বোরোর ভরা মৌসুমে গাইবান্ধায় অস্থির হয়ে উঠেছে চালের বাজার। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দাম। কয়েকদিনের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ৮-১০ টাকা। চরম বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের দিনে এনে দিনে খাওয়া মানুষ। সেই সঙ্গে বাজারে দাম বাড়ার সুফল পাচ্ছেন না চাল উৎপাদনকারী চাষিরা। তারা কাটাই মাড়াই করার সময় কম দামে ধান বিক্রি করে এখন দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন। অন্যদিকে ব্যবসায়িদের দাবি অটোমিল মালিকরা চাল মজুত করে রাখার ফলে বাড়ছে চালের দাম।
গাইবান্ধার বাজারগুলোতে চালের দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা স্থানীয় চালকলগুলো বন্ধ থাকার কথা বলছেন। তাদের কথা, ভরা মৌসুমেই দাম বাড়ে তাহলে সামনে দিন তো পড়েই আছে। সেজন্য সরকারিভাবে পদক্ষেণ নেওয়া দরকার। বাজারে অবশ্য মোটা চালের চেয়ে চিকন চালের দাম বেশি বেড়েছে। যে মিনিকেট চাল আগে ৫০ থেকে ৫৩ টাকা কেজিতে বিক্রি হতো, এখন তা বেড়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকা হয়েছে। এছাড়া কাটালি চিকন জাতের চাল ৫০-৫৫ টাকা থেকে বেড়ে গিয়ে ৬০-৬৩ টাকায়, ইরি-২৮ চাল ৪৫-৪৮ টাকা থেকে বেড়ে গিয়ে ৫২-৫৮ টাকায়, স্বর্ণা ৩৮-৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৫০-৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গাইবান্ধার পুরাতন বাজারে চাল কিনতে আসা কাশেম মিয়া বলেন, হামরা দিন আনি দিন খাই। দিনমজুর করে যা আয় হয় তা দিয়ে কোনোরকম করে সংসার চালাই। সারাদিন অন্যের জমিতে কাজ করে তিনশ টাকা মজুরি পাই। কিন্তু যে হারে চালের দাম বাড়ছে তাতে চাল কিনতেই সব টাকা শেষ। বাকি খরচ করবো কীভাবে? যার কারণে হামার সংসার চালানো আর যাচ্ছে না।
কাশেম মিয়া বলেন, যে চালের কেজি ৪০ টাক থেকে ৫০ টাকা ছিলো সেটি এখন বেড়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকা হয়ে গেছে। কী করে চাল কিনবো বুঝতে পারছি না। আমাদের মতো মানুষদের করুণ পরিস্থিতি হয়ে গেছে। চালের দামটা একটু কমলে অন্তত হামার মতো মানুষের ডাল ভাত খেয়ে বাঁচতে পারবো।
অন্যদিকে গাইবান্ধা সদর উপজেলার দারিয়াপুর বাজারের আসাদ মিয়া বলেন, চালের দামটা কমলে কিনে খাওয়া যেতো। আমাদের জন্য কেনা ভালো হতো। যে হারে চালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে করে যে টাকা পাই তা দিয়ে তো বেশি চাল কেনা যায় না। এখন না হয় ধান কাটা মাড়াইয়ের কাজ হলো দুটা টাকা পেয়েছি চাল কিনতে পারি। কিন্তু কয়েটা দিন পরে তো ধান কাটা শেষ হলে আমাকে তো কেউ কাজে নিবে না। তখন কি করে চলবো। আমার সংসারে প্রায় আট জন সদস্য। নিয়মিত তিন বেলায় চাল লাগে প্রায় ২ কেজি মতো। আর তখন টাকা কোথায় পারো আর কিভাবে এতদামে চাল কিনবো।
গাইবান্ধার সদর উপজেলার চাল ব্যবসায়ী তারা মিয়া বলেন, প্রতিবছর এমন সময় চালের দাম কমে কিন্তু এবারই ব্যতিক্রম চালের দাম বাড়ছে। এর কারণ হলো ধানের দাম বৃদ্ধি। যে ধান হাজার টাকার নিচে ছিল সেই ধান বর্তমানে নয়শত থেকে এগারোশ টাকা। সেই সাথে আবহাওয়া খারাপ। এর ওপর শ্রমিক সংকটের কারণে স্থানীয় মিলগুলো চাল উৎপাদন করতে পারছেনা। এই সুযোগে অটো চাল মিল মালিকরা পর্যাপ্ত পরিমাণে ধান ক্রয় করে চাল বিক্রি বন্ধ করে রেখেছেন।
তারা মিয়া আরও বলেন, এখন নতুন ধান উঠেছে। এই সময়টাতেই তো চালের দাম কমা দরকার। কিন্তু উল্টো চালের দাম বাড়ছে। এতে সাধারণ মানুষের জীবন চালানো খুব কষ্টকর হয়ে গেছে। বাড়তি দামের কারণে মানুষ যে চাল কিনে খাবে সেটিও পারছেনা। সংসার চালাতে নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে অনেক পরিবারে। বাধ্য হয়ে আগে যেখানে ৫ কেজি চাল কিনতো এখন সেখানে ৩ কেজি চাল কিনে আধপটে খেয়ে পার করেছে জীবন।
গাইবান্ধার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শরিফুর আলম বলেন, বাজারে অহেতুক কেউ যেন কোনো পণ্যের দাম বৃদ্ধি করতে না পারে সেজন্য নিয়মিতভাবে বাজার মনিটরিং অব্যাহত আছে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হচ্ছে। দাম বৃদ্ধির কোনো অভিযোগ পেলে তার রিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আনন্দবাজার/শহক