শেয়ার দর বেড়েছে ২১ দশমিক ৪০ শতাংশ। কোম্পানিটি একাই ৩২ কোটি ১৪ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। গেইনারে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে কেডিএস এক্সেসরিজ (‘এ’ ক্যাটাগরি) ১৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ, ওরিয়ন ইনফিউশন (‘এ’ ক্যাটাগরি) ১১ দশমিক ৯১ শতাংশ, প্রাইম টেক্সটাইল (‘বি’ ক্যাটাগরি) ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ, আরামিট সিমেন্ট (‘বি’ ক্যাটাগরি) ৭ দশমিক ১৪ শতাংশ, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক (‘বি’ ক্যাটাগরি) ৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ, সান লাইফ ইন্স্যুরেন্স (‘বি’ ক্যাটাগরি) ৫ দশমিক ৮৩ লাখ টাকা, আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজ (‘এ’ ক্যাটাগরি) ৫ দশমিক ২৮ শতাংশ, এম এল ডায়িং (‘এ’ ক্যাটাগরি) ৫ দশমিক ২০ শতাংশ এবং এআইবিএল মুদারাবা পারপেচ্যুয়াল বন্ড (‘এন’ ক্যাটাগরি) ৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ করে শেয়ার দর বেড়েছে।
এছাড়া সপ্তাহটিতে মন্দ ক্যাটাগরির (‘জেড’ ক্যাটাগরি) কোম্পানির ইমাম বাটনের শেয়ার টপটেন লুজারের শীর্ষে ছিল। সপ্তাহটিতে কোম্পানিটির শেয়ার দর কমেছে ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ। কোম্পানিটি ৩৬ লাখ ৮৬ হাজার টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়। লুজারে উঠে আসা অন্য কোম্পানিগুলোর মধ্যে সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল (‘এ’ ক্যাটাগরি) ৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ, ফরচুন সুজ (‘এ’ ক্যাটাগরি) ৯ দশমিক ২৯ শতাংশ, মেঘনা ইন্স্যুরেন্স (‘এন’ ক্যাটাগরি) ৯ দশমিক ২২ শতাংশ, ইনফরমেশন সার্ভিসেস (‘বি’ ক্যাটাগরি) ৯ দশমিক ২১ শতাংশ, শাইনপুকুর সিরামিকস (‘বি’ ক্যাটাগরি) ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ, প্রভাতি ইন্স্যুরেন্স (‘এ’ ক্যাটাগরি) ৯ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, জেনেক্স ইনফোসিস (‘এ’ ক্যাটাগরি) ৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, বাংলাদেশ ফাইন্যান্স (‘এ’ ক্যাটাগরি) ৯ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ এবং শ্যামপুর সুগার (‘জেড’ ক্যাটাগরি) ৯ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ করে শেয়ার দর কমেছে।