ঢাকা | শনিবার
২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুহুরীর মাছে অর্থনীতির বদল

মুহুরীর মাছে অর্থনীতির বদল

মিরসরাইয়ের মুহুরীর চর এলাকায় গড়ে উঠেছে দেশের বৃহত্তম মৎস্য প্রকল্প। মূল প্রকল্পের নাম মুহুরী সেচ প্রকল্প হলেও এটি মুহুরী প্রজেক্ট নামে সর্বাধিক পরিচিত। বছরে প্রায় ৪৯ হাজার টন মাছ উৎপাদিত হয় ৭ হাজার একরের এ মৎস্য প্রকল্প থেকে। প্রতিদিন ৭০-৮০ টনেরও বেশি মাছ দেশের বিভিন্ন বাজারে আমিষের যোগান দিচ্ছে। দেশের বৃহত্তম এ মৎস প্রকল্প অসামান্য অবদান রাখছে দেশীয় অর্থনীতিতে। পাশাপাশি বদলে দিয়েছে হাজারও বেকার যুবকের ভাগ্য। শতাধিক ব্যক্তি হয়েছেন শুন্য থেকে কোটিপতি।

মিরসরাই জনপদে বাৎসরিক মাছের চাহিদা মিটিয়ে সমগ্র চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৭০ ভাগ মাছের চাহিদা পূরণ হয় এসব মৎস প্রকল্প থেকে। মৌসুম ভেদে এখানকার মৎস চাষীরা এক হাজার ১২৭ কোটি টাকার মাছ বিক্রি করেন। বর্তমানে মুহুরী প্রকল্পে মাছ চাষের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িয়ে পড়েছেন সহস্রাধিক মানুষ। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত মানুষের সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। মিরসরাইয়ের ২৯টি জেলে পাড়ার অসংখ্য জেলে এসব প্রকল্পে জাল দিয়ে মাছ ধরে জীবন ধারণ করে থাকেন।

ফেনী নদীর মিরসরাই-সোনাগাজী অংশের উপকূলীয় অঞ্চলকে বন্যাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে ১৯৮৪ সালে ৫০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করে সরকার। বাঁধ নির্মাণের ফলে বাঁধের দুই পাশে কয়েক হাজার একর চর জেগে ওঠে। জেগে ওঠা এ চর আশীর্বাদ হয়ে দেখা দেয় স্থানীয় মৎস্যচাষীদের কাছে। ধীরে ধীরে মুহুরী প্রজেক্ট হিসেবে পরিচিত এ এলাকায় গড়ে ওঠে পরিকল্পিত মৎস্য প্রকল্প। কেবল স্থানীয়রাই নয়, সেখানে বিনিয়োগ করে দেশের নামিদামি শিল্প গ্রুপগুলো।

১৯৯৬ সালের শুরুর দিকে সাবেক চেয়ারম্যান মাঈনুল ইসলাম, আবুল খায়ের কোম্পানী, বাবুল চৌধুরী, এমএইচ লাভলু চৌধুরী আধুনিক পদ্ধতিতে মৎস্য চাষ শুরু করেন। তাদের সফলতার পথ ধরে ধীরে ধীরে এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবকরা চাকরির পিছে না ছুটে গড়ে তোলেন শতশত মৎস্য প্রকল্প। বর্তমানে মৎস্য চাষে বিপ্লব ঘটিয়ে দেশের সবচে বড় মৎস্য জোন হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে মুহুরী চরের মৎস্য প্রকল্প এলাকা। এখানে বাণিজ্যিকভাবে আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় মৎস্য প্রকল্প গড়ে তুলেছে বসুন্ধরা গ্রুপ, মেরিডিয়ান গ্রুপ, ক্লিফটন গ্রুপ, আবুল খায়ের কোম্পানী, মামুন গ্রুপ, সততা ফিস প্রজেক্ট, রিংকু ফিস প্রজেক্টসহ ৫ শতাধিক মৎস্য প্রকল্প।

আনোয়ার এগ্রো লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন জানান, মুহুরী প্রজেক্ট এলাকায় তার ১৩০ একরের মৎস্য প্রকল্প আছে। এ প্রকল্পে মৎস চাষ করে সফলতা পেয়েছেন তিনি। তবে সাম্প্রতিক খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচের তুলনায় লাভ হচ্ছে কম।

মৎস্য চাষী মো. কামাল উদ্দিন জানান, বিভিন্ন সময় মাছের নতুন নতুন রোগ দেখা দেয়। তখন চাষিদের লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ মারা যায়। তারা তখন উপজেলার মৎস্য অফিস থেকে কোন সঠিক পরামর্শ পায় না। চাষিদের এজন্য মহুরী প্রজেক্ট এলাকায় একটি মৎস্য ও হ্যাচারি ল্যাব স্থাপন করা প্রয়োজন।

রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান কিছমত ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী কমরুদ্দীন চৌধুরী বলেন, তিনি মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে মাছসহ বিভিন্ন কাঁচামাল রপ্তারি করে থাকেন। মুহুরী প্রজেক্ট এলাকায় শুধুমাত্র বরফকল না থাকার কারণে বছরে কোটি কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে স্থানীয় মৎস্য চাষীদের। এখানকার মাছ বাজারজাত করার সময় বরফকল না থাকায় অনেক সময় মাছ পচে যায়। ফলে ব্যবসায়ীদের অনেক টাকা লোকসান গুনতে হয়। বরফকল স্থাপন করা হলে এখানকার মাছ দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তারি করা যাবে।

মিরসরাই উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নাসিম আল মাহমুদ বলেন, মিরসরাইয়ের মৎস্য চাষীরা তাদের নিজেদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তিতে মাছ চাষ করে থাকেন। যেখানে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুন বেশি মাছ উৎপাদন হয়। আধুনিক প্রযুক্তিতে মাছ চাষ করার জন্য সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। চট্টগ্রামের ৭০ ভাগ মাছের চাহিদা পূরণ করে মুহুরী প্রজেক্ট মৎস্য প্রকল্প। এখানে যারা মাছ চাষ করেন, সরকারের পক্ষ থেকে তাদের যেকোনো প্রয়োজনে যথাযথ সহায়তা ও পরামর্শ দেয়া হয়।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন