ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রভাব বাড়ছে শিল্পোৎপাদনে

বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দেশে বাড়ছে ডলারের দাম। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়ছে জ্বালানির দাম। এতে সংকটে পড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। এমন পরিস্থিতিতে জ্বালানি ব্যবহার কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
  • গত দুমাস ধরেই প্রয়োজনীয় বিদ্যুতে ঘাটতি: শিল্পমালিকরা
  • গ্যাসনির্ভর ২৭ বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সংকট

বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে দেশে বাড়ছে ডলারের দাম। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে বাড়ছে জ্বালানির দাম। এতে সংকটে পড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। এমন পরিস্থিতিতে জ্বালানি ব্যবহার কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের। গ্যাস সরবরাহে করা হচ্ছে রেশনিং। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে শিল্পোৎপাদনে। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। শিল্প মালিকরা বলছেন, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে উৎপাদনে ধস নামলে দেশের অর্থনীতি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সরকারের উচিৎ নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুতের নিশ্চয়তা দেয়া।

সূত্রমতে, বর্তমানে চট্টগ্রামের বড় বড় শিল্পকারখানা চলছে নিজেদের ক্যাপটিভ পাওয়ারে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়েই। আর এসব পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য গ্যাসের যোগান দেয় কেজিডিসিএল। লৌহ, সিমেন্ট, গ্যাস, পেপার, টেক্সটাইলের মতো এসব ভারী শিল্প চলছে ‘ক্যাপটিভ পাওয়ার’ নামের নন-গ্রিড বিদ্যুতে। চট্টগ্রামে গ্যাস রিফুয়েলিং স্টেশনসহ ১৭১টি ক্যাপটিভ পাওয়ার ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে গ্যাসচালিত জেনারেটর দ্বারা উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যবহার করে রিফুয়েলিং স্টেশনগুলো। এছাড়া চট্টগ্রামের বড় বড় শিল্পগ্রুপ ক্যাপটিভ পাওয়ারের মাধ্যমে নিজেদের পণ্য উৎপাদনে কারখানা চালাচ্ছে। এসব ক্যাপটিভ পাওয়ার প্ল্যান্টে প্রতি মাসে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে সাড়ে ৫ কোটি ঘনমিটার। বর্তমানে মাসে চার কোটি ঘনমিটারের মতো গ্যাস পাচ্ছে এসব ক্যাপটিভ পাওয়ার।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, শিল্পখাতে এখনো পুরোপুরি গ্যাস বা ইলেকট্রিসিটি রেশনিং হয়নি। কিছু কিছু শিল্পকারখানায় বাল্ক গ্যাস সরবরাহে রেশনিং হচ্ছে। এতে কারখানারগুলোর উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাস-বিদ্যুৎ না হলে শিল্প কারখানা চালু রাখা সম্ভব হবে না। শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হলে সামগ্রিক অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে। শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এজন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি রাখবো, যাতে শিল্পখাতে গ্যাস-বিদ্যুতের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা হয়।

প্রিমিয়ার সিমেন্ট লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক গোলাম কিবরিয়া বলেন, সরকার শিল্পবান্ধব। এখন যে লোডশেডিং হচ্ছে, তাতে আমাদের কারখানায় বেশি প্রভাব পড়েনি। তবে গত কয়েকদিনে যে লোডশেডিং হয়েছে, তাতে আমাদের প্ল্যান্ট কয়েকবার বন্ধ করতে হয়েছিল। এতে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। কারণ আমরা পুরোপুরি বিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের কারখানাটি কর্ণফুলী উপজেলায়। ওই উপজেলায় নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিদ্যুৎ না থাকলে আমাদের কারখানাতেও বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে না। তখন বাধ্য হয়ে উৎপাদন বন্ধ রাখতে হবে। গোলাম কিবরিয়া বলেন, শিল্পজোনগুলোতে বিদ্যুতের সমস্যা হবে না। কিন্তু আমাদের মতো শত শত কারখানা বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সেসব কারখানায় বিদ্যুতের বরাদ্দ কমলে তার প্রভাব আশপাশের কারখানাগুলোতেও পড়বে।

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সহ-সভাপতি রকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, সারাদেশে পাঁচ হাজারের মতো গার্মেন্টস কারখানা চলমান রয়েছে। চট্টগ্রামে ৪৫০ পোশাক কারখানা সচল রয়েছে। বিদ্যুৎ সমস্যার কারণে কমবেশি প্রতিটি কারখানা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিদ্যুতের সমস্যা সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে। কিন্তু আমরা গত প্রায় দুই মাস থেকেই প্রতিদিন ৪-৫ ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ পাচ্ছিলাম না। বিদ্যুৎ না থাকলে বিকল্প ব্যবস্থায় জেনারেটর ব্যবহার করতে হয়।

পেট্রোবাংলার তথ্যমতে, গত বৃহস্পতিবার ২ হাজার ৭৭৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করেছে পেট্রোবাংলা। দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে ২ হাজার ৩৪৫ মিলিয়ন ঘনফুট এবং আমদানিকৃত এলএনজি সরবরাহ দেওয়া হয়েছে ৪২৯ মিলিয়ন ঘনফুট। এর মধ্যে চট্টগ্রামের জন্য কর্ণফুলী গ্যাসকে দেওয়া হয়েছে ২৬৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। অন্যদিকে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল) বলছে, বর্তমানে সারাদেশে ৪ হাজার ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের চাহিদা রয়েছে। গ্যাস সেক্টর মাস্টার প্ল্যান খসড়া-২০১৭ অনুযায়ী ২০২৩ সালে চাহিদা অনুযায়ী গড়ে ১৯৬৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি থাকার কথা।

পিডিবির তথ্যমতে, গত বুধবার সারাদেশে ১২ হাজার ৪৯৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। এর বাইরে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে ভারত থেকে আমদানিকৃত ৯৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এর মধ্যে ত্রিপুরা থেকে ১২৬ মেগাওয়াট এবং ভেড়ামাড়া এইচভিডিসি (হাই ভোল্টেজ ডিরেক্ট কারেন্ট) দিয়ে ৮৫৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হয়েছে দেশের জাতীয় গ্রিডে। ওইদিন পিডিবির নিজস্ব মালিকানাধীন ৪৬টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে ১৫টিতে পিক আওয়ারে কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়নি। কমবেশি গ্যাস সংকট ছিল গ্যাসনির্ভর ২৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে। ১০টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলের সংকট ছিল। কয়লা সংকট ছিল পিডিবির মালিকানাধীন দুই বিদ্যুৎকেন্দ্রে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন