দেশের পুরনো কিছু সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি বাংলাদেশ রেলওয়ে। কিন্তু রেলওয়ের কিছু অসৎ কর্মকর্তার কারণে বাংলাদেশ রেলওয়ের অবস্থা নাকাল। এ অবস্থাতে রাজবাড়ীতে বেদখল হয়ে গেছে রেলওয়ের ৫৫৫ একর জমি ও ৩৪৬ টি স্টাফ কোয়ার্টার। এদিকে নতুন চাকরিতে যোগ দেয়া ২৮ জন কর্মকর্তা কাগজে-কলমে বরাদ্দ পেলেও কোয়ার্টার বুঝে পাচ্ছেন না।
অভিযোগ আছে, রেলওয়েরই কিছু অসাধু ও ভূমিদস্যু কর্মকর্তার যোগসাজশে হাজার কোটি টাকা মূল্যমানের এসব সরকারি ভূসম্পত্তি স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে। দখলীকৃত জমিতে গড়ে উঠেছে বসতবাড়ি, মার্কেট ও মাছের খামার।
রাজবাড়ীর রেলওয়ে বিভাগের তথ্যানুযায়ী, জেলায় রেলওয়ের জমি আছে মোট ১ হাজার ৭০৩ একর। এর মধ্যে রেলওয়ের দখলে আছে ১ হাজার ৪০ একর। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে ৯১ একর জমি। জেলা প্রশাসন ব্যবহার করছে ১৫ একর। ইজারা দেয়া আছে দুই একর। বাকি ৫৫৫ একর জমি বেদখল হয়ে গেছে। এছাড়া ৪৬৫টি স্টাফ কোয়ার্টারের মধ্যে নানা জনের দখলে চলে গেছে ৩৪৬টি।
সম্প্রতি শহরের ফুলতলা এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একসময় রেলের শহর হিসেবে খ্যাত ছিল রাজবাড়ী। এখন অবস্থা খুবই নাজুক। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় বেদখল হয়ে গেছে রেলওয়ের স্টাফ কোয়ার্টার। এসব কোয়ার্টার দখল করে কেউ কেউ আশপাশে টিনশেড ঘর তুলে ভাড়া দিয়েছে। অনেকে কোয়ার্টার দখল করে মাদকের আখড়া গড়ে তুলেছে। সংস্কার না হওয়ায় কিছু কোয়ার্টার বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
রেলওয়ে শ্রমিক লীগ রাজবাড়ী শাখার সভাপতি মো. মোসলেম উদ্দিন জানান, নতুন যোগ দেয়া ২৮ জন কর্মকর্তার জন্য কাগজে-কলমে ২৮টি বাসা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ছয় মাস আগে এ বরাদ্দ দেয়া হলেও এখনো তাদের বাসা বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। নতুন এলাকায় সরকারি কোয়ার্টার না পেয়ে তারা খুব বিপদে আছেন।
তিনি বলেন, অথচ অবৈধভাবে কোয়ার্টার দখলের পাশাপাশি প্রভাবশালীরা ঘর তুলে ভাড়াও দিয়েছে। বিষয়টি পুলিশ প্রশাসন ও রেলওয়ে কর্মকর্তাদের বারবার বলেও লাভ হচ্ছে না। এ পর্যন্ত কোনো কর্মকর্তাই এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ের ভূসম্পত্তির দায়িত্বে থাকা ১৫ নং কাচারির ফিল্ড কানুনগো মো. সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, অচিরেই রাজবাড়ীতে রেলওয়ের ডিভিশন করা হবে। ডিভিশনের কার্যক্রম শুরু হলে এসব বেদখল হওয়া সম্পত্তি দখলে আনবে রেলওয়ে বিভাগ। এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে কিছুদিন আগে রেলপথমন্ত্রী এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
এদিকে প্রতিদিন রাজবাড়ী থেকে এখন একটি আন্তঃনগরসহ নিয়মিত ছয়টি ট্রেন চলাচল করে। পুরো কার্যক্রম পরিচালনা ও তদারকির জন্য রয়েছেন অর্ধশতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। কিন্তু তাদের কেউই রেলের কোয়ার্টার ব্যবহার করতে পারছেন না। সেবার মান নিয়েও যাত্রীদের অভিযোগের অন্ত নেই।
স্থানীয় সংস্কৃতিকর্মী আজিজুল হাসান খোকা জানান, একটা সময় ছিল রাজবাড়ী থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত ট্রেন চলত এবং রাজবাড়ী থেকে খুব সহজেই ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা এ তিন বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা যেত। কিন্তু এখন সে অবস্থা আর নেই। যাত্রী থাকলেও সেবার মান খুবই খারাপ। এমনকি অনেক সময় টিকিট চেক করার মতো লোকও খুঁজে পাওয়া যায় না।
আনন্দবাজার/ইউএসএস