ঢাকা | সোমবার
২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফের বাড়ছে দাম

জ্বালানি তেল
  • দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর
  • গ্যাস ব্যবহারে মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান

বিশ্ববাজারে তেল ও গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশের জ্বালানি পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন জ্বালানি ও বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোরও ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে বর্তমান সংকট সাময়িক বলে মন্তব্য করে তিনি গ্যাস ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে জনগণের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক অডিও বার্তায় এসব কথা বলেন তিনি।

নসরুল হামিদ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, ‘আমরা ছয়–সাত মাস ধরে তেলের মূল্য ঊর্ধ্বগতি লক্ষ করছি। যে তেল আমরা ৭০ থেকে ৭১ ডলারে কিনতাম, এখন তা ১৭১ ডলার হয়ে গেছে। এবং সেটা সব সময় বাড়তির দিকেই যাচ্ছে। আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি যে আমরা তেলের প্রাইসটাকে অ্যাডজাস্টমেন্টে যাব। কিন্তু আমাদের নিজস্ব অর্থে আমরা এই ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু তারপরও আমাদের মনে হয়, আমাদের একটা সময়ে প্রাইস অ্যাডজাস্টমেন্টে (মূল্য সমন্বয়) যেতে হবে।

বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম আবারো ঊর্ধ্বমুখী। এক মাসের ব্যবধানে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি গড়ে প্রায় ১৬ ডলার বেড়েছে। এ অবস্থায় দেশের বাজারে ডিজেল-অকটেন বিক্রিতে লোকসান গুনতে হিমশিম খাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। বর্তমানে এ দুটি পণ্য বিক্রিতে দৈনিক লোকসান ১০৭ কোটি টাকায় ঠেকেছে। এ অবস্থায় আবারো জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জ্বালানি বিভাগ-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছে।

বিপিসি সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত ও পরিশোধিত তেলের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বর্তমানে ১২১-১২৫ ডলারে ওঠানামা করছে। এ পরিস্থিতিতে কেবল ডিজেল-অকটেন বিক্রিতেই লিটারপ্রতি দৈনিক ৯৭ টাকা লোকসান করছে বিপিসি। সব মিলিয়ে দেশের জ্বালানি তেল বিক্রিতে সংস্থাটির দৈনিক লোকসানের পরিমাণ ১০৭ কোটি টাকার বেশি। দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দামে সমন্বয় করা না হলে অব্যাহত এ লোকসান পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হবে মনে করছেন বিপিসি সংশ্লিষ্টরা।

তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মানুষ যখন তীব্র মূল্যস্ফীতির সঙ্গে টিকে থাকার সংগ্রাম করছে, তখন জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে আবারও বাড়বে পরিবহণ ব্যয়। এর প্রভাব সব নিত্যপণ্যের দামের ওপরও পড়বে। এদিকে বিদ্যুৎ ভবনের বৈঠকে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো ছাড়া তাদের কাছে আর কোনো বিকল্প নেই।

জ্বালানি তেলের দাম ১০, ২০ অথবা ৩০ টাকা বাড়ানো হলে পরিবহন খরচ কত বাড়তে পারে, বৈঠকে এ সংশ্লিষ্ট একটি বর্ণনা উপস্থাপন করা হয়। গত নভেম্বরে ডিজেলের দাম প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর ফলে সরকার কত টাকা দাম বৃদ্ধি করেছিল, তার ওপর ভিত্তি করে এই প্রাক্কলন করা হয়েছে। ওই উপস্থাপন বলছে, যদি ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি ১০ টাকা বাড়ানো হয়, তাহলে ঢাকা ও চট্টগ্রামে স্বল্প দূরত্বের বাস ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা ১৫ পয়সা থেকে বেড়ে ২ টাকা ২৩ পয়সা হবে। দূরপাল্লার বাসের ক্ষেত্রে ১ টাকা ৮০ পয়সা থেকে বেড়ে ১ টাকা ৮৯ পয়সা হবে। একইভাবে, ডিজেলের দাম ২০ ও ৩০ টাকা বাড়ানো হলে পরিবহণ খরচ প্রতি কিলোমিটারে যথাক্রমে ১৬ পয়সা ও ২৪ পয়সা করে বাড়বে।

কেন দাম বাড়ে
ইসরায়েলকে সমর্থন করায় পশ্চিমাদের শায়েস্তা করতে গত শতকের সত্তরের দশকে জ্বালানি তেলকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিল আরব দেশগুলো। গত ৩০ মে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইউ) ২৭ সদস্যরাষ্ট্রের প্রধানেরা একই অস্ত্র নিজেদের জন্য ব্যবহারের ব্যাপারে একমত হয়েছেন।

ইউক্রেন আক্রমণের প্রতিবাদে মস্কোর ওপর নতুন করে একদফা নিষেধাজ্ঞার অংশ হিসেবে ইইউর এমন সিদ্ধান্ত। একই সঙ্গে রাশিয়ার সর্ববৃহৎ ব্যাংক সেবারব্যাংককে আন্তদেশীয় লেনদেন ব্যবস্থা সুইফট থেকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইইউ। এ প্যাকেজে চলতি বছরের শেষ নাগাদ রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল ও পরিশোধিত জ্বালানি পণ্য যেমন ডিজেল কেনায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। তবে পাইপলাইনের মাধ্যমে রাশিয়া থেকে যে তেল সরবরাহ করা হয় সাময়িক সময়ের জন্য তা নিষেধাজ্ঞার বাইরেই থাকবে বলে জানিয়েছে ইইউ।

এই খবরে এক ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়ে হয় ১২০ ডলার। গত মার্চের পর যা সর্বোচ্চ।এ নিষেধাজ্ঞায় জ্বালানি বাজারে একটা টানাটানি শুরু হয়েছে। এতে করে তেলের দাম আবার বাড়ছে। এদিকে মহামারির প্রকোপ শেষ হয়েছে। মানুষজন আবার গাড়ি চালাচ্ছেন ও উড়োজাহাজে যাতায়াত করছেন। এতে জ্বালানির চাহিদাও অনেক বেশি। এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে চীন করোনাভাইরাস–সংক্রান্ত বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার কারণেও জ্বালানির চাহিদা বেড়েছে।

সরবরাহ–সংকট ও চাহিদা অনেক বাড়ায় তেলের দাম বেশি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের তেল পরিশোধন সক্ষমতা–সংকট। এতে অপরিশোধিত তেলের চেয়ে পেট্রল ও ডিজেলের দাম বেড়েছে। ফ্রান্সিসকো ব্ল্যাঞ্চ অব ব্যাংক অব আমেরিকা বলেছে ডলারের দাম বাড়ায় ইউরোপ ও উদীয়মান বাজারে জ্বালানি তেলের দাম আরও বেড়েছে। বিশ্বজুড়ে চলছে ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন