ঢাকা | বুধবার
১২ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
২৯শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এশিয়ার অর্থনীতির ‘বাঘ’

এশিয়ার অর্থনীতির ‘বাঘ’

এশিয়ান অর্থনৈতিক ‘বাঘ’ হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। যখন বাংলাদেশের জন্ম হয়- তখন এটি একটি ভয়ানক অবস্থায় ছিল। দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল। প্রতিটি অর্থনৈতিক সূচকে ছিল দরিদ্রতম। যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক অবকাঠামো একেবারে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। দেশটির কোনো শিল্প ভিত্তি এবং কোনো উদ্যোক্তা শ্রেণিও ছিল না। বর্ষা মৌসুমে দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা নিয়মিতভাবে পানিতে তলিয়ে যেত।

বাংলাদেশ সম্পর্কে এমন মূল্যায়ন সেন্ট জেভিয়ার ইউনিভার্সিটির দ্য গ্রাহাম স্কুল অব ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক এবং প্রতিষ্ঠাতা ডিন ফয়সাল রহমানের। মার্কিন দৈনিক শিকাগো ট্রিবিউনে গত ১৮ এপ্রিল প্রকাশিত এক মতামত কলামে তিনি আরো বলেছেন, আজকের বাংলাদেশ পোশাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ। যে দেশটি তার জন্মের সময় একটিও পোশাক রপ্তানি করেনি এবং ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজের জন্য এটি ছোট কৃতিত্ব নয়। দেশটি এখন মার্কিন তুলার বৃহত্তম ক্রেতাদের মধ্যে একটি।

তার মতে, নতুন একটি তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা খাত ও ওষুধ শিল্পসহ বৈচিত্র্যময় অর্থনীতির জন্য চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো অর্থনৈতিক জায়ান্টদের বিনিয়োগের জন্য একটি পছন্দের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে দেশটি। বাংলাদেশ দেখিয়েছে যে, কীভাবে বেসরকারি সংস্থাগুলো উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে সরকারি প্রচেষ্টার পরিপূরক হতে পারে।

বাংলাদেশে ফজলে হাসান আবেদের প্রতিষ্ঠিত বৃহত্তম বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক এখন এশিয়া ও আফ্রিকায় তার শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, যুব ও নারীর ক্ষমতায়ন কর্মসূচির মাধ্যমে ১০০ মিলিয়নের বেশি মানুষকে সেবা দিচ্ছে। মাথাপিছু আয় এবং প্রবৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হলো- নারী শিক্ষায় বিনিয়োগ এবং শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের উচ্চ হার।

এছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রও রয়েছে যেখানে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে ভালো করছে। বর্তমানে বিশ্বের অশান্ত অঞ্চলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি অবদানকারী। মিয়ানমারের সামরিক সরকার কর্তৃক জোরপূর্বক বিতাড়িত হওয়া ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে। অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশ কোভিড-১৯ অত্যন্ত ভালোভাবে মোকাবিলা করেছে।

একসময় ‘এশিয়ান টাইগারস’ বা ‘এশিয়ার বাঘ’ বলতে সাধারণত মানুষ হংকং, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানকেই বুঝত বা বোঝাত। ‘বাংলাদেশ : দ্য নেক্সট এশিয়ান টাইগার?’ শিরোনামের প্রতিবেদনে যুক্তরাজ্যভিত্তিক খ্যাতনামা গবেষণা সংস্থা ‘ক্যাপিটাল ইকোনমিকস’ বলেছে, বাংলাদেশও হতে পারে এশিয়ার নতুন টাইগার। তবে এশিয়ার টাইগারখ্যাত চার দেশের কাতারে পৌঁছাতে হলে বাংলাদেশকে পাড়ি দিতে হবে আরো অনেক পথ।

তবে এখন এশিয়ার অর্থনীতিতে বাঘ মানে বাংলাদেশও মনে করা হয়। কারণ এক দশক ধরে এশিয়ায় যে কয়েকটি দেশের অর্থনীতি সবচেয়ে ভালো অবস্থায় রয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম একটি; যারা বছরে গড়ে ৬ শতাংশ হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে আসছে। এক্ষেত্রে ফয়সাল রহমানের মতে, বাংলাদেশের স্থিতিশীল গণতন্ত্র এবং শক্তিশালী নারী নেতৃত্ব দেশটিকে প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান থেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশিরা অর্থনৈতিকভাবে ইতিহাসে আগের চেয়ে অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে।

ফয়সাল রহমান বলেন, নারী শিক্ষায় বিনিয়োগ এবং শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের উচ্চ হার বাংলাদেশকে মাথাপিছু আয় ও প্রবৃদ্ধির হারে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদ এবং সিঙ্গাপুরের লি কুয়ান ইউয়ের ছাঁচে একজন শক্তিশালী প্রশাসনিক নেতা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছেন। বাংলাদেশ এখন একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পথে রয়েছে- যা প্রমাণ করে যে, কিসিঞ্জার বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা এবং স্থায়িত্ব সম্পর্কে যে ধারণা দিয়েছিলেন, তা ভুল ছিল।

গবেষণা সংস্থা ‘ক্যাপিটাল ইকোনমিকস’ বলেছে, গেল বছরগুলোতে বাংলাদেশ এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে অন্যতম সেরা পারফরমার। ২০১১ সাল থেকে চীন তার সস্তা পণ্যের যে পরিমাণ বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নে হারিয়েছে, তার দুই-তৃতীয়াংশই দখল করেছে বাংলাদেশ। ফলে সামনে বাংলাদেশ আরো এগিয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন