ঢাকা | বুধবার
১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আগামীর ভয়াবহতায় সতর্কতা

পানি ব্যবস্থাপনায় নিতে হবে মহাপরিকল্পনা
  • পানি ব্যবস্থাপনায় নিতে হবে মহাপরিকল্পনা

বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ৪ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ১৭ শতাংশ পর্যন্ত মানুষ পানি সমস্যার উচ্চঝুঁকিতে আছে। এই ৮৬ লাখ মানুষের মধ্যে ২২ লাখই দারিদ্রসীমার নিচে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বৈশ্বিক ভূগর্ভস্থ পানির সঞ্চয় উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসছে। বর্তমান শতকের শুরুতে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল, বছরে ১০০ থেকে ২০০ ঘন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে পানির সঞ্চয় কমতে থাকবে, যেটি সামগ্রিক উত্তোলনের ১৫ থেকে ২৫ শতাংশের সমতুল্য।

ভূপৃষ্ঠ থেকে ২০০ ফুট গভীর পর্যন্ত গভীরতায় পানি উত্তোলনের কারণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল, টঙ্গী, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের ভূগর্ভস্থ পানির সঞ্চয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। এক সময় পানির স্তর ২/৩ মিটার নিচে ছিল তবে ২০২২ সালে তা গড়ে ৭৬-৭৭ মিটার এসে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, এই বেসিনের ভূ-গর্ভস্থ পানির প্রায় অর্ধেক আবার ব্যবহারের অযোগ্য। কারণ, এতে লবণাক্ততা ও আর্সেনিকের মাত্রা অনেক বেশি। তাই এগুলো পান করা বা কৃষিকাজে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যাচ্ছে।

দেশে বহনযোগ্য পানির প্রধান উৎস ভূ-গর্ভস্থ পানি খাবার পানির ৯০ শতাংশ আসে টিউবওয়েলের মাধ্যমে। যেখানে ১০ লাখ সরকারি এবং ব্যাক্তিগত ১ কোটির বেশি টিউবওয়েলের রয়েছে। সুপেয় পানির প্রাপ্তির সুযোগ বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। জাতিসংঘ পানি অধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে ঘোষণা করেছে। এসডিজির ৫৩টি লক্ষ্যের সাথে ভূ-গর্ভস্থ পানি সম্পৃক্ত আছে।

ফলে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে এবং মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করতে সুপেয় পানি সরবরাহকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তা না হলে অর্থনীতির গতি ও সামাজিত স্থিতিশীলতা বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে আশংকা সংশ্লিষ্টদের।

পানির সুষ্ঠু ব্যবহার ও বণ্টনের জন্য প্রতিবছর পানি বাজেটের কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। এই পানি বাজেটের মাধ্যমে পানির বিভিন্ন ব্যবহারকারীদের মধ্যে চাহিদা নিরূপণ করে সেসব এলাকায় বিশুদ্ধ পানির যোগান খতিয়ে দেখা হয়। পরবর্তীতে পানি বিধির আলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পানি সরবরাহ করা হয়। এর ফলে পানির অপব্যবহার রোধ করে পানির সঠিক বণ্টনের মাধ্যমে সামাজিক অস্থিরতার সমাধা করা যাবে বলে মত তাদের।

অন্যদিকে দেশের কোন কোন এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ পানিই ব্যবহারের প্রধান উৎস তা নিয়মিত পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণের সময় এসেছে। পানি উত্তোলেন ও রিচার্জের ভারসাম্য রক্ষার মাধ্যমে পানি সম্পদ ও প্রকৃতির ওপর মানুষের নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে আনা যায়। যথাযথ পরীক্ষার মাধ্যমে ভূ-গর্ভের উপরিভাগ ও গভীর থেকে নিরাপদে পানি উত্তোলন করা যায়। চাহিদা বাড়তে থাকায় পানি বিধির বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রাপ্যতার আলোকে পানি বাজেট করা যায়।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) আশুগঞ্জে সারকারখানায় ব্যবহৃত পানি প্রক্রিয়াকরণ করে কৃষি সেচে পুনরায় ব্যবহার করছে। এটা অন্য ক্ষেত্রেও সম্প্রসারণ করা যায়। প্রয়োজনে যথাযথ প্রযুক্তির মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়া এলাকায় ভূ-গর্ভে কৃত্রিমভাবে পানি রিচার্জ করার কথাও ভাবছেন বিশেষজ্ঞরা।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন