বিদায়ী সপ্তাহে (রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার) পুঁজিবাজারের মূলধন পরিমাণ আগের সপ্তাহের চেয়ে বেড়েছে। গেল সপ্তাহে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) একটি বাদে বাকি দুই ধরনের সূচক উত্থান হয়েছে। অপর পুঁজিবাজার চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সব ধরনের সূচক উত্থান হয়েছে। উভয় স্টকের অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দরে উত্থান হয়েছে। সব মিলিয়ে গেল সপ্তাহে পুঁজিবাজারের গতি ইতিবাচক রুপে ছিল।
চলতি বছরের শুরুর দিকের উত্থানে সবাইকে পুঁজিবাজারে প্রতি বিনিয়োগ আগ্রহী করে তুলেছিল জানিয়ে বিজ্ঞ বিনিয়োগকারীরা বলেন, সেই আগ্রহে অনেকে নতুন করে বিনিয়োগ শুরু করেছিল। ধারাবাহিক মন্দায় সেই নতুন বিনিয়োগ কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ক্ষেত্রে গেল সপ্তাহে সবুজ সিগন্যাল দিলো। এটি আমরা ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে।
পুঁজিবাজার প্রসঙ্গে রেগুলেটররা (বিএসইসি) বলেন, চলতি বছরের শুরুতে মূলধন, লেনদেনসহ সূচক অতি বেড়ে যায়। এই কারণে পুঁজিবাজারে শেয়ারগুলোর দর বেড়েছিল অতিরিক্ত। পরের কয়েক সপ্তাহ অতি দরের কিছুটা লাগাম পড়েছিল। তখন শেয়ার দর কমতে থাকে। পরে কয়েক সপ্তাহ বাড়া-কমার মধ্যে কেটে যায়। হঠাৎ করেই এরপর কয়েক সপ্তাহ পুঁজিবাজার মন্দা। এ ধরনের মন্দাকে কারেকশন হিসেবে দেখা হয়েছিল। ধারনা করা হচ্ছে, কারেকশন পর গেল সপ্তাহে পুঁজিবাজার কিছুটা উত্থানে ফিরেছে।
ডিএসই এবং সিএসই সূত্র মতে, গত বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে ডিএসইর পুঁজিবাজারের মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ১৭ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা। এক সপ্তাহে আগে বা ২৩ জুন মূলধন ছিল ৫ লাখ ১৪ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা। অপরদিকে, গত বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে সিএসইর পুঁজিবাজারের মূলধন দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৪৮ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা। গত ২৩ জুন মূলধন ছিল ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে মূলধন বেড়েছে ৩ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা। সিএসইতে মূলধন বেড়েছে ২ হাজার ৩৬২ কোটি টাকা।
চলতি বছরের প্রথম তিন সপ্তাহ (১৫ কার্যদিবস) কারণ বিহীন বেড়ে উঠেছিল পুঁজিবাজার মূলধন। হঠাৎ করেই এরপরের দুই সপ্তাহ (১০ কার্যদিবস) মূলধন কমতে দেখা গেছে। তাল মিলিয়ে বছর শুরুর তিন সপ্তাহে লেনদেন উত্থানে চমক থাকলেও পরের দুই সপ্তাহে লেনদেন নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল। পরের সপ্তাহে মূলধন বৃত্ত বেড়েছিল। সেখান থেকে পরের সপ্তাহগুলোতে মূলধন বাড়া-কমার মধ্যে ছিল। কিন্তু গেল সপ্তাহে মূলধন বৃদ্ধির গতি ছিল। সপ্তাহটিতে দুই স্টকের মিলে (ডিএসই ও সিএসই) মূলধন বেড়েছে ৫ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা। এ ধরনের কমাকে অস্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।
পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে মূলধন বাড়া-কমা স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে অতিরিক্ত বৃদ্ধি যেমন ভালো লক্ষ্মণ না, তেমনি কমাও নয়। সব ক্ষেত্রেই বাড়া-কমার একটা সীমা থাকে। যখন সেই সীমা অতিক্রম করে, সেই ক্ষেত্রে সবার মনে অনেকগুলোর প্রশ্ন তৈরি হয়। এসব প্রশ্নের পরিষ্কার ও যৌক্তিক জবাব জানা থাকলে, সেটা অন্য কথা। না জানা থাকলে সেই ক্ষেত্রে বিযয়টি ভালো চোখে দেখার কথা না।
এদিকে, বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইর পুঁজিবাজারে একটি বাদে বাকী দুই ধরনের সূচক উত্থানে লেনদেন শেষ হয়। এক সপ্তাহে ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স দশমিক ৭৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩৭৬ দশমিক ৯৪ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩৮৬ দশমিক ৭৮ পয়েন্টে। এছাড়া ডিএসই৩০ সূচক ৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৯৫ দশমিক ৫৯ পয়েন্টে।
সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইর প্রধান সূচক সিএএসপিআই ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৬১৮ দশমিক ৮৪ পয়েন্টে। এছাড়া সিএসই৫০ সূচক ১ দশমিক ১৬ শতাংশ, সিএসই৩০ সূচক দশমিক ৫১ শতাংশ, সিএসসিএক্স সূচক ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ এবং সিএসআই সূচক ১ দশামক ৭০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ১ হাজার ৩৬৮ দশমিক ৬৪ পয়েন্টে, ১৩ হাজার ৫০৭ দশমিক ৮৪ পয়েন্টে, ১১ হাজার ১৬১ দশমিক ৬৭ পয়েন্টে এবং ১ হাজার ১৭৬ দশমিক ৯৮ পয়েন্টে।
গেল সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ৮৫৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন ছিল ৩ হাজার ৮২২ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে দশমিক ৯২ শতাংশ। অপরদিকে গেল সপ্তাহে সিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১৯৫ কোটি ৯০ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন ছিল ১৯৯ কোটি ১৬ লাখ টাকা। গেল সপ্তাহে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত মোট ৩৯৫টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।
এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ২৬৫টির, দর কমেছে ৯৪টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ৩১টির কোম্পানির। লেদনের হয়নি ৫ কোম্পানির শেয়ার। সপ্তাহে সিএসইতে তালিকাভুক্ত মোট ৩০১টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ২০৪টির, দর কমেছে ১২২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ২১টির কোম্পানির।
আনন্দবাজার/শহক