ঢাকা | বুধবার
১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে রোডম্যাপ

পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে রোডম্যাপ

পেঁয়াজ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়। একইসঙ্গে আমদানিতেও শীর্ষে বাংলাদেশ। কৃষক যাতে দাম ভালো পান, সেজন্য উৎপাদন মৌসুমে আমদানি বন্ধ রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতিবাদরা। ভালো দাম পেয়ে চাষিরা পেঁয়াজ চাষে আগ্রহী হওয়ায় গেল অর্থবছরে এক লাফে উৎপাদন বেড়ে যায় ৮ লাখ টনে। এমন পরিস্থিতিতে কৃষিবিদরা বলছেন, উৎপাদন-পরবর্তী লোকসান কমাতে চাষিদের বেশি সচেতন হতে হবে। অনাবাদি ও চরের জমি পেঁয়াজ চাষে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ভালো বীজ সহজলভ্য করতে হবে এবং উচ্চফলনশীল জাতগুলোর চাষ বাড়াতে হবে।

সূত্রমতে, দেশে পেঁয়াজ আমদানির পরিমাণ আগের চেয়ে কম শুরু করেছে। এরপরও কিন্তু বিশ্বে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি করছে বাংলাদেশ। কৃষি বিপণন ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০১৮ সাল পর্যন্ত দেশে আট থেকে ১০ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি হতো। অথচ গত অর্থবছরে আমদানি হয়েছে মাত্র ৫ দশমিক ৫২ লাখ টন। তার আগের অর্থবছরে আমদানি করা হয় ৫ দশমিক ৭১ টন। অথচ যুক্তরাষ্ট্র বছরে পেঁয়াজ আমদানি করে মাত্র পাঁচ লাখ ৪৩ হাজার টন। যুক্তরাজ্য করে ৩ দশমিক ৫৯ লাখ টন। এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়া করে ৫ দশমিক শূন্য ৫ লাখ টন। তুলনামূলক বিচারে বাংলাদেশ পেঁয়াজ আমদানিতে এখন শীর্ষ দেশ।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে পেঁয়াজের চাহিদা ছিল ৩৫ লাখ টন। চলতি অর্থবছরে চাহিদা নিরূপণ করা হয়েছে ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টন। আর আগামী বছর এই চাহিদা বেড়ে দাঁড়াতে পারে ৩৬ লাখ টনে। অবশ্য এই চাহিদার মধ্যে শুধু রমজান মাসেই বাড়তি চাহিদা থাকে তিন লাখ টনের ওপরে।

সূত্রমতে, ২০২০ সালে কৃষি মন্ত্রণালয় পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে রোডম্যাপ তৈরি করেছে। ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিন বছরব্যাপী এই রোডম্যাপে পেঁয়াজের ঘাটতি ১১ লাখ টন ধরে উৎপাদন বৃদ্ধির কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে দেখা গেছে, দেশে পেঁয়াজের ঘাটতির প্রধান কারণ মানসম্মত বীজের অভাব। দেশে যেখানে মোট এক হাজার ১০০ টন বীজের প্রয়োজন সেখানে সরকারিভাবে মাত্র পাঁচ থেকে ছয় টন আর বেসরকারিভাবে উৎপাদন করা হয় ৫০ থেকে ৬০ টন পেঁয়াজের বীজ। বাকি ৩০ থেকে ৪০ টন বীজ ‍উৎপাদন করে চাষিরা। যা পুরোপুরি মানসম্মত নয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছরে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৩ দশমিক ৬২ লাখ টন। সংগ্রহোত্তর ক্ষতি হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। সে হিসাবে দেশে পেঁয়াজের নিট উৎপাদন প্রায় ২৩ দশমিক ৫৩ লাখ টন। রান্নার সময় ফেলে দেয়া অংশ ও নানাভাবে হওয়া অপচয় বাদ দিলে দেশে পেঁয়াজের নিট চাহিদা ২৬ লাখ ৬১ হাজার টন। অর্থাৎ দেশে পেঁয়াজের ঘাটতি আড়াই থেকে তিন লাখ টন। গত এক দশকে (২০১১-২০২১) পেঁয়াজ চাষের জমির পরিমাণ বেড়েছে ৪১ শতাংশ। ২০১১-১২ অর্থবছরে যেখানে দেশে ১ দশমিক ৮০ লাখ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়, সেখানে সর্বশেষ গত অর্থবছরে আবাদের জমি বেড়ে হয়েছে ২ দশমিক ৫৩ লাখ হেক্টরের বেশি জমিতে।

দেশে পেঁয়াজ চাষ যে হারে বেড়েছে সে হারে ঘাটতি মেটানো সম্ভব হয়নি। ফলে আমদানিনির্ভরতা বেড়ে গেছে। বাজার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৯ সালের আগ পর্যন্ত দেশের চাহিদা মেটাতে গড়ে ১০ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হতো। যার ৯০ শতাংশই আসতো ভারত থেকে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে হঠাৎ ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিলে দেশের বাজারে দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। ওই বছরের নভেম্বর নাগাদ পেঁয়াজের দাম ২৮০ টাকায় উঠে যায়। বাজার সামাল দিতে তাৎক্ষণিকভাবে আকাশপথে বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আনতে হয় সরকারকে।

পরের বছর ২০২০ সালে পেঁয়াজের দাম কমলেও ৭০ টাকার নিচে নামেনি খুচরা বাজারে। এই বাড়তি দামের কিছুটা দেশের কৃষকরাও পান। গত দুই বছর কৃষক কেজিতে ৫০ টাকা দাম পেয়েছেন বলে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর জানিয়েছে। তাদের হিসাবে পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ প্রায় ২০ টাকা। তাই ২৫ টাকায় বিক্রি করতে পারলে কৃষকের লাভ থাকে।

এদিকে, আমদানির অনুমতি (আইপি) বন্ধ থাকার খবরে ভারত থেকে পেঁয়াজ না এলেও এতদিন আমদানি করা পেঁয়াজ গুদাম থেকে আসছে পাইকারি ও খুচরা বাজারে। খাতুনগঞ্জের পেঁয়াজ আমদানিকারক জারিফ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মালিক মনজুর মোরশেদ বলেন, ভোজ্যতেলের তিক্ত অভিজ্ঞতায় মনে হয় না পেঁয়াজের ক্ষেত্রেও সরকার এমন কিছু করবে। সরকারের অগ্রাধিকার থাকা উচিত বাজারে যাতে অস্থিরতা না হয়, ভোক্তারা যাতে কষ্ট না পায়।

চাক্তাই খাতুনগঞ্জ সাধারণ আড়তদার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি সোলায়মান বাদশা বলেন, সরকার যদি জোরালো কোনও পদক্ষেপ না নেয় তাহলে কোনও জিনিসের দাম ধরে রাখার মতো অবস্থা নেই। দামে এমন অস্থিরতা থাকলেও বেশিরভাগ পণ্যের সরবরাহই স্বাভাবিক খাতুনগঞ্জে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন