ঢাকা | বুধবার
১২ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
২৯শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বৈশ্বিক সংকটে ভোজ্যতেলে অনিশ্চয়তা

বৈশ্বিক সংকটে ভোজ্যতেলে অনিশ্চয়তা

ভ্যাট প্রত্যাহার করেছে সরকার

ভোজ্যতেলের বাজার

  • চাহিদা বছরে ২০ লাখ টন
  • উৎপাদন ২ লাখ টন
  • আমদানি ১৮ লাখ টন

বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ পাম তেল আমদানি হয় ইন্দোনেশিয়া থেকে এবং ২০ শতাংশ মালয়েশিয়া থেকে। আমদানির ৪৬ ভাগ সয়াবিন, পাম তেল ৫৩ শতাংশ

করোনা মহামারির কারণে পণ্য পরিবহনে বিচ্ছিন্নতার সঙ্গে কর্মী সংকট ছাড়াও বিরূপ আবহাওয়ার মতো প্রাকৃতিক কারণেও গেল বছর থেকে ভোজ্যতেলের বাজারে সংকট দেখা দিয়েছে। এর ওপর আবার আন্তর্জাতিক বাজারে সরবরাহ সীমিত থাকার সময়েই নিজেদের বিশাল জনসংখ্যার জন্য খাদ্যনিরাপত্তায় ভোজ্যতেল মজুদ বাড়িয়ে চলেছে চীন।

উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে পাওয়া পাম, সয়াবিন, সূর্যমুখী তেলের মজুদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে চীনের আগ্রাসী ভূমিকার সঙ্গে যোগ হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি। এতে খাদ্যপণ্যে আরও চড়া মূল্যস্ফীতির আরেক উৎস হয়ে উঠেছে ভোজ্যতেল। প্রক্রিয়াজাত খাদ্যশিল্প থেকে শুরু করে বাসাবাড়ির হাজারো ধরনের খাবার প্রস্তুতে ভোজ্যতেল অপরিহার্য উপকরণ।

মূলত পাম তেল, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি খাওয়া উদ্ভিজ্জ তেল। মহামারির কারণে এ শিল্পটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। করোনা সংক্রমণ রোধে পাম বাগানে অভিবাসী শ্রমিকদের কাজের সুযোগ বন্ধ করে মালয়েশিয়া। এতে গত বছর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ পাম তেল উৎপাদক দেশটিতে উৎপাদন ৪০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন হয়।

গত মার্চে আর্জেন্টিনা সয়াবিন তেলের রপ্তানি নিবন্ধন বন্ধ করে দেয় কারণ তখন খরা দেশটির সয়াবিন ফলনকে প্রভাবিত করেছিল। দেশটি গত বছর বিশ্বব্যাপী সয়া তেল সরবরাহের ৪৮ শতাংশ করেছিল। ইন্দোনেশিয়াও মার্চে একটি রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা দেয়, যা সম্প্রতি তুলে নেওয়া হয়েছিল। ইতোমধ্যে, ভোগকারী (আমদানি-নির্ভর) দেশগুলি কর কমিয়ে এবং ভর্তুকিযুক্ত বিক্রয় বাড়িয়ে জনগণের ওপর মূল্যের বোঝা কমাতে লড়াই করছে।

এদিকে, গত মার্চে ভোজ্যতেল পরিশোধনের ওপর ১৫ শতাংশ, খুচরা বিক্রিতে ৫ শতাংশ এবং আমদানির ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রত্যাহার করে বাংলাদেশ। সরকার ভর্তুকি মূল্যে খোলাবাজারে বিক্রির মাধ্যমে (ওএমএস) নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে পণ্যটি বিক্রি করছে।

তবে পাম তেলের সবচেয়ে বড় সরবরাহকারী ইন্দোনেশিয়ার রপ্তানি বন্ধের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্ববাজারে ভোজ্যতেলের বড় ধরনের সরবরাহ সংকট তৈরির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায় ভারত ভিত্তিক একটি বৈশ্বিক নিত্যপণ্য কারবারি সংস্থা তাদের একটি নোটে জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ভোজ্যতেলের দাম আকাশ ছুঁতে পারে।

বাংলাদেশিরা বছরে ২০ লাখ টন ভোজ্যতেল ব্যবহার করে, সে তুলনায় স্থানীয় উৎপাদন প্রায় ২ লাখ টন। আমদানিকৃত ১৮ লাখ টন ভোজ্যতেলের মধ্যে সয়াবিন ৪৬ ও পাম তেল ৫৩ শতাংশ। বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ পাম তেল আমদানি হয় ইন্দোনেশিয়া থেকে এবং ২০ শতাংশ মালয়েশিয়া থেকে।

যুক্তরাজ্যে সুপারমার্কেটগুলো নিজেরা উদ্যোগী হয়ে ক্রেতাদের ভোজ্যতেল কেনা সীমিত করছে, যাতে সকলেই সমানভাবে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটি কিনতে পারে। এদিকে ইন্দোনেশিয়ার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার দেশের সবচেয়ে বড় নিত্যপণ্যের বাজার– চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে প্রতিমণ (৪০ দশমিক ৯০ লিটার) পাম তেলের বিক্রয়মূল্য অন্তত ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

পাম তেল রপ্তানি বন্ধের এই আচমকা সিদ্ধান্ত সয়াবিন তেলের মূল্যেও উত্তাপ ছড়াচ্ছে। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত দুই সপ্তাহে পাম ও সয়াবিন তেলের মূল্য মণপ্রতি ৭০০ থেকে ১১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন