- এত ঘাটতি কীভাবে সামাল দেবে জনগণ: ড. জাহিদ হোসেন
- গরীব ও ব্যবসাবান্ধব বাজেট: ওবায়দুল কাদের
- বাজেটে কৃষিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে: ড. হাছান মাহমুদ
- আমাদের কাছে বাজেটের কোনো গুরুত্ব নেই: মির্জা ফখরুল ইসলাম
- গরীবের আবার বাজেট কি: রিকশাচালক
জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাবিত বাজেটের আকার চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় ৭৪ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা বেশি। আর সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৮৪ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা বেশি। চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ছিল ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এবারের প্রস্তাবিত বাজেট দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ঘাটতির দিক থেকেও নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. জাহিদ হোসেন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, এটি কখনও কাম্য ছিল না। আমাদের কৃচ্ছ্বুসাধনের অনেক জায়গা ছিল। আপনি অর্থমন্ত্রী হলে কেমন বাজেট দিতেন? এমন প্রশ্নের জবাবে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, নিঃসন্দেহে ঘাটতি কমিয়ে আনতাম। কেননা করোনা পরবর্তী ও বর্তমানে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ একটি বড় প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে ফেলেছে। তাই বলে এতো ঘাটতি কী করে সামাল দেবে জনগণ?
সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমির খসরু মাহমুদ বলেন, দুর্নীতির মাধ্যমে যেভাবে টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে এই বাজেটে তার প্রতিফলন হয়েছে। এটি কোনোক্রমেই ২-৩ লাখ কোটি টাকার বেশি না। আর পৌনে ৭ লাখ কোটি টাকার যে বাজেট ঘোষণা করা হলো তা নতুন বোঝা। এই ঘাটতি বাজেট মূল্যস্ফীতি অনেক বাড়িয়ে দেবে বলে মন্তব্য করেন সাবেক এই বাণিজ্যমন্ত্রী।
তবে বাজেট পেশার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাজেটে কৃষি উৎপাদনকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কৃষিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যাতে আমদানি কমিয়ে উৎপাদনে যাওয়া যায়। নিজেদের চাহিদা নিজেরাই পূরণ করতে পারি।
প্রস্তাবিত বাজেট করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর বাজেট বলে দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, এটা গরিববান্ধব, ব্যবসাবান্ধব বাজেট। তবে তার দাবির বিপরীতে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমাদের কাছে বাজেটের কোনো গুরুত্ব নেই। ৬ লাখ কোটি টাকার মতো নাকি বাজেট দিয়েছে। তাদের (আওয়ামী লীগের) লক্ষ্য সেখান থেকে কত কোটি টাকা লুট করবে তার একটা হিসাব বের করে। সুতরাং এ বিষয়টা (বাজেট) আমার কাছে এতটুকু গুরুত্ব নেই।
প্রগতির জন্য জ্ঞান-প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে তামাকবিরোধীদের কোনো দাবি আমলে নেয়া হয়নি। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের সাথে সাংঘর্ষিক। বাজেটে নিম্নস্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরামূল্য মাত্র ১ টাকা বাড়িয়ে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজেট কার্যকর হলে এই স্তরে সিগারেটের দাম বাড়বে মাত্র ২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। যা ১০ শতাংশ মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির তুলনায় খুবই সামান্য। ফলে এই স্তরের সিগারেটের প্রকৃত মূল্য ব্যাপকভাবে হ্রাস পাবে এবং তরুণ ও নিম্নআয়ের জনগণের মধ্যে কমদামি সিগারেটের ব্যবহার আশঙ্কাজনকহারে বাড়বে।
সিলেটের সিএনজি অটোরিকশার চালক সুমন ইসলাম বলেন, গরীবের আবার বাজেট কী? যা পাই তাই খাই। তাই বাজেট নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নাই। অর্থাৎ সাধারণ মানুষের বাজেটের প্রত্যাশা খুব কম। এ বিষয়ে শাকিরুল হক নামের এক তরুণের কথা, কোনো সরকারই জনবান্ধব বাজেট দিতে পারেনি। জনগণের কথা চিন্তা করেনি। করোনার মধ্যে এমনিতেই মানুষ আর্থিক টানাপোড়নে আছে। সেখানে ঘাটতি বাজেট জনগণের ওপর বোঝা চাপানো ছাড়া আর কিছুই না।
বাজেটপূর্ব এক আলোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান বলেছিলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্বেই মুদ্রস্ফীতি বাড়ছে। আমাদের দেশেও সেটি আছে। তবে এটি কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় সেটি নিয়ে ভাবতে হবে। তিনি বলেন, প্রত্যেক্ষ কর বাড়াতে হবে। কেননা আমরা যারা কর দেই তাদের সংখ্যা বেশি না। অনেকেই টিন নিচ্ছেন কিন্তু কর দিচ্ছেন না। বিষয়টি এমন হতে হবে যে, তিনি যতটুকুই দেন রিটার্ন দিতে হবে এমন কার্যক্রমে আনতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর বলেন, রিটার্ন না দিলে বিদ্যুৎসেবা বা অন্যান্য সেবা সরকার নেবে না। রিটার্ন সহজ করতে হবে। প্রয়োজনে মোবাইলে রিটার্ন দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তা ছাড়া ব্যবসায়ীরা অনেক সময় মামলা করে রিটার্ন দেয়া বন্ধ করে দেয়। এসব মামলা-মোকাদ্দমা ফয়সালা করে ফেলতে হবে। ড. আতিউর বলেন, তরুণরাই পারবে এনবিআরের চেহেরা পাল্টে ফেলবে। তাদের নিয়োগ দিয়ে প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হলে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে বাজেটটি অনুমোদন দেয়া হয়।
দেশের ৫২তম বাজেটে ৩৬ দশমিক ১৯ শতাংশ ঘাটতি নিয়ে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী। বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। ঘাটতি বাদ দিলে পরিমাণ দাঁড়ায় ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কৃষিখাত, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ, কর্মসংস্থান ও শিক্ষাখাতসহ বেশ কিছু খাতকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদে অর্থমন্ত্রীর চতুর্থ, আওয়ামী লীগের ২৪ ও দেশের ৫২তম বাজেট।
আনন্দবাজার/শহক