ঢাকা | বৃহস্পতিবার
১লা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চাহিদা বাড়ছে দেশীয় ফলের

চাহিদা বাড়ছে দেশীয় ফলের
  • ফরমালিন মুক্ত হওয়ায় ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি
  • লাভবান হচ্ছেন স্থানীয় বাগান মালিকরা
  • ঘুরছে স্থানীয় অর্থনীতির চাকা

জ্যৈষ্ঠকে বলা হয় মধুমাস। জ্যৈষ্ঠের শেষ দিকে এসে মৌলভীবাজারের বাজার গুলোর সর্বত্রই স্থানীয় চাষকৃত নানান জাতের মৌসুমি পাকা ফলের দাপট। কোভিড-১৯’র কারণে গত দু’বছর বাগান মালিক ও পাইকারী এবং খুচরা ব্যবসায়ীরা তেমন লাভবান হতে পারেননি।

তাছাড়া স্বাস্থ্যবিধিসহ নানা নির্দেশনায় বাজারও ছিল বন্ধ। বাজার বন্ধ থাকায় ক্রেতারাও দেশীয় প্রজাতির ফল ক্রয় করতে পারেননি। তবে দীর্ঘদিন পর আবারো সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ায় এখন বাজারজুড়ে রয়েছে দেশীয় নানা প্রজাতির ফলের সমারুহ। তাই সবকিছু মিলিয়ে ফল-ফলন বিক্রিও তুলনামূলক ভাল হওয়ায় খুশি বাগান মালিকরা। অন্যদিকে দেশীয় নানা প্রজাতির ফল পেয়ে ক্রেতারাও বেশ খুশি।

ক্রেতাদের ভাষ্য-অন্তত এ কয়েকটা মাস ফরমালিনমুক্ত ফল খাওয়া যাবে। কেননা চাষিরা তাদের সামনেই নিজ বাগান থেকে পাকা ও আধপাকা নানা জাতের ফল সংগ্রহ করে গাড়ি বোঝাই করে বিক্রির জন্য নিয়ে আসছেন। এতে করে সেখানে যেমন বিক্রির পরিমান বাড়ছে। অন্যদিকে ঘুরছে স্থানীয় চাষিদের অর্থনীতির চাকা। স্থানীয় বাসিন্দাসহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে ক্রেতারা আসছেন কম দামে ফরমালিন মিশ্রণমুক্ত মৌসুমি ফল কিনতে।

জেলার ছোট-বড় সব হাট-বাজারগুলোতে কম বেশি মৌসুমি ফল বিক্রি হলেও সবচেয়ে বেশি মৌসুমি ফল বিক্রি হয় জেলার কুলাউড়া উপজেলার ব্রাহ্মণবাজারে। সপ্তাহে দু’দিন সোম ও বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাজারে বড় পরিসরে ফলের হাট বসে। ওই বাজারের পূর্বপাশে কুলাউড়া-মৌলভীবাজার সড়কের প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে রাস্থার দু’পাশেই জমে ওঠে মৌসুমি ফলের হাট। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে কেনাবেচা। বাজার জুড়ে পসরা সাজানো থাকে আম, কাঁঠাল, আনারস, লিচু, কালো জাম, গোলাপ জাম, জামরুল, লটকন, কলা, নারিকেল, কাঁচা তাল, আখ, বেল, লেবু, আমড়া, জাম্বুরা, লুকলুকি, তাল, চালতা, জলপাই, কামরাঙ্গা, বেলেম্বু সহ নানা জাতের মৌসুমি ফল।

ব্রাহ্মণবাজার ছাড়াও জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায়ও প্রতিদিনই সকালে হাট বসে আনারস, কাঁঠাল ও লেবুর। আনারস ও লেবুর চাষের জন্য জেলার মধ্যে এ উপজেলা অন্যতম। এছাড়াও বড়লেখার শাহবাজপুর বাজার, বড়লেখা সদর, জুড়ী কামিনিগঞ্জ বাজার, কুলাউড়ার রবিরবাজার, বরমচাল ও ভাটেরা বাজার, কমলগঞ্জের মুন্সিবাজার, কমলগঞ্জ সদর, রাজনগরের টেংরা বাজার ও মুন্সিবাজার এসব ফলের হাট বসে বলে জানা গেছে। চাষিরা জানান -এ বছর ফলনও অনেকটা ভাল হয়েছে আর দামও পাচ্ছেন। এ জেলার পাহাড়ি টিলার এ মৌসুমি ফলগুলো সুস্বাদু, রসালো ও আকারে বড় হয় বলে এখানকার ফলের চাহিদাও বেশি।

এ প্রতিবেদকের কথা হয় ব্রাহ্মণবাজারের মৌসুমি ফল বিক্রেতারা আহমদ আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, চলতি বছর আকার অনুযায়ী কাঁচাকাঁঠাল প্রতিপিস ৫০ থেকে ১৫০ টাকা। আনারস হালি প্রতি আকার অনুযায়ী ১০০ থেকে ২৫০ টাকা। লিচু (আঁটি প্রতিতে একশটি গননায় বিক্রি হয় ) ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। জাম কেজি প্রতি ১০০ থেকে ১৩০ টাকা। আম হালি প্রতি ৪০-৬০ টাকা। কলা প্রতি ছড়া মাঝারি ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা। নারিকেল জোড়াপ্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। লটকন কেজি প্রতি ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। গোলাপ জাম ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। শহরেরও বেশ ক্রেতা পাওয়া যায় বলে বিক্রিও মুটামুটি ভাল বলে উল্ল্যেখ করেন তিনি।

শহরের অনেক ক্রেতাদেরও এসব ভাসমান বাজারগুলোতে ছুটতে দেখা গেছে। সরেজমিনে এই প্রতিবেদককের কথা হয় মেহেদী হাসানের সাথে। তিনি জানান Ñফলে ফরমালিন মেশানে হয় জেনেও আমি কিংবা আমরা সারাবছর’ই শহরের সেই ভাসমান দোকানগুলো থেকে ক্রয় করি। বর্তমানে জ্যৈষ্টের প্রায় শেষের দিক চলছে। এখানে ¯’ানীয় ফলের বাজার বসে শুনে ক্রয়ের জন্য আসলাম। এখানের মৌসুমি ফল গুলো ভাল পাশাপাশি সবচেয়ে বড় কথা হল ফরমালিন মুক্ত আবার বেশ সস্তা তাই এক সাথে অনেক গুলো ক্রয় করেছি যাতে আত্নীয়-স্বজন সহ সবাইকে নিয়ে খেতে পারি।

প্রায় একই রকম জানালেন নাফিজা আজিজ। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান -শহরের দোকানগুলো থেকে ফল ক্রয় করে খেতে খেতে আমি বেশ বিরক্ত। ওরা এখান থেকে কম দামে ক্রয় করে নিয়ে শহরে আমাদের কাছে সেটা দ্বিগুনের উপর দামে সেটা বিক্রি করে। পাশাপাশি অনেকদিন ধরে রেখে বিক্রির আসায় ফরমালিনও মেশায়। তাই এখন যেহেতু জ্যৈষ্টের প্রায় শেষের দিক সুতরাং আমি আমার বন্ধু-বান্ধব সহ বেশ কয়েকজন একসাথে ফল ক্রয়ের জন্য আসলাম। এখানের ফলগুলো একেবারেই টাটকা পাশাপাশি ফরমালিনেরও ভয় নেই। একেবারে নি-সন্ধেহে খাওয়া যাবে বলেও যুক্ত করেন তিনি।

যেহেতু সবাই জ্যৈষ্ঠের মৌসুমি ফলে ক্রয়ের জন্য গ্রামের দিকে ঝুঁকছেন সেহেতু শহরের দোকান গুলোতে ফল বিক্রি কমেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে শহরের ফল বিক্রেতা আব্দাল মিয়া এই প্রতিবেদককে জানান -হ্যাঁ, কিছুটা প্রভাবত পড়বেই তবে আমরা বিভিন্ন জায়গার পাইকারদের কাছ থেকে ফল ক্রয় করে শহরের নিয়ে আসতে আসতে বিভিন্ন জায়গায় টাকা দিতে হয় তাই অনেকটা বাধ্য হয়ে লাভ সহ হিসেবে রাখতে গিয়ে দাম কিছুটা বেশী পড়ে যায়। তবে ফরমালিন মেশানোর বিষয়টা তিনি অনেকটা স্বীকার করেই জানান -আমরা কেউই স্পটে গিয়ে ফল ক্রয় করে আনিনা। ফোন করে অর্ডার করলেই মাল আসে। তবে সেখানে যদি কেউ এসব ক্ষতিকর দ্রব্য মিশিয়ে থাকেন তাহলে সেটা আমরা কীভাবে জানব বা বুঝব -আপনীই বলেন? তাছাড়া অনেক সময় একদিনের মাল আসে দু-দিন পর বলেও যুক্ত করেন এই বিক্রেতা।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন